০৫:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
দূষিত ধোঁয়ায় ঢাকা দিল্লি, উত্তর ভারতে ভেঙে পড়ল দৃশ্যমানতা অস্ট্রেলিয়ার বন্ডি বিচে রক্তাক্ত উৎসব, বন্দুক সহিংসতায় ১৫ প্রাণহানি ৭৫ বছরের বন্ধন জোরদার করতে জর্ডানে মোদি, শুরু তিন দেশ সফর সিডনির বন্ডি সৈকতে বন্দুক তাণ্ডব, শোকস্তব্ধ অস্ট্রেলিয়া, অস্ত্র আইন আরও কঠোরের পথে ২ লাখ ১০ হাজার বছরের মানবপথের সাক্ষী ফায়া প্যালিওল্যান্ডস্কেপ রিলস আর ভিউয়ের বাইরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সঠিকভাবে হাইকিং করার উপায় বিশ্বের দীর্ঘতম ফ্লাইট উড্ডয়ন মেক্সিকোতে জরুরি অবতরণের চেষ্টায় ছোট ব্যক্তিগত জেট বিধ্বস্ত, নিহত অন্তত সাত জাপানের পরবর্তী শিল্প অধ্যায়ে পথ দেখাচ্ছে উদ্ভাবনী দক্ষতা নির্ভুল স্টিল সমাধানে আগামীর রূপ নির্মাণ

বিদেশ নীতির বিশেষজ্ঞদের জনমানুষের কথা শুনতে হবে

  • Sarakhon Report
  • ০৬:১৪:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 69

হ্যাপিমন জেকব

ডিসেম্বর ১৫ তারিখে, ভারতের বিদেশ নীতির উপর ভিত্তি করে প্রকাশিত একটি ম্যাগাজিন ইন্ডিয়াজ ওয়ার্ল্ড এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর একটি ভিন্নধর্মী বক্তব্য রাখেন। তিনি ভারতীয় আন্তর্জাতিক কেন্দ্রে উপস্থিত কৌশলগত সম্প্রদায়ের সদস্যদের অনুরোধ করেন যে, তারা যেন ভারতের বিদেশ নীতি সম্পর্কে চিন্তা ও লেখালেখি করার সময় “জনমানুষের কথা” শুনেন।

জয়শঙ্করের বক্তব্যের অন্তর্নিহিত বার্তাটি ছিল, বড়ো বড়ো অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন যেমন অর্থনৈতিক সংস্কার সত্ত্বেও, ভারতের কৌশলগত এলিট সম্প্রদায়ের আলোচনাগুলি দেশের রাজনৈতিক আবেগ ও সাধারণ মানুষের অনুভূতিকে প্রতিফলিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তার মতে, বিদেশ নীতি নিয়ে চিন্তা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো সমাজ কীভাবে পারিপার্শ্বিক বিশ্ব সম্পর্কে চিন্তা করে এবং নিজেদের পছন্দ তৈরি করে, যা দেশের বিদেশ নীতিতে প্রভাব ফেলে। সহজ কথায়, তিনি মনে করান যে দিল্লিতে কেন্দ্রীভূত কৌশলগত এলিটদের মূল বিশ্বাস ও সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধান রয়েছে।

বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে “জনমানুষের কথা” শোনার প্রচলিত ধারণা বেশ রক্ষণশীল। পণ্ডিতদের মধ্যে ঐক্যমত্য হলো, বিদেশ নীতি নিয়ে চিন্তা করা একটি জটিল ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ বিষয়। বাস্তবিকভাবে, বিদেশ নীতি এমন একচেটিয়া হয়ে পড়েছে যে এটি কৌশলগত সম্প্রদায়কেও নীতিনির্ধারণের কাজ থেকে দূরে রাখে। এই বিষয়ে আরেকটু বিশদে আলোচনা করা যাক।

বিদেশ নীতি সম্পর্কে চিন্তা করার তিনটি স্তর আছে। প্রথম স্তর, যা জয়শঙ্করের ভাষায় “ট্র্যাক ওয়ান”, মূলত সরকারি স্তরে পরিচালিত হয়, যা বহিরাগতদের জন্য প্রায় বন্ধ এবং এটি মূলত একটি আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নির্বাচিত রাজনীতিবিদদের দ্বারা। দ্বিতীয় স্তর হলো কৌশলগত সম্প্রদায়, যারা গবেষণা, আলোচনা, ইতিহাস থেকে শিক্ষাগ্রহণ এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে বিদেশ নীতিতে অবদান রাখে। কৌশলগত সম্প্রদায়ের কাজ হলো বিদেশ নীতির চ্যালেঞ্জের উদ্ভাবনী সমাধান তৈরি করা এবং দীর্ঘমেয়াদী বিশ্লেষণ প্রদান। তবে বাস্তবে এটি প্রায়শই ঘটে না। জয়শঙ্করের মতে, “ট্র্যাক টু” “ট্র্যাক ওয়ান” এর তুলনায় প্রায়ই পিছিয়ে থাকে।

