আর্কাদি গাইদার
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
আমার পিঠে দু-দুবার মাটির ঢেলা এসে লাগল। তিষ্কার টুপি তো উড়ে গিয়ে পড়ল জলে। আমাদের গোলাবারুদ তখন ফুরিয়ে এসেছে, জলে ভিজে একশা হয়ে গেছি আমরা। অথচ ফেকা আর ইয়াঙ্কা তখন সবে জাহাজ ছেড়েছে মাত্র। শত্রু সিদ্ধান্ত নিল সে অবরোধ ভেঙে বেরুবে।
দেখলুম, ওদের জাহাজের সঙ্গে সামনাসামনি ধাক্কা লাগলে আমাদের আর কোনো আশা থাকবে না। বেড়ার পলকা গেট যে ডুবে যাবেই এতে কোনো সন্দেহ নেই।
‘শেষ গোলাগুলো দাগো, জালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও!’ আমি হুকুম দিলুম। মারাত্মকভাবে গোলাবর্ষ’ণ করে মাত্র আধ-মিনিটেক শত্রুকে আটকে রাখলুম। দেখলুম, আমাদের উদ্ধারে ড্রেডনট ছুটে আসছে পুরো দমে।
‘রুখে দাঁড়াও!’ ফেক্কা হাঁক দিল। সঙ্গে সঙ্গে দূর পাল্লার কামান দাগতে শুরু করল।
শত্রুর জাহাজগুলো তখন আমাদের প্রায় পাশে হাজির। আমার কাছে দুটি পথ খোলা হয় ওদের নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে যেতে দেয়া, আর নয় তো প্রাণান্ত যুদ্ধের ঝাকি নিয়ে পথ আগলে দাঁড়ানো। বলা বাহুল্য, আমি শেষের পথই বেছে নিলুম।
গায়ের জোরে লগিতে ঠেলা দিয়ে আমি আমাদের জাহাজখানাকে ওদের পথ আটকে দাঁড় করালুম।
শত্রুর প্রথম জাহাজখানা সজোরে দড়াম করে আমাদের জাহাজে ধাক্কা মারল। হঠাৎ দেখি, তিমুক্কা আর আমি ঈষদুষ্ণ বদ্ধ জলায় গলাজলে দাঁড়িয়ে আছি। তবে ওই ধাক্কায় শত্রুর জাহাজও গেল থেমে। আর ঠিক এইটিই আমরা চাইছিলুম। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রকাণ্ড, বেঢপ গড়নের কিন্তু শক্তসমর্থ, পরাক্রান্ত ড্রেডনট শত্রুর জাহাজের আড়ে সোজাসুজি এসে ধাক্কা মারল। শত্রু-জাহাজ গেল উলটে। তখন অবশিষ্ট রইল ওদের টর্পেডো বোটটা, যা আগে ছিল শুয়োরের জাবনার গামলা।
ওটার সঙ্গে বোঝাপড়া বাকি। দ্রুত ছোটার সুযোগ নিয়ে ওটা পালানোর চেষ্টা করল। কিন্তু লগির এক ধাক্কায় আমি দিলুম ওটাকে উলটে।