কৃষি ও কৃষক
চতুর্থ অধ্যায়
স্কটল্যান্ডের এই মানবপ্রেমিক ১৮৮০ খ্রীষ্টাব্দের ৫ই ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩৯ খ্রীষ্টাব্দের ডিসেম্বরে মারা যান। সমবায় আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শ্রীনিকেতন বর্ধমান বিভাগীয় সমবায় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন ৯-১০ই ফেব্রুয়ারি ১৯২৯ সালে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে। এই সম্মেলনের সভাপতি স্যার হ্যামিলটন এবং রবীন্দ্রনাথ এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন। এই সম্মেলনে রবীন্দ্রনাথ বলেন ‘একথা মাঝে মাঝে শোনা যায় যে এককালে আমাদের জীবনযাত্রার যে রকম নিতান্ত স্বল্পোপকরণ ছিল তেমনি আবার যদি হতে পারে তা হলে দারিদ্র্যের গোড়া কাটা যায়। তার মানে সম্পূর্ণ অধঃপাত হলে আর পতনের সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু তাকে পরিত্রাণ বলে না, এর মধ্য দিয়ে গান্ধীবাদী অর্থনীতির মৃদু সমালোচনা করেন। সভাপতির ভাষণে ড্যানিয়েল হ্যামিলটন বলেন If Co-operation fails, the hope of India will fail.
স্বভাবতই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ড্যানিয়েল হ্যামিলটনের মধুর সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং হ্যামিলটন কবিকে গোসাবা ভ্রমণের জন্য অনুরোধ করেন। রবীন্দ্রনাথ সেই অনুরোধ রক্ষা করেন ১৯৩২ খ্রীষ্টাব্দের ২৯শে ডিসেম্বর, ক্যানিং টাউন থেকে রবীন্দ্রনাথকে নয়োর রক্ষা যাবার ব্যবস্থা করা হল। কবি দুদিন গোসাবাতে থেকে সবকিছুর খোঁজখবর নিলে নিয়ে খুবই উৎসাহিত হলেন। গোসাবার আদর্শ কৃষি উপনিবেশ, তার অধিবাসীদের জন্য সুলভে বাসস্থান নির্মাণ, হাতে কলমে কৃষিশিক্ষার ব্যবস্থা, এলাকার পথঘাট, যৌথ ভাণ্ডার, কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক, সুপেয় জলের ব্যবস্থা, উৎপন্ন দ্রব্যের খরিদ বিক্রয়ের ব্যবস্থা সবই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কবি পর্যবেক্ষণ করলেন।
বিনিময়ের জন্য এক ধরনের ‘গোসাবা নোট’ ও তিনি তার এলাকার মধ্যে চালু করেন। চাষিদের দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে গ্রাম্য মহাজনরা যাতে শোষণ না করতে পারে তার জন্য ধর্মগোলার প্রবর্তন করেন। ফসল ওঠার সময় চাষিরা সামান্য পরিমাণ ধান এই গোলায় জমা রাখত এবং অভাবের সময় ধর্মগোলা থেকে ধান সাহায্য পেত। গোসাবা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক আমানতকারিদের শতকরা ৬.২৫ পয়সা সুদ দিত এবং কর্জগ্রহণকারীদের কাছ থেকে শতকরা ৯ টাকা ৬ আনা সুদ আদায় করত। গোসাবা সেদিন সুন্দরবনের মানুষের কাছে এক আদর্শ উপনিবেশ হিসাবে স্বীকৃত ছিল। কৃষির পাশাপাশি নানাধরণের কুটিরশিল্প গড়ে তোলার প্রচেষ্টা লক্ষ করা গিয়েছিল। সেই সাথে শিক্ষা স্বাস্থ্যের ব্যাপারে উদ্যোগ লক্ষ করা গেল।
১৯৩৫ সালের মধ্যে গোসাবা আর আর ইনস্টিটিউশন গড়ে উঠল, দাতব্য চিকিৎসালয় গড়ে তোলা হল। ড্যানিয়েল হ্যামিলটন তাঁর কর্মকাণ্ডকে বিস্তৃত করার জন্য ১৯৩৯ খ্রীষ্টাব্দে ময়ূরভঞ্জের মহারাজের কাছ থেকে উড়িষ্যার বারিপাদা জেলায় এক বিশাল এলাকা লীজ নিলেন কিন্তু মৃত্যু তাঁর এই কাজে বাঁধা সৃষ্টি করল। হ্যামিলটনের মৃত্যুর পর ট্রাস্টিবোর্ডের সদস্যরা তার পরিকল্পনাকে চালিয়ে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হলেন। হ্যামিলটন স্টেটের ম্যানেজার সুধাংশু মজুমদারের বিরুদ্ধে প্রজাদের অভিযোগ পুঞ্জীভূত হতে থাকল। জমিদারির মধ্যে বেশ কিছু এলাকা তখনও প্রজাবসতি হয়নি এসব জায়গায় ভাগচাষি দিয়ে চাষ করানো হত। ভাগচাষিদের নানাভাবে বঞ্চনা করা হতে লাগল জমিদারি এস্টেটের পক্ষ থেকে।
Sarakhon Report 



















