ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
লেখার প্রয়োজনীয় সামগ্রী
মায়া-সভ্যতার নানারকম লক্ষ্যণীয় দিক-এর মধ্যে লিখন-পদ্ধতি খুবই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এর মধ্যে আবার লেখার যন্ত্রপাতি বা প্রয়োজনীয় সামগ্রী বেশ মজার। পুরাতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে মায়ারা লেখার সময় মাথার মধ্যে বিশেষ কায়দায় কলম-এর মত একটা ‘গুচ্ছ’ রেখে দিত। আর লেখার সময় মাটির তৈরি দোয়াত (Inkpot) পাশে রাখত। আর এই লেখার কালির রং সাধারণভাবে থাকত কালো (Black) কিন্তু এর সঙ্গে লাল আভা মেশানো থাকত।
অনেক সময় জন্তুদের চুল বা লোম দিয়ে তৈরি ব্রাশের মত কিছু দিয়েও লেখার অভ্যাস ছিল। লিখন-পদ্ধতি, লেখার সামগ্রী এসব পর্যালোচনা করে একথা বলা যায় মায়া-সভ্যতার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার বিভিন্নদিক সে কালের তুলনায় যথেষ্ট পদ্ধতিপূর্ণ ছিল। যার মধ্যে ছিল একটা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রয়োগের কৌশল।
মায়াদের গণিতচর্চা ও সংখ্যাজ্ঞান ইত্যাদি: গণিতচর্চা এবং সংখ্যাজ্ঞান এবং অঙ্কসামাধানে মায়াদের বিশেষ পারদর্শিতা উল্লেখ করার মত। কার্যত বলা ভাল মায়াদের বৌদ্ধিক চর্চার অন্যতম সফল বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল এই গণিতবিদ্যার মধ্যে। অঙ্ক এবং সংখ্যার ধারণা তাদের ছিল।

এই গণিতবিদ্যার জ্ঞান তারা জ্যোতির্বদ্যার ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করেছে। মায়ারা শূন্যক (zero) ধারণার সূচনা করে আনুমানিক ৩৫৭ খ্রিস্টাব্দে। এই শূন্যর দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করে তারা অঙ্কশাস্ত্রে ক্রমশ দক্ষ হয়ে ওঠে। এইসঙ্গে রাশিবিজ্ঞানে (Statistics বলা যায়) ব্যুৎপত্তি অর্জন করে। শিলালিপির পাঠ থেকে অনুমান করা হয় মায়ারা হাজার হাজার ধরনের অঙ্ক সমাধান করেছিল।
এই গণিতচর্চার নানা কৌশল প্রয়োগ করে তারা জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কিত নানা তথ্য উদ্ভাবন করেছিল। মহাকাশে নক্ষত্র, গ্রহর গতি-গমন সম্পর্কে একটা জ্ঞানও অর্জন করেছিল। চাঁদ, গ্রহর গতিবিধ নিয়ে যে ছক তারা তৈরি করতে পেরেছিল তার মান অন্যান্য পরিণত সভ্যতার প্রায় সমান বলা যায়। মায়া পুরোহিত এবং জ্যোতির্বিদরা সূর্য বৎসরের নির্ভুল এবং সঠিক মাপ উদ্ভাবন করতে পেরেছিল। মায়াদের এক বছরে ঠিক ৩৬৫ দিন হিসাবে করা হয়। অন্যদিকে জুলিয়ান বর্ষপঞ্জী বা ক্যালেন্ডারের হিসেবে ১ দিন কম থাকে এবং এই একদিনের ভুল ১২৮ বছর অন্তর ঘটে।
(চলবে)
Sarakhon Report 



















