ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
মায়া জনসমাজে ভুট্টার প্রভাব
মায়া জনসমাজ, সভ্যতার কথা ভুট্টার (Maize) প্রসঙ্গ ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না। মায়াদের নিজস্ব সমাজ-সভ্যতা শুধু নয়। এই জড়জগৎ, মানুষ, পৃথিবীর অনেক কিছুই ভুট্টার ইচ্ছা-অনিচ্ছার সঙ্গে সম্পর্কিত। মায়াদের প্রাক্ ক্লাসিক এবং ক্লাসিক জনসমাজ একথা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করে যে পৃথিবীর জন্ম হয়েছিল এই ভুট্টার সঙ্গে সম্পর্কিত দেবতার বরে। পৃথিবীর নানা ক্রম উত্থানও ঘটেছিল এই ভুট্টা দেবতার আশীর্বাদে।
ভুট্টা দেবতা (Maize God) হল মায়াদের কেন্দ্রীয় ধর্মীয় অবতার। মায়াদের শরীরী আদর্শ যুবক ভুট্টা দেবতার উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। এই ভুট্টা দেবতা ক্লাসিক মায়াদের অভিজাত জীবনের এক মডেলও বলা যায়। মায়া জনগোষ্ঠী বিশ্বাস করত এই জগৎ প্রথমে ছিল চ্যাপটা আকারের এবং বর্গাকারের কিন্তু এই আকার ছিল অন্তহীন।
আরো একটু স্পষ্ট করে বলা যায় (মায়াদের মহাভারত-সম বই পোপোলভুহ অনুযায়ী) প্রথম অংশের চিত্রনাট্যে আছে আমাদের এই বিশ্ব-জগতের সৃষ্টি ও মানবজাতির আবির্ভাব। এই সৃষ্টি-প্রয়াস ব্যর্থ হবার পর এই কাজ ভুট্টা দিয়ে গঠন করা হয়। এই ভুট্টা হল মায়া সমাজের অঞ্চল মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকার অধিবাসীদের প্রধান খাদ্য। পৃথিবীর এই আকারের সঙ্গে বিভিন্ন দিক (direction) সম্পর্কেও তাদের বিশেষ বিশ্বাস আছে।

চারদিকের মধ্যে পূর্ব ও দক্ষিণ সম্পর্কে একটা মিথ চালু আছে। পূর্ব দিক হল লাল, দক্ষিণ দিক হল সবুজ বা হলুদ। মায়ারা এইসঙ্গে ‘পঞ্চম দিক’-এর একটা ব্যাপার বিশ্বাস করত। এটা হল এরকম: যেমন সব সময় পূর্ব দিক আছে, তেমনি সব সময় আছে কেন্দ্রীয় দিক (Centre)। মায়ারা এই ‘কেন্দ্র’কে কার্যত শক্তিশালী বড় সেলবা গাছ (Celba tree) বলে ভাবত।
আবার মজার এক তথ্য হল মায়াদের এই বহু দেবতা নাকি তাদের হিসেব করা গাণিতিক ব্যাখ্যারই সংস্করণমাত্র। আবার অন্যভাবে বলা যায় প্রতিটি দেবতা কার্যত ছিল একটা সংখ্যার প্রতিভূ বা অনেক ক্যালেন্ডার থেকে চয়ন করা সংখ্যা দিয়ে পর্যবেক্ষণের প্রতিফলন মাত্র। অর্থাৎ মায়াদের ধর্ম, দেবতার বিশ্বাস এত সুগভীর এবং জীবনযাত্রা এত সুদূরপ্রসারী যে গাণিতিক চর্চার ক্ষেত্রেও দেবতা তার অন্যতম ভাষা হয়ে গেছে।
(চলবে)
Sarakhon Report 



















