ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
শবাধার মাটিতে পোঁতা বা কবর দেবার রীতি
মায়াদের মধ্যে শব বা শবাধার নিয়ে বিশেষ রীতি বা আচার ছিল। মায়াদের মধ্যে শবাধার কবর দেওয়া হত। এটা করা হত মৃতদেহকে সঙ্গে করে। প্রথম দিকের ক্লাসিক পর্বে জল-এর নানারকম চিত্রাঙ্কণ দেখা যায়। রিও আজুল বা নীল নদী জলের ঘেরাপথ দিয়ে আঁকা হয়েছে।
নিউ অরলিনস যাদুঘরে এরকমভাবে জলপাখি (Water bird)-র মাথা এবং গলা ভেসেলস (Vessel)- এর ঢাকনার উপর যেন ভেসে আছে। যেন জলের তলের উপর দিয়ে শিকার ধরার কায়দায় লাফ দিয়ে উঠতে চাইছে। শবাধারের চিত্রে (Funerary Vessel) ইবালবা (Xibalba)-র অধিবাসীদের দেখানো হয়েছে।
এইসব চিত্রের মধ্যে আদিবাসী ছাড়াও আছে জীবজন্তু এবং ছোট ছোট শীর্ণ হাড়জিরজিরে প্রাণী। এদের মধ্যে অনেক ইবালবার (Xibalba) দন্তহীন মুখও দেখা যায় এবং লক্ষ্যণীয় হল এদের মধ্যে কারো কারো ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জৈবিক আকার দেখা যায়।
এসব ক্ষেত্রে অবশ্য সবার মুখের উপর কালো দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। অনেকে চোখ ওপড়ানো সুতোয় বাঁধা অলংকার গায়ে পরে থাকে। অপরাধ জগতের প্রতিটি দেবতাকে পৃথক নামে ডাকা হয় এবং এগুলি নানারকম রোগের জন্য মৃত্যু বলে ভাবা হয়।
গুহার পবিত্র গোপনীয়তা: ২৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৯০০ খ্রিস্টাব্দ প্রসারিত ক্লাসিক মায়া-সভ্যতা আমাদের কাছে হাজির করে তার গুহা স্থাপত্যের সৌন্দর্য। তার শান্ত গাম্ভীর্য সবাইকে অবাক করে দেয়। মায়া জনবসতির অনেক অঞ্চলে দেখা যায় বড় বড় সিঁড়ি মন্দিরের উঁচু মহল পর্যন্ত চলে গেছে। এইসঙ্গে পাথর কেটে লেখা মিনারগুলি মায়াদের ঐতিহাসিক ঘটনা বিবৃত করছে।এইসব স্থাপত্য খচিত নির্মাণের মধ্যে রয়েছে ধর্ম। ধর্মীয় বিশ্বাস রীতি-আচারের নানা গল্প।
এইসব গুহা মায়াদের ঐসব অঞ্চলকে পবিত্র করে এই ধরনের বিশ্বাস মায়াদের মধ্যে এখনো কাজ করে। তথ্য শিলালিপি থেকে বোঝা গেছে ধর্মীয় নেতা বা কর্মকর্তারা এইসব গুহায় নানা ধরনের লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান পালন করেছিল। ঐতিহাসিক এবং নৃতাত্ত্বিক গবেষণা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় মায়াদের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী তাদের বসতির পাশের গুহাগুলিতে নিয়মিতভাবে নানা ধরনের ধর্মীয় আচার পালন করত। নৃতাত্ত্বিকদের গবেষণা থেকে আরো জানা গেছে মায়াদের জনবসতিগুলি পবিত্র গুহার পাশেই গড়ে উঠেছিল।
(চলবে)