এর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, কৌশলগত সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার কারণে স্বাধীন এবং সৃজনশীল চিন্তার প্রয়োজনীয়তা ও প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্যের সীমাবদ্ধতার মধ্যে আটকে পড়েন। দ্বিতীয়ত, ভারতের কৌশলগত সম্প্রদায়ের অনেক সদস্যের সরকারে অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। এর ফলে তাদের গবেষণা প্রাসঙ্গিক নীতিতে পরিণত হয় না। এর পরিণতি স্পষ্ট: কৌশলগত সম্প্রদায় থেকে উদ্ভাবনী বিদেশ নীতির সমাধান খুব কমই আসে।

তৃতীয় স্তর হলো সাধারণ জনগণের স্তর, যা জয়শঙ্করের ভাষায় “রাস্তা”। জনসাধারণ প্রথাগত অর্থে বিদেশ নীতিতে জড়িত না হলেও, তাদের মতামত থেকে ভারতের বিদেশ নীতির বৃহত্তর দিকনির্দেশনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি পাওয়া যেতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, ভারতীয় সমাজের সাধারণ মনোভাব যেমন ইউরোপীয় দেশসমূহ, কানাডা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে, সমাজের পছন্দগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দিতে পারে। কৌশলগত সম্প্রদায় এবং সাধারণ জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য প্রায়শই স্পষ্ট। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের কৌশলগত সম্প্রদায়ে অ্যান্টি-আমেরিকানিজমের অবশিষ্টাংশ থাকতে পারে, যা সাধারণ ভারতীয়দের মধ্যে দেখা যায় না।

তবে, জনসাধারণের মতামত বা জরিপের ভিত্তিতে বিদেশ নীতি তৈরি করা যায় না, কারণ জনসাধারণ প্রায়ই নীতিনির্ধারণের সূক্ষ্ম বিষয়গুলি সম্পর্কে অবগত থাকে না। কিন্তু জয়শঙ্করের বড়ো বার্তাটি ছিল, সমাজের পছন্দ ও প্রবণতা বিবেচনা না করে বিদেশ নীতি তৈরি করা যায় না। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, অভিবাসনের ধরণ, এবং অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পছন্দগুলি বিদেশ নীতিকে প্রভাবিত করে।

জয়শঙ্করের বক্তব্য ভারতের কৌশলগত সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করে। দুটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:
প্রথমত, ভারতীয় কৌশলগত সম্প্রদায় একটি সৃষ্ট আবদ্ধ পরিবেশে কাজ করতে পারে না। এটি তাদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলবে।
দ্বিতীয়ত, বিদেশ নীতি বা কৌশলগত বিষয়গুলির সংজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। এ বিষয়গুলো আর একটি বিশেষ শ্রেণির বিষয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত নয়। “জনমানুষের কথা” থেকে অন্তর্দৃষ্টি নিয়েই এগুলোর উন্নতি করা উচিত।

লেখক:  হ্যাপিমন জেকব জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতের বিদেশ নীতি পড়ান এবং ইন্ডিয়াজ ওয়ার্ল্ড এর সম্পাদক।

জনপ্রিয় সংবাদ

দূষিত ধোঁয়ায় ঢাকা দিল্লি, উত্তর ভারতে ভেঙে পড়ল দৃশ্যমানতা

বিদেশ নীতির বিশেষজ্ঞদের জনমানুষের কথা শুনতে হবে

০৬:১৪:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

হ্যাপিমন জেকব

ডিসেম্বর ১৫ তারিখে, ভারতের বিদেশ নীতির উপর ভিত্তি করে প্রকাশিত একটি ম্যাগাজিন ইন্ডিয়াজ ওয়ার্ল্ড এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর একটি ভিন্নধর্মী বক্তব্য রাখেন। তিনি ভারতীয় আন্তর্জাতিক কেন্দ্রে উপস্থিত কৌশলগত সম্প্রদায়ের সদস্যদের অনুরোধ করেন যে, তারা যেন ভারতের বিদেশ নীতি সম্পর্কে চিন্তা ও লেখালেখি করার সময় “জনমানুষের কথা” শুনেন।

জয়শঙ্করের বক্তব্যের অন্তর্নিহিত বার্তাটি ছিল, বড়ো বড়ো অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন যেমন অর্থনৈতিক সংস্কার সত্ত্বেও, ভারতের কৌশলগত এলিট সম্প্রদায়ের আলোচনাগুলি দেশের রাজনৈতিক আবেগ ও সাধারণ মানুষের অনুভূতিকে প্রতিফলিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তার মতে, বিদেশ নীতি নিয়ে চিন্তা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো সমাজ কীভাবে পারিপার্শ্বিক বিশ্ব সম্পর্কে চিন্তা করে এবং নিজেদের পছন্দ তৈরি করে, যা দেশের বিদেশ নীতিতে প্রভাব ফেলে। সহজ কথায়, তিনি মনে করান যে দিল্লিতে কেন্দ্রীভূত কৌশলগত এলিটদের মূল বিশ্বাস ও সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধান রয়েছে।

বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে “জনমানুষের কথা” শোনার প্রচলিত ধারণা বেশ রক্ষণশীল। পণ্ডিতদের মধ্যে ঐক্যমত্য হলো, বিদেশ নীতি নিয়ে চিন্তা করা একটি জটিল ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ বিষয়। বাস্তবিকভাবে, বিদেশ নীতি এমন একচেটিয়া হয়ে পড়েছে যে এটি কৌশলগত সম্প্রদায়কেও নীতিনির্ধারণের কাজ থেকে দূরে রাখে। এই বিষয়ে আরেকটু বিশদে আলোচনা করা যাক।

বিদেশ নীতি সম্পর্কে চিন্তা করার তিনটি স্তর আছে। প্রথম স্তর, যা জয়শঙ্করের ভাষায় “ট্র্যাক ওয়ান”, মূলত সরকারি স্তরে পরিচালিত হয়, যা বহিরাগতদের জন্য প্রায় বন্ধ এবং এটি মূলত একটি আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নির্বাচিত রাজনীতিবিদদের দ্বারা। দ্বিতীয় স্তর হলো কৌশলগত সম্প্রদায়, যারা গবেষণা, আলোচনা, ইতিহাস থেকে শিক্ষাগ্রহণ এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে বিদেশ নীতিতে অবদান রাখে। কৌশলগত সম্প্রদায়ের কাজ হলো বিদেশ নীতির চ্যালেঞ্জের উদ্ভাবনী সমাধান তৈরি করা এবং দীর্ঘমেয়াদী বিশ্লেষণ প্রদান। তবে বাস্তবে এটি প্রায়শই ঘটে না। জয়শঙ্করের মতে, “ট্র্যাক টু” “ট্র্যাক ওয়ান” এর তুলনায় প্রায়ই পিছিয়ে থাকে।

এর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, কৌশলগত সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার কারণে স্বাধীন এবং সৃজনশীল চিন্তার প্রয়োজনীয়তা ও প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্যের সীমাবদ্ধতার মধ্যে আটকে পড়েন। দ্বিতীয়ত, ভারতের কৌশলগত সম্প্রদায়ের অনেক সদস্যের সরকারে অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। এর ফলে তাদের গবেষণা প্রাসঙ্গিক নীতিতে পরিণত হয় না। এর পরিণতি স্পষ্ট: কৌশলগত সম্প্রদায় থেকে উদ্ভাবনী বিদেশ নীতির সমাধান খুব কমই আসে।

তৃতীয় স্তর হলো সাধারণ জনগণের স্তর, যা জয়শঙ্করের ভাষায় “রাস্তা”। জনসাধারণ প্রথাগত অর্থে বিদেশ নীতিতে জড়িত না হলেও, তাদের মতামত থেকে ভারতের বিদেশ নীতির বৃহত্তর দিকনির্দেশনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি পাওয়া যেতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, ভারতীয় সমাজের সাধারণ মনোভাব যেমন ইউরোপীয় দেশসমূহ, কানাডা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে, সমাজের পছন্দগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দিতে পারে। কৌশলগত সম্প্রদায় এবং সাধারণ জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য প্রায়শই স্পষ্ট। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের কৌশলগত সম্প্রদায়ে অ্যান্টি-আমেরিকানিজমের অবশিষ্টাংশ থাকতে পারে, যা সাধারণ ভারতীয়দের মধ্যে দেখা যায় না।

তবে, জনসাধারণের মতামত বা জরিপের ভিত্তিতে বিদেশ নীতি তৈরি করা যায় না, কারণ জনসাধারণ প্রায়ই নীতিনির্ধারণের সূক্ষ্ম বিষয়গুলি সম্পর্কে অবগত থাকে না। কিন্তু জয়শঙ্করের বড়ো বার্তাটি ছিল, সমাজের পছন্দ ও প্রবণতা বিবেচনা না করে বিদেশ নীতি তৈরি করা যায় না। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, অভিবাসনের ধরণ, এবং অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পছন্দগুলি বিদেশ নীতিকে প্রভাবিত করে।

জয়শঙ্করের বক্তব্য ভারতের কৌশলগত সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করে। দুটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:
প্রথমত, ভারতীয় কৌশলগত সম্প্রদায় একটি সৃষ্ট আবদ্ধ পরিবেশে কাজ করতে পারে না। এটি তাদের অপ্রাসঙ্গিক করে তুলবে।
দ্বিতীয়ত, বিদেশ নীতি বা কৌশলগত বিষয়গুলির সংজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। এ বিষয়গুলো আর একটি বিশেষ শ্রেণির বিষয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত নয়। “জনমানুষের কথা” থেকে অন্তর্দৃষ্টি নিয়েই এগুলোর উন্নতি করা উচিত।

লেখক:  হ্যাপিমন জেকব জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতের বিদেশ নীতি পড়ান এবং ইন্ডিয়াজ ওয়ার্ল্ড এর সম্পাদক।