০৯:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১২২) ব্রেক্সিট-পরবর্তী দুর্বল ব্রিটেনের পক্ষে চীনের সঙ্গে বিরোধিতা এখন আত্মঘাতী গ্র্যামির ডাবল মনোনয়নে কেটসআইয়ের জয়যাত্রা — বৈচিত্র্য, প্রতিভা ও সংস্কৃতির গ্লোবাল উদযাপন যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন সমাপ্তির সম্ভাবনায় ডলার স্থিতিশীল, অস্ট্রেলীয় ডলার শক্তিশালী, ইয়েন দুর্বল প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩২১) হলিউডের ‘হাইল্যান্ডার’ রিবুটে যোগ দিলেন কোরিয়ান তারকা জিওন জং-সিও অক্ষরের রহস্য: কেন ‘Q’-এর প্রয়োজন ‘U’ — ভাষার আত্মার এক বিস্ময়কর ইতিহাস নাসার চন্দ্র মিশনের গতি ফেরাতে ‘সবকিছু করবে’ ব্লু অরিজিন” ট্রাম্প বনাম সুপ্রিম কোর্ট: শুল্ক সংকটে নতুন আইনি লড়াই সম্ভাব্য বাজার ধসের পূর্বাভাস: ওয়াল স্ট্রিটও জানে না কখন আসবে পতন

টলস্টয়ের স্মৃতি (পর্ব- ৩১)

  • Sarakhon Report
  • ০৩:৫৪:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 60

ম্যাকসিম গোর্কী

একটি চিঠি

লিও নিকোলাইয়েভিচের মধ্যে এমন অনেক কিছু জিনিষ আছে, যা মাঝে মাঝে আমার মধ্যে ঘৃণার অনুরূপ একটি অনুভূতির উদ্রেক করে। এবং এই ঘৃণা একটা গুরুভার পাষাণের মতো আমার সমগ্র সত্তার উপর নেমে আসে। সমস্ত বস্তু অনুপাতের উর্ধ্বে তাঁর অতি পুষ্ট ব্যক্তিত্বটিকে সত্যই একটি দানবীয় দুর্ঘটনা ব’লে মনে হয়- অনেকটা কুৎসিত, অনেকটা বীভৎস। রূপকথার দৈত্যের মতো তাঁর সধ্যে এমন একটা কিছু আছে, যাকে পৃথিবী ধ’রে রাখতে পারে না। সত্যই, তিনি মহান, তিনি বিরাট।

আমার গভীর বিশ্বাস তিনি যা কিছু বলেছেন, সে সমস্ত সত্ত্বেও তাঁর মধ্যে এমন অনেক কিছু বস্তু রয়েছে যার সম্বন্ধে তিনি সম্পূর্ণ নীরব-এবং সম্ভবত চিরদিন নীরবই থাকবেন, কোনদিন কাউকে কিছু বলবেন-ও না। এই “অজ্ঞাত কিছুটি” কেবল মাত্র কখনো কখনো ইংগিতে ইসারায় তাঁর কথোপ- কথনে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি আমাকে এবং এল সুলারঝি- স্কিকে তাঁর যে দু’খানি ডাইরির খাতা পড়তে দিয়েছিলেন, সেগুলির মধ্যেও এর সংকেত পাওয়া যায়। আমার মনে হয়, এ যেন সকল স্বীকারের অস্বীকার, সর্বাপেক্ষা গভীর এবং অনিষ্টকর এক ধ্বংস-অসীম এক, অমোঘ এক নৈরাশ্য। নিঃসংগতার মৃত্তিকা থেকে এর উদ্ভব, এবং এ সম্বন্ধে সম্ভবত তিনি ছাড়া আর কার-ও ভীষণতর কোনো অভিজ্ঞতা-ও নেই।

আমার প্রায়ই মনে হ’ত, তিনি এমন একটি মানুষ, যিনি তাঁর অন্তরতম অন্তর থেকে জনসাধারণের প্রতি চিরদিনই উদাসীন। তিনি তাদের কাছ থেকে এতো দূরে, এতো উর্ধ্বে আছেন যে, তারা তাঁর চোখে ক্ষুদ্র পতংগের মতো প্রতীয়মান হয়। তাদের কর্মতৎপরত। তাঁর কাছে হাস্যাস্পদ এবং অত্যন্ত করুণ লাগে। তাই তিনি তাদের কাছ থেকে সুদূর এক মরুভূমিতে চলে যান এবং সেখানে নির্জনে তাঁর সকল আধ্যাত্মিক শক্তি দিয়ে, শ্রেষ্ঠতম প্রচেষ্টা দিয়ে নিবিড়ভাবে পরীক্ষা ক’রে দেখেