আর্কাদি গাইদার
প্রথম পরিচ্ছেদ
১৯১৭ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ সেনা-বাহিনীর সামরিক আদালত দ্বাদশ সাইবেরিয়ান রাইফেল রেজিমেন্টের নিম্নপদস্থ সৈনিক আলেক্সেই গোরিকভকে রণক্ষেত্র ত্যাগ করে পালানো ও অন্তর্ঘাতমূলক প্রচারকার্যে’র দায়ে অপরাধী সাব্যস্ত করে গুলি করে মারার হুকুম দিল। ২৫শে ফেব্রুয়ারি এই দণ্ডাদেশ কার্যকর হল আর তার মাত্র কয়েকদিন পর, ২রা মার্চ, পেত্রোগ্রাদ থেকে এই মর্মে একটা টেলিগ্রাম এসে পৌছল যে বিদ্রোহী জনসাধারণ জার স্বৈরতন্ত্রকে উৎখাত করে দিয়েছে।
বিপ্লবের প্রথম স্পষ্ট দৃশ্য যা আমার নজরে পড়েছিল তা হল, পোলুতিনদের জজ্বলন্ত জমিদার-বাড়ির আগুনের আভা। ঢালু, ছাদের জানলাটা দিয়ে অনেক রাত পর্যন্ত দেখেছিলুম সেদিন, লকলকে জিভ বের করে আগুন সদ্য-বসন্তের হাওয়া নিয়ে খেলছে। পকেটে-রাখা পিস্তলটার মসৃণ উষ্ণ হাতলটায় অনেকক্ষণ আলুতোভাবে হাত বুলিয়েছিলুম সেদিন, মনে পড়ে পিস্তলটা ছিল বাবার কাছ-থেকে-পাওয়া আমার সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতিচিহ্ন। যে ‘রোমাঞ্চকর সময়’ আসছিল তার কথা মনে ভেবে চোখের জল ফেলতে-ফেলতেও হাসলুম আমি। বাবার মৃত্যুর ফলে আমার গুরুতর ক্ষতির জন্যে যে-চোখের জল ঝরতে শুরু করেছিল তা তখনও শুকোয় নি।
ফেব্রুয়ারি-বিপ্লবের গোড়ার দিনগুলোয় আমাদের ইশকুলটার অবস্থা দাঁড়িয়েছিল উইয়ের ঢিপিতে জ্বলন্ত আঙরা গুঁজে দিলে যেমন হয় তেমনি। যুদ্ধে জয়কামনা করে প্রার্থনা শেষ করার পর চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী কিছু ছেলে সেদিনও গান ধরে দিয়েছিল ‘ঈশ্বর জারকে রক্ষা করুন’, কিন্তু অন্যেরা ‘নিপাত যাক’ চিৎকার করে সজোরে শিস আর হপহপ আওয়াজ দিয়ে তাদের থামিয়ে দিল।
এরপরই শুরু হয়ে গেল প্রচণ্ড হৈ-হল্লা, ছাত্ররা লাইন ভেঙে এদিক-ওদিক ছড়িয়ে পড়ল, জারিনার ছবির দিকে কে-একজন ছুড়ে মারল একটা বান্-রুটি, আর বেপরোয়া হল্লা করার এমন একটা সুযোগ পাওয়ায় প্রথম শ্রেণীর ছাত্ররা প্রাণের আনন্দে বেড়াল আর ভেড়ার ডাক শুরু করে দিল।
ভ্যাবাচাকা খেয়ে ইনস্পেক্টর কত বোঝানোর চেষ্টা করলেন, কিন্তু সেই বীভৎস চিৎকারে তাঁর গলাই চাপা পড়ে গেল। যতক্ষণ-না দারোয়ান সেমিওন দেয়াল থেকে রাজপরিবারের ছবিগুলো নামিয়ে নিল, ততক্ষণ চিৎকার আর বেড়ালের ডাক থামল না। পাগলের মতো চেচাতে-চেচাতে আর পা দাপাতে-দাপাতে উত্তেজিত ছেলেগ,লো ছুটোছ,টি করে নিজের নিজের ক্লাসে গিয়ে ঢুকল।