শ্রী নিখিলনাথ রায়
মহারাজ নন্দকুমারের চরিত্র যে একেবারে নির্মল ছিল, সে কথা আমরা বলিতেছি না; তাহাতে স্বার্থ ও উচ্চ আশার মিশ্রণ থাকিতে পারে; কিন্তু ইংরেজ লেখকগণ তাঁহাকে যে ভাবে চিত্রিত করিতে চেষ্টা পাইয়াছেন, তাহা যে সম্পূর্ণরূপে হিংসা ও বিদ্বেষপ্রসূত, ইহা আমরা মুক্তকণ্ঠে না বলিয়া থাকিতে পারি না কিমি যাহারা ইংরেজ লেখকদিগের অথবা তাঁহাদের অনুকরণকারি- গণের রচিত নন্দকুমারচরিত্র পড়িয়া তাঁহাকে ঘৃণা করিয়া থাকেন, আমরা তাঁহাদিগকে সেই পুরুষ প্রধানের জীবনের সমস্ত ঘটনা আনু- পূর্ব্বিক অনুশীলন করিতে বলি।
দেখিবেন, তৎসমূহের মধ্য হইতে তাঁহার চরিত্রের উজ্জ্বলাংশ নিষ্কাশিত হইয়া আসিবে এবং সেই হিংসা- পরায়ণ লেখকদিগের বর্ণনা অশ্রদ্ধেয় বলিয়া প্রতীত হইবে। মহামতি বার্ক মহারাজের পরমশত্রু হেষ্টিংসের কথা হইতেই নন্দকুমারচরিত্রের মহত্ত্ব প্রদর্শনের চেষ্টা পাইয়াছেন। নন্দকুমারের চরিত সম্বন্ধে মৃতভেদ থাকিলেও, তাঁহার প্রতিভা ও বুদ্ধিমত্তা কেহই অস্বীকার করেন নাই; তাঁহার শত্রুপক্ষীয়দিগকেও ইহা মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করিতে হইয়াছে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর বাঙ্গলার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোন দেশীয় ব্যক্তি তাঁহার সমকক্ষ ছিল না। তাঁহার রাজনৈতিক প্রতিভার জন্য ইংরেজ প্রভুগণ -এতদূর ব্যাকুল হইয়াছিলেন যে, তাঁহার সর্ব্বদা তাঁহাকে দমন করিবার জন্য অশেষবিধ উপায় অবলম্বন করিতে বাধ্য হন। তাঁহার দেশীয়। শত্রুগণ তাঁহার নিকট অগ্রসর হইতে সাহসী হইত না। নন্দকুমারের ক্ষমতা এতদূর প্রবল ছিল যে, অনেক মহারথীকে তাঁহার আশ্রয় লইতে হইয়াছিল।
ক্লাইব, এমন কি ওয়ারেন হেষ্টিংসও তাঁহার’ সাহায্য গ্রহণ করিয়াছিলেন। সিরাজ উদ্দৌলা, মীরজাফর, মণিবেগম সকলেই তাঁহার পরামর্শে চলিয়াছিলেন। বিশেষতঃ মীরজাফরবংশীয়েরা তাঁহাকে আপনাদিগের হিতকারী বন্ধু বলিয়া সর্ব্বদা বিবেচনা করিতেন। দেশের সমুদায় রাজা, মহারাজ, জমীদার, ভূস্বামী ও সাধারণ প্রজাগণ তাঁহার অত্যন্ত বাধ্য ছিল।