০৫:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
সপ্তাহের শুরুতেই শেয়ারবাজারে ধস: ডিএসই সূচক ৬৮ পয়েন্ট ও সিএসই ৩৫ পয়েন্ট কমেছে ২০২৫ সালের গিফট গাইডে এআই ও ওয়্যারেবলকে শীর্ষে তুলল এনগ্যাজেট তাইওয়ান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যে চীনা কূটনীতিককে ডেকে পাঠাল টোকিও ব্রিটেনকে বিনিয়োগকারীদের বার্তা: একটু আশাবাদী হোন ভারতের অদ্ভুত স্থিতিশীলতা: অস্থির প্রতিবেশে শান্ত শক্তি  ধানমন্ডিতে মাইডাস ও ইবনে সিনা হাসপাতালের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ তেহরানে এক কোটি মানুষের দুই সপ্তাহ চলার মতো পানি আছে সাভারে ৪ কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ: টিয়ারশেল ও জলকামান নিক্ষেপে উত্তেজনা সহজ বিয়ের ঢেউ: বিলাস নয়, সাধারণতার সৌন্দর্যে নতুন প্রজন্মের ভালোবাসা জাতীয় গেমসের উদ্বোধনে নজর কাড়ল ‘জাদুকরী’ পৌরাণিক মাছের পাপেট

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৩৯)

  • Sarakhon Report
  • ১১:০০:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 61

শ্রী নিখিলনাথ রায়

রাধাচরণের বাটী হুগলীর নিকটে ছিল। তাঁহার আর এক জামাতা ভদ্রপুরেই বাস করিতেন। জগচ্চন্দ্রের প্রতি মহারাজ তাদৃশ সন্তুষ্ট ছিলেন না। গুরুদাসের প্রতি জগচ্চন্দ্র হিংসা প্রকাশ করায়, মহারাজ জগচ্চন্দ্রের প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন এবং তাঁহার প্রধান শত্রু মোহনপ্রসাদের সহিত জগচ্চন্দ্রের মিত্রতা থাকায়, মহারাজ অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন। কিন্তু- কোম্পানীর কর্মচারিগণ জগচ্চন্দ্রের প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন।  রাজা গুরুদাসের পর তদীয় পত্নী রাণী জগদম্বা নন্দকুমারের সমস্ত সম্পত্তির- অধিকারিণী হন। তাঁহার জীবিতাবস্থায় নন্দকুমারের একমাত্র বংশধর তাঁহার দৌহিত্র জগচ্চন্দ্রের পুত্র রাজা মহানন্দ সমস্ত সম্পত্তি হস্তগত করেন। মহানন্দ নিজামতে দেওয়ানী করিতেন; তিনি রাজো- পাধিতে ভূষিত হইয়াছিলেন। নবাব কুঞ্জঘাটার বাটীতে উপস্থিত হইয়া তাঁহাকে খেলাৎ প্রদান করেন।

পূর্ব্বে বলা হইয়াছে যে, জগচ্চন্দ্রের প্রতি কোম্পানীর কর্মচারিগণ সন্তুষ্ট ছিলেন। এজন্য তদ্বংশীয়গণ কোম্পানীর কর্মচারিগণের সহিত সৌহাদসূত্রে আবদ্ধ হন। তাহার একটি প্রমাণ দেওয়া যাইতেছে। যং- কালে ইংলণ্ডের সুপ্রসিদ্ধ ওয়েস্টমিনিষ্টার-হলে সমগ্র ব্রিটিশজাতির প্রতি- নিধির নিকট ওয়ারেণ হেষ্টিংসের বিচার হইতেছিল, সেই সময়ে হেষ্টিংস নিজ দোষহীনতার প্রমাণের জন্য তাঁহার শাসনকে ন্যায়ানুমোদিত বলিয়া প্রতিপন্ন করিবার ইচ্ছায় কতকগুলি দেশীয় সম্ভ্রান্ত লোকের নামস্বাক্ষর সংগ্রহ করিয়াছিলেন। তন্মধ্যে রাজা মহানন্দের নামও দৃষ্ট হইয়া থাকে।

