ম্যাকসিম গোর্কী
চৌত্রিশ
“জীবনে সবচেয়ে কী ভয়ংকর স্বপ্ন তুমি দেখেছ বলো তো?” টলস্টয় আমাকে প্রশ্ন করলেন। স্বপ্ন আমি কদাচিৎ দেখি, তাও আমার ভালো মনে থাকে না; কিন্তু দুটি স্বপ্ন আমার মনে আছে এবং সম্ভবত বাকী সমস্ত জীবন থাকবে-ও।
একবার আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম, আমি দেখছি, সমস্ত আকাশটা কুৎসিত আবে ভরে গিয়েছে, প’চে স’ড়ে গলে পড়ছে, সবুজাভ পীত বর্ণ ধারণ করেছে। নক্ষত্রগুলো দেখাচ্ছে গোলাকার চ্যাপ্টা পদার্থের মতো; সেগুলি জ্যোতিহীন, দীপ্তিহীন; অসুস্থ ব্যক্তির দেহের মরা মাসের মতো। সেই গলিত আকাশের উপর দিয়ে ধীর সর্পিল গতিতে গড়িয়ে চলেছে রক্তাভ বিদ্যুৎ; এবং যখনই তা কোনো নক্ষত্রকে স্পর্শ করছে, তখনই সেই নক্ষত্রটি স্ফীত হ’য়ে ধারণ করছে বর্তুলাকার, এবং নিঃশব্দে যাচ্ছে ফেটে; আর তার স্থলে একটা কালচে চিহ্ন এবং খানিকটা ধোঁয়া মাত্র থাকছে অবশিষ্ট।
অতঃপর সেই চিহ্নটিও বিবর্ণ তরলিত আকাশে দ্রুত অদৃশ্য হ’য়ে যাচ্ছে। এমনি ভাবে সমস্ত নক্ষত্রগুলি একের পর একটি ক’রে ফেটে অদৃশ্য হ’য়ে গেল এবং আকাশ ক্রমেই অধিকতর অন্ধকার ও ভয়ংকর হ’তে হ’তে অবশেষে আবর্তিত হ’য়ে উপরের দিকে উঠতে লাগল, হ’য়ে উঠলো বুদ্বুদময়। অবশেষে খণ্ডে খণ্ডে ভেঙে আমার মাথায় ঠাণ্ডা ঘন তরল পদার্থের মতো ঝরে পড়লো। আর ওই খণ্ড- গুলির অবকাশে যে-স্থানগুলি রইল, সেগুলি কৃষ্ণবর্ণ লোহার মতো চকচক্ করতে লাগলো। লিও নিকোলাইয়েভিচ বললেন:
“এ-স্বপ্ন তোমার ঘটেছে কোনো পণ্ডিতী বই পড়ার ফলে। নিশ্চয় কোনো জ্যোতির্বিদ্যার বই তুমি পড়েছিলে। ফলে, এই ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন। আর দ্বিতীয় স্বপ্নটা কি শুনি?”
দ্বিতীর স্বপ্নঃ বরফাবৃত সমভূমি, শাদা কাগজের মতো মসৃণ; কোথাও পাহাড় নেই, গাছপালা নেই, ঝোপ-ঝাড় নেই-কেবল,- কোনো রকমে দেখা যায়, কয়েকটা লোহার দণ্ড বরফের তলা থেকে মাথা উঁচু ক’রে আছে।