শশাঙ্ক মণ্ডল
লবণ
তৃতীয় অধ্যায়
নদীয়ার তৎকালীন জেলাশাসকের পক্ষে প্রাণচন্দ্র রায়কে মাহিন্দারদের ব্যাপারটা লক্ষ রাখার জন্য পাঠান হল। কিন্তু সল্ট এজেন্সির সাহেবরা বলল- দশবছর ধরে এসব মাহিন্দাররা কাজ করছে এবং যাদের কাছে টাকা বাকি আছে তাদেরকে অবশ্য জোর করে পাঠানো হবে। মাহিন্দাররা বা রায়তরা তাদের দেনা শোধ করে মুক্তি চাইলেও লবণ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ওদের টাকা নেওয়া হল না বরং জোর করে লবণ তৈরির জন্য তাদের পাঠানো হল। এ ঘটনার প্রতিবাদ করে জেলাশাসক বোর্ড অফ রেভিনিউকে লিখলেন- অতীতের জেরকে নতুন বৎসরের জন্য অগ্রিম হিসাবে ধরলে কোনদিন এসব মাহিন্দাররা লবণ শ্রমিকের কাজ থেকে রেহাই পাবে না এবং কেউ যদি এক বছরের জন্যও এই কাজে লাগে তা হলে তাকে সারাজীবন ধরে এই ঋণ শোধ করে যেতে হবে। (২৪)
১৭৯৩ এর দিকে রায়মঙ্গলের সল্ট এজেন্সির বিভিন্ন এলাকায় গোলমাল শুরু হল। রায়তরা অগ্রিম নিয়েও কাজ করতে চাইছে না, মাহিন্দার সংগ্রহে বাঁধা দিচ্ছে-লবণ কর্তৃপক্ষের লোকদের সঙ্গে কয়েকটি সংঘর্ষে রায়তরা জড়িয়ে পড়েছে এমনকী আড়ং-এর লোকদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস স্থানীয় লোকেরা তাদেরকে সংগ্রহ করতে বাধা দিচ্ছে জমিদাররা প্রজাদের এ ব্যাপারে সাহায্য করছে এ ধরনের অভিযোগ সরকারি তথ্যে প্রকাশ পাচ্ছে। এ সময়ে বুড়ন পরগনার জমিদার ৪জন মালঙ্গী এবং তাদের পিওনদের বন্দি করে। এ ব্যাপারে প্রতিবিধান চেয়ে খুলনার সরকারি সল্ট এজেন্ট নদীয়ার জেলাশাসককে লিখছেন-
“If a balance should be considered in the light of a new advance. I am of opinion that the services of the people who work any one year in the salt business might be claimed the reminder of their lives.
I beg you will take the trouble to cause enquiry why he had done so and to order the release of the people. Again you will issue an order to the Zaminders and other Moffosil officers to forbid their interference with the malangis of this division and that they will not prevent the Malangis collecting the Mazoors” (4)
পরবর্তীকালে এই সল্ট এজেন্সিতে মালঙ্গীরা অগ্রিম টাকা দাদন নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে লাগল। অনেক সময় মিথ্যা হিসাব দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করতে চাইল, তারা অজুহাত সৃষ্টি করল মাহিন্দাররা টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে এবং এ ব্যাপারে তারা মিথ্যা নামে টাকা দাদন দেখিয়ে রায়মঙ্গল সল্ট এজেন্সির কর্মকর্তাদের বিপথে পরিচালিত করতে চাইল। ১৭৯৫ এর ফেব্রুয়ারি। মাসে রায়মঙ্গল সল্ট এজেন্সির এজেন্ট মিঃ গুডল্যান্ড নদীয়ার জেলা শাসককে এসব ব্যাপার জানিয়ে চিঠিতে উল্লেখ করছেন দাদন দেবার ব্যাপারে ভয়ানক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে-টাকা কে আত্মসাৎ করছে তা ধরতে অসুবিধা হচ্ছে। তাঁর অনুমান একটা বিশাল অঙ্কের টাকা এভাবে জলে যেতে বসেছে।