ম্যাকসিম গোর্কী
আটাশ
“মনে পড়ে না। তবে আমি যে বুঝতে পেরেছিলাম, তেমনটিও মনে হয় না।”
“কিন্তু, ব্যাপারটা তো অত্যন্ত স্পষ্ট! মেয়েটা যে তোমাকে পেতে চেয়েছিল, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।”
“কিন্তু তখন আমার জীবনের ওটাই উদ্দেশ্য ছিল না।”
“তোমার জীবনের যাই উদ্দেশ্য থাক না কেন, ব্যাপারটা কিন্তু একই। বেশ বোঝা যাচ্ছে যে মেয়েদের বিষয়ে তুমি খুব পটু ছিলে না। অন্য যে কেউ ওই অবস্থায় পড়লে অনেক কিছুই ক’রে ফেলতো,
এমন কি জমিদার পর্যন্ত হ’য়ে উঠতো, তারপর জীবন শেষ করতো মাতাল দম্পতীর একজন হয়ে।”
একটুক্ষণ নীরব থেকে পরে:
“সত্যি, তুমি অদ্ভুত-রাগ কোরো যেন-ভারী অদ্ভুত। আর সব চেয়ে আশ্চর্য লাগে এই যে, তুমি ঘৃণায় বিষিয়ে না উঠে, আজো ভালো মানুষটিই রয়ে গেছ।….. হ্যাঁ, তুমি ঘৃণায় বিষিয়ে উঠতে পারতে।…….. কিন্তু তোমার শক্তি আছে। সেই ভালো।”
আবার খনিকক্ষণ নীরব থেকে তিনি চিন্তাজড়িত সুরে বললেন: “তোমার মন আমি ঠিক বুঝি না-অত্যন্ত জটিল তোমার মন। কিন্তু তোমার হৃদয়টা বোঝা যায়… হ্যাঁ, সত্যই বোঝা যায়।”
এই প্রসংগে উল্লেখযোগ্য:
আমি যখন কাজানে ছিলাম, তখন আমি জেনারেল কর্ণেটের স্ত্রীর কাছে চাকরি নিই-দারোয়ান ও মালীর চাকরি। মৃত জেনারেলের বিধবা পত্নী; ফরাসী দেশের মেয়ে; বয়স অল্প; মাংসল দেহ; কিশোরী মেয়ের মতো ছোটো ছ’টি পা। চোখ দু’টি অদ্ভুত রকমের সুন্দর; চঞ্চল, আর সর্বদা লোভীর মতো সতর্ক। বিবাহের পূর্বে মেয়েটি, আমার মনে হয়, বাড়ির ঝি, কিম্বা রাঁধুনী ছিল।
কিম্বা সম্ভবত গণিকা থাকতে পারে। সে প্রতিদিন শেষরাত্রেই মদ খেয়ে মাতাল হয়ে উঠত। তারপর কেবল একটা সেমিজ পরে গাউন গায়ে জড়িয়ে, পায়ে লাল মরোক্কা চামড়ার কমলা-রঙের একটা তাতারী চটি লাগিয়ে এবং মাথার ঘন চুলগুলাকে কেশরের মতো ফাঁপিয়ে ফুলিয়ে উঠানে কিম্বা বাগানে এসে দাঁড়াতো। স্রস্ত চুলগুলো তার লাল গাল আর কাঁধের ওপর এসে পড়তো ঝুলে। হুবহু একটি যুবতী ডাইনী।
মাঝে মাঝে সে বাগান সম্বন্ধে আলাপ করত। কখনো বা ফরাসী গান গুনগুন ক’রে গাইতো। আর আমার কাজ করা লক্ষ্য করতো। একটু ক্ষণ বাদে বাদে রান্নাঘরের জানলায় গিয়ে হাঁকতো, “পলিন, আমাকে কিছু দিয়ে যা।”