ম্যাকসিম গোর্কী
চৌত্রিশ
আর এক দিগ্বলয় থেকে অপর দিব্বলয় পর্যন্ত এই বরফের মৃত মরুর মধ্য দিয়ে চ’লে গেছে হল্লে ফিতের মতো অস্পষ্ট একটা পথ। আর সেই পথের উপর দিয়ে এক জোড়া ধূসর রঙের পা-হীন টপ-বুট ধীরে ধীরে হেঁটে চলেছে-শূন্য এক জোড়া টপ-বুট। লিও নিকোলাইয়েভিচু, এবার তাঁর ভ্রূ যুগল তুলে মনোযোগের সংগে আমার পানে তাকালেন এবং মুহূর্তের জন্য কি ভাবলেন।
“সে তো ভয়ানক! সত্যি কি তুমি ওরকম স্বপ্ন দেখেছিলে, না, ওটা তুমি বানিয়ে বলছ? কিন্তু এর মধ্যেও কেতাবী জিনিষ খানিকটা র’য়ে গেছে।”
কিন্তু অকস্মাৎ তিনি যেন ক্রুদ্ধ হ’য়ে উঠলেন, বিরক্ত হ’য়ে আঙুল দিয়ে নিজের জানুর উপর একটা আঘাত ক’রে কঠিন কণ্ঠে বললেন:
“কিন্তু তুমি তো মাতাল নও? কোনো কালে তোমার খুব বেশি পান-দোষ ছিল, এমনটিও মনে হয় না। একজন জার্মান লেখক ছিলেন, হফমান, তিনি স্বপ্ন দেখতেন, তাসের টেবিলগুলো সদর রাস্তার ওপর ছুটোছুটি করছে। আরো এমনি সব জিনিষ। কিন্তু তিনি ছিলেন মাতাল। খালি বুট হেঁটে চলেছে-ভয়ানক! তুমি যদি বানিয়েও ব’লে থাকো, তবু চমৎকার। ভয়ংকর।”
অকস্মাৎ তাঁর মুখে এমন প্রশস্ত একটা হাসি ছড়িয়ে পড়ল যে তাঁর গণ্ডের হাড়গুলিও ঝিকমিক করতে লাগল। তিনি বললেন, “আর ভেবে দেখো দেখিঃ হঠাৎ ত্বেরস্কায়া স্ট্রীটে একটা তাসের টেবিল ছুটে বেড়াচ্ছে।
কাঠের বাঁকা বাঁকা পাগুলো ফেলে খটাখট শব্দ করতে করতে, শাদা ধুলো উড়িয়ে। তখনো তুমি টেবিলের ওপরকার সবুজ কাপড়টাতে নম্বরগুলোও দেখতে পাচ্ছ-আবগারী কেরাণীরা তিন দিন তিন রাত্রি ক্রমাগত হুইস্ট খেলেছে-ফলে টেবিলটা তা আর সইতে না পেরে বেরিয়ে পড়েছে পথে।”
তিনি হো হো ক’রে হেসে উঠলেন এবং আমাকে তিনি অবিশ্বাস করায় আমি ঈষৎ আহত হ’য়েছি সম্ভবত তা লক্ষ্য করে বললেন:
“আমি তোমার স্বপ্নগুলোকে কেতাবী ভাবছি ব’লে তুমি কি রাগ করলে? না না, সেজন্যে ভেবো না। আমি জানি, অনেক সময় অনেকে নিজের অজ্ঞাতেই অনেক জিনিষ বানায়। বিশ্বাস করে না যে সে ওটা বানিয়েছে।