আর্কাদি গাইদার
প্রথম পরিচ্ছেদ
অন্য কোনো মহাজনও চৌকিদারকে চাকরি দিতে রাজি হল না। এখানে-সেখানে অনেক হাঁটাহাঁটি করলেন তিনি, কিন্তু দেখাগেল উনোন চালু রাখার কিংবা কাঠগোলার পাহারাদারের কোনো চাকরি খালি নেই।
সিনিউগিন লোকটা ক্যাটক্যাঁট করে বলে দিল:
‘রুশ সেনাবাহিনীকে আমি সাহায্য করে থাকি। রেড ক্রশকে হাজার রুবল দান হিসেবে দিয়েচি আমি। আর দু-শো রুবল দামের নানান উপহার, নিশান আর কেরেষ্কির ছবি ফৌজী হাসপাতালগুলোয় বিলি করেচি বুয়েচ? তুমি কী করেচ বাপু? না, ফৌজ থেকে পলাতকদের সাহায্য করেচ। না-না, তোমায় দেবার মতো কোনো কাজ নেই আমার।’
কথাগুলো চৌকিদারের কাছে অসহ্য ঠেকায় তিনিও পাল্টা জবাব দিতে কসুর করলেন না:
‘তা যা বলেছেন বাবু, অনেক ধন্যবাদ এজন্যে। তবে আমি বলি কী, নিশান আর ছবি বিলিয়ে আপনি বাবু পার পাবেন না। যা পাবার-না, সময়ে তা ঠিকই পাবেন, বুঝলেন! আর আমায় অত চোখ রাঙাবেন না!’ দেখা গেল বলতে বলতে ফিয়োদর- কাকাও হঠাৎ গলা চড়িয়েছেন। ‘নিজেরে ভাবেন কী আপনি? ভেবেচেন পেট মোটা করে, বাড়ির ছাদে দূরবীন বসিয়ে আর পোষা কুমিররে গোমাংস খাইয়ে আপনি জার কি ঈশ্বরের চেয়ে বেশি শক্তি ধরচেন? মোটেও মনে স্থান দেবেন না তা। আপনার ওই সব কারখানায় লোকে কী বলাবলি করচে দয়া করে একবার কান পেতে শুনবেন। আমরা তো শুনচি ওরা বলচে কারখানাগুলা নাকি ওদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। তা আপনি কী বলেন?’
‘আমি.. আমি তোমারে ফাটকে দেব।’ স্তম্ভিত হয়ে গিয়ে সিনিউগিন তোলাতে শুরু করল। ‘ও, তাহলে তোমার এই ব্যাপার! আমি এখুনি লিখে নালিশ জানাচ্ছি জানো, আমার কারখানা সামরিক প্রয়োজনে কাজ করচে। নয়া সরকারও আমারে মান্যগণ্য করে, আর তুমি বেরিয়ে যাও, দূর হয়ে যাও এখেন থেকে!’
মাথায় টুপি চাপিয়ে চৌকিদার গটগট করে বেরিয়ে এলেন।
‘দূর, ছাই, এরই নাম নাকি বিপ্লব। যতো সব নোংরা লোক, যে-যার নিজের জায়গায় জাঁকিয়ে বসে আচে। আমায় বলে কিনা বেরিয়ে যেতে, ব্যাটা নিজে ফৌজী বড়কতা আর শহর পরিষদের কত্তাব্যক্তিদের সঙ্গে মিলে কাজ চালাচ্চে। আচ্ছা করে পেরেক ঠুকে ঠুকে মারা উচিত ওগুলোরে, তাইলেই উপযুক্ত সাজা হয়। ওহ, ভারি আমার দেশভক্ত রে!’ রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে আপন মনে গর্গর করতে লাগলেন ফিয়োদর-কাকা।