পিওতর মান্তেইফেল
অপ্রত্যাশিত পার্টীগণিত
ভালুকের ছানারা যেখানে খেলছিল, সেখানে জুটল একদল দর্শক। ভল্লুক পরিবারের ইতিহাস বলতে গিয়ে গাইড হঠাৎ জিজ্ঞেস করল:
‘পাটীগণিত আপনারা নিশ্চয় জানেন? তাহলে কষুন তো: মানুষের বেলায় সদ্যোজাত শিশুর ওজন হয় তিন-চার কিলোগ্রাম, তাহলে ও মনী ওজনের ভালুক মায়ের বাচ্চার ওজন হবে কত?’
‘নিশ্চয় আট-নয় কিলো,’ বললে কে যেন।-
‘বলেন কী! অনেক বেশি!’ মন্তব্য করলে আরেকজন। ‘ভালুকের ওজন তো প্রায় গরুর সমান, অথচ সদ্যোজাত বাছুরের ওজন কমসে কম মনখানেক।’ নানানভাবে ‘অঙ্কটা’ কষতে লাগল সবাই, কিন্তু সঠিক উত্তর কেউ দিতে পারল না, কেননা পাঁচ-ছয় কিলোগ্রামের কম ওজন বলতে সাহস হচ্ছিল না কারো। সত্যিই, কল্পনা করা কঠিন যে অতিকায় ভল্লুকীর সদ্যোজাত শিশুর ওজন গড়ে মাত্র আধ-কিলোগ্রাম, একটা ধেড়ে ই’দুরের সমান।
অথচ গৃহপালিত ভেড়ার বাচ্চা হয় সাধারণত তার চেয়ে দশগুণ ভারি। সেবল নেউলের বাচ্চার ওজন প্রায় তিরিশ গ্রাম, অথচ মেঠো বেড়ালের বাচ্চা দশ গ্রাম।

নবজাতকের সঙ্গে তার মায়ের ওজন তুলনা করলে দেখা যাবে যে ভালুক-ছানা তার মায়ের ওজনের ০. ২৭ শতাংশ, সেবল-ছানা প্রায় ৩ শতাংশ আর ভেড়ার বাচ্চা প্রায় ১০ শতাংশ।
জীবনের প্রথম দশ দিনে মেঠো বেড়ালদের ওজন বাড়ে দৈনিক প্রায় ২৪ গ্রাম, সেবলদের প্রায় ১০ গ্রাম, ভেড়ার বাচ্চার প্রায় ১৮০ আর ভালুক-ছানার মাত্র ২-৫ গ্রাম করে।
ব্যাপারটা কী? প্রকৃতিতে এমন বিচিত্র অনুপাত কেন?
ভালুক বাচ্চা দেয় শীতে, জানুয়ারি মাসে। একেবারে বসন্ত না আসা পর্যন্ত সে গুহা থেকে বেরয় না, দেহের মধ্যে সেই শরতে সঞ্চিত চর্বি আর অন্যান্য
পুষ্টি খরচ করেই সে দুধ খাওয়ায় বাচ্চাদের। শীতে ভল্লুকীর দেহযন্ত্রে এসব জিনিসের জোগান হয় না একবারও এমনকি জলও সে খায় না।

বোঝাই যায় যে এ অবস্থায় ভল্লুকী- মায়ের পক্ষে বসন্ত পর্যন্ত দুধ খাইয়ে যাওয়া সম্ভব কেবল বাচ্চা অতি ক্ষুদে হলেই।
আর ভালুক-ছানা যদি হত বাছরের মতো বড়ো, তাহলে দৈনিক সে দুধ খেত অন্তত আধ-বালতি।
এতে দ্রুত শীর্ণ হয়ে পড়ত ভল্লুকী, গোটা সংসারই ধ্বংস পেত। তবে জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয় প্রাণীরা।
বসন্ত পর্যন্ত ভালুক-ছানা বাড়ে অতি ধীরে ধীরে। বসন্তে মায়ের সঙ্গে যখন তারা গুহা থেকে বাইরে বেরতে শুরু করে, ‘সূর্য’-স্নান’ নেয় আর নানা ধরনের খাদ্য খেতে থাকে প্রচুর, কেবল তখনই অবস্থাটা বদলায়।
এই সময় তারা খায় গত বছর থেকে পড়ে থাকা বেরি, গাছ-গাছড়ার কন্দ, সেই সঙ্গে পি’পড়ে, কে’চো, শুয়োপোকা, ই’দুর, মাছ জাগরণের সময় খাদ্য পদবাচ্য যাকিছু পাওয়া যায়। সংক্ষেপে, প্রকৃতির বাসন্তী এই সময় থেকে ভালুক-ছানারা বড়ো হয়ে উঠতে থাকে অনেক তাড়াতাড়ি। ভেড়ার ছানা এবং সাধারণভাবে তৃণভোজী জন্তুর ছানারা যে দুধ খেয়ে বড়ো হয়, তা সরাসরি উৎপাদিত হয় সারা বছর ধরে খাওয়া খাদ্য থেকে।

তার ওপর আবার তৃণভোজীদের ছানারা ঘাস খেতে শুরু করে অনেক তাড়াতাড়ি।
সেইজন্যেই জন্মের প্রথম দিন থেকেই তারা বেড়ে উঠতে থাকে অনেক দ্রুত। ছোটো ছোটো শিকারী জন্তু বাচ্চারা হয় তুলনায় ক্ষুদ্রাকার। সেবল, মেঠো বেড়াল, মার্টিন এদের এতে এমনকি পরিণত গর্ভাবস্থাতেও শিকার করে খাদ্য-সংগ্রহ এদের পক্ষে সম্ভব হয়, কেননা তখনো বজায় থাকে তাদের ক্ষিপ্রতা আর গতিশীলতা। ব্যাপারটা অন্য রকম হলে ইদুর, পাখি, কিছুই তাদের জুটত না।
ছোটো ছোটো শিকারী জম্বুর বাচ্চারা বড়ো হয়ে ওঠে তাড়াতাড়ি, প্রথম দশ দিনে তাদের ওজন বাড়ে প্রায় ৩০০ শতাংশ। এদের সামনের দাঁত ওঠে কশের দাঁতের চেয়ে অনেক পরে। আপাতদৃষ্টিতে বৈশিষ্ট্যটা তেমন গুরুতর নয়, অথচ এর ফলেই বাচ্চারা মাই জখম না করে বহুদিন ধরে মায়ের দুধ খেয়ে যেতে পারে। সেবল আর মেঠো বেড়ালদের বাচ্চার চোখ ফোটে কেবল তাদের প্রচন্ড বাড়ের সময়, চৌত্রিশ, কখনো বা ছত্রিশ দিন পরে।
Sarakhon Report 



