মহানন্দও একজন পরমবৈষ্ণব ছিলেন; তাঁহার স্থাপিত রাধামোহন ও মহাপ্রভু গৌরাঙ্গমূর্তি প্রভৃতি তাহার প্রমাণ। রাজা মহানন্দের পর তাঁহার পুত্র বিজয়কৃষ্ণ রাজোপাধি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন; বিজয়কৃষ্ণের পর আর কেহই সে উপাধি লাভ করেন নাই। কুঞ্জঘাটা রাজবাটীতে নন্দকুমারের ভ্রাতা কেবলকৃষ্ণের রাও উপাধি, জগচ্চন্দ্রের রায় উপাধি ও গুরুদাসের রায় বাহাদুর উপাধির ও রাজা গুরুদাসের জমিদারীর সনন্দ আছে। বর্তমান সময়ের ন্যায় তৎকালে রায় ও রায় বাহাদুর উপাধি পথে ঘাটে গড়াগড়ি যাইত না। সে সময়ে রায়দিগকে সহস্র সৈন্যের (তন্মধ্যে পঞ্চশত অশ্বারোহী) অধিপতির ও রায় বাহাদুরকে তিন সহস্র সৈন্যের (তন্মধ্যে দুই সহস্র অশ্বারোহী) অধিপতির পদমর্য্যাদা দেওয়া হইত।

বিজয়কৃষ্ণের পর কৃষ্ণচন্দ্র, এবং তৎপরে কুমার দুর্গানাথ কুঞ্জ- ঘাটা রাজবংশের বংশধর হন। এক্ষণে দুর্গানাথের পুত্র কুমার দেবেন্দ্রনাথ মহারাজ নন্দকুমারের একমাত্র বংশধর বলিয়া পরিচয় প্রদান করিতে- ছেন। দেবেন্দ্রনাথ তরুণবয়স্ক; কিন্তু তাঁহার স্থিরবুদ্ধি, অমায়িক ব্যবহার, সাধুপ্রকৃতি মহারাজ নন্দকুমারের বংশধরের ন্যায়ই প্রতীয়মান হয়। ভগবানের আশীর্ব্বাদে তিনি দীর্ঘজীবন লাভ করিয়া, তাঁহার বংশের আদিপুরুষ সেই দেশবিখ্যাত প্রকাণ্ডপুরুষ মহারাজ নন্দকুমারের স্বধর্ম, স্বদেশ ও স্বজাতিভক্তির অনুকরণপূর্ব্বক বঙ্গভূমির মুখোজ্জ্বল করুন।

জনপ্রিয় সংবাদ

সপ্তাহের শুরুতেই শেয়ারবাজারে ধস: ডিএসই সূচক ৬৮ পয়েন্ট ও সিএসই ৩৫ পয়েন্ট কমেছে

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২৩৯)

১১:০০:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

শ্রী নিখিলনাথ রায়

রাধাচরণের বাটী হুগলীর নিকটে ছিল। তাঁহার আর এক জামাতা ভদ্রপুরেই বাস করিতেন। জগচ্চন্দ্রের প্রতি মহারাজ তাদৃশ সন্তুষ্ট ছিলেন না। গুরুদাসের প্রতি জগচ্চন্দ্র হিংসা প্রকাশ করায়, মহারাজ জগচ্চন্দ্রের প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন এবং তাঁহার প্রধান শত্রু মোহনপ্রসাদের সহিত জগচ্চন্দ্রের মিত্রতা থাকায়, মহারাজ অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন। কিন্তু- কোম্পানীর কর্মচারিগণ জগচ্চন্দ্রের প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন।  রাজা গুরুদাসের পর তদীয় পত্নী রাণী জগদম্বা নন্দকুমারের সমস্ত সম্পত্তির- অধিকারিণী হন। তাঁহার জীবিতাবস্থায় নন্দকুমারের একমাত্র বংশধর তাঁহার দৌহিত্র জগচ্চন্দ্রের পুত্র রাজা মহানন্দ সমস্ত সম্পত্তি হস্তগত করেন। মহানন্দ নিজামতে দেওয়ানী করিতেন; তিনি রাজো- পাধিতে ভূষিত হইয়াছিলেন। নবাব কুঞ্জঘাটার বাটীতে উপস্থিত হইয়া তাঁহাকে খেলাৎ প্রদান করেন।

