তৃতীয় অধ্যায়
২৪ পরগণার দক্ষিণাংশে বারুইপুর জয়নগর মগরাহাট এলাকায় দেশি চিনি তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছিল। বারাসত, বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন এলাকাতে গুড় ও চিনিকে কেন্দ্র করে এক বিশাল অংশের মানুষ বছরের কয়েক মাস জীবিকা অর্জন করত। গুড় পরিশ্রুত করে দেশীয় শেওলার সাহায্যে গুড়ে দানা ফেলা হত। পরবর্তী সময়ে এই দানা গুঁড়ো করে রোদে শুকিয়ে চিনি তৈরি করা হত-তাই একে দলুয়া চিনি বলা হত। এর দানা খুবই মিহি এবং দেখতে লাল রঙের হত।
সে যুগে বিভিন্ন প্রান্তের অসংখ্য মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকত। ব্যাপারীরা বিভিন্ন হাট থেকে গুড় কিনে বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দিত। অনেকে আবার কুটির শিল্পের আকারে চিনি তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছিল। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে এ ধরনের কারখানা বিভিন্ন স্থানে লক্ষ করা যাচ্ছে। বাদুড়িয়ার মেদিয়া গ্রামের গদাধর মল্লিক ও তার পিতা বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে চিনি তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
তাঁদের নিজস্ব কারখানায় চিনি তৈরি করে বাদুড়িয়া গঞ্জে ব্যাপারীদের কাছে সেই চিনি বিক্রয় করতেন। স্বরূপনগর থানার নিত্যানন্দ কাটির বিশ্বাসরা চাঁদুড়িয়ার হাটের বড় ব্যবসায়ী হিসাবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। খাঁটুরা, গোবরডাঙা, ইছাপুর অঞ্চলের তাম্বলিরা চিনি উৎপাদনে ও বাণিজ্যে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিল।
গোবরডাঙার হারাণ কুণ্ডু, খাটুরার কালী দত্ত, বৈদ্যনাথ দত্ত, রামজীবন আশ পুরুয়োত্তম আশ, কালীবর পাল এরা বড় ব্যবসায়ী হিসাবে প্রচুর ধনসম্পত্তির মালিক হন। মালঙ্গীপাড়ার পঞ্চানন বক্সী তার বিভিন্ন এজেন্ট মারফত বসিরহাট বারাসতের বিভিন্ন গঞ্জ থেকে চিনি ও গুড় সংগ্রহ করতেন এবং কলকাতার আড়তে তা জমা করতেন।
সাঁড়াপুল হাটে ইছামতী নদী দিয়ে অসংখ্য নৌকা গুড় নিয়ে আসত বিক্রয়ের জন্য। এই হাটে উপাধ্যায়দের গুড় কেনার জন্য বিশাল কয়েকটি দোকান ছিল। বিংশ শতাব্দির দ্বিতীয় দশকেও ২৪ পরগনার দক্ষিণে হিঙ্গলগঞ্জ, খুলনার কালীগঞ্জ থানার কুশলিয়া, গুড়ের বিখ্যাত হাট হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছিল।
Sarakhon Report 



