পূর্ব্বে বলা হইয়াছে যে, জগচ্চন্দ্রের প্রতি কোম্পানীর কর্মচারিগণ সন্তুষ্ট ছিলেন। এজন্য তদ্বংশীয়গণ কোম্পানীর কর্মচারিগণের সহিত সৌহাদসূত্রে আবদ্ধ হন। তাহার একটি প্রমাণ দেওয়া যাইতেছে। যং- কালে ইংলণ্ডের সুপ্রসিদ্ধ ওয়েস্টমিনিষ্টার-হলে সমগ্র ব্রিটিশজাতির প্রতি- নিধির নিকট ওয়ারেণ হেষ্টিংসের বিচার হইতেছিল, সেই সময়ে হেষ্টিংস নিজ দোষহীনতার প্রমাণের জন্য তাঁহার শাসনকে ন্যায়ানুমোদিত বলিয়া প্রতিপন্ন করিবার ইচ্ছায় কতকগুলি দেশীয় সম্ভ্রান্ত লোকের নামস্বাক্ষর সংগ্রহ করিয়াছিলেন। তন্মধ্যে রাজা মহানন্দের নামও দৃষ্ট হইয়া থাকে।

মহানন্দও একজন পরমবৈষ্ণব ছিলেন; তাঁহার স্থাপিত রাধামোহন ও মহাপ্রভু গৌরাঙ্গমূর্তি প্রভৃতি তাহার প্রমাণ। রাজা মহানন্দের পর তাঁহার পুত্র বিজয়কৃষ্ণ রাজোপাধি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন; বিজয়কৃষ্ণের পর আর কেহই সে উপাধি লাভ করেন নাই। কুঞ্জঘাটা রাজবাটীতে নন্দকুমারের ভ্রাতা কেবলকৃষ্ণের রাও উপাধি, জগচ্চন্দ্রের রায় উপাধি ও গুরুদাসের রায় বাহাদুর উপাধির ও রাজা গুরুদাসের জমিদারীর সনন্দ আছে। বর্তমান সময়ের ন্যায় তৎকালে রায় ও রায় বাহাদুর উপাধি পথে ঘাটে গড়াগড়ি যাইত না। সে সময়ে রায়দিগকে সহস্র সৈন্যের (তন্মধ্যে পঞ্চশত অশ্বারোহী) অধিপতির ও রায় বাহাদুরকে তিন সহস্র সৈন্যের (তন্মধ্যে দুই সহস্র অশ্বারোহী) অধিপতির পদমর্য্যাদা দেওয়া হইত।

বিজয়কৃষ্ণের পর কৃষ্ণচন্দ্র, এবং তৎপরে কুমার দুর্গানাথ কুঞ্জ- ঘাটা রাজবংশের বংশধর হন। এক্ষণে দুর্গানাথের পুত্র কুমার দেবেন্দ্রনাথ মহারাজ নন্দকুমারের একমাত্র বংশধর বলিয়া পরিচয় প্রদান করিতে- ছেন। দেবেন্দ্রনাথ তরুণবয়স্ক; কিন্তু তাঁহার স্থিরবুদ্ধি, অমায়িক ব্যবহার, সাধুপ্রকৃতি মহারাজ নন্দকুমারের বংশধরের ন্যায়ই প্রতীয়মান হয়। ভগবানের আশীর্ব্বাদে তিনি দীর্ঘজীবন লাভ করিয়া, তাঁহার বংশের আদিপুরুষ সেই দেশবিখ্যাত প্রকাণ্ডপুরুষ মহারাজ নন্দকুমারের স্বধর্ম, স্বদেশ ও স্বজাতিভক্তির অনুকরণপূর্ব্বক বঙ্গভূমির মুখোজ্জ্বল করুন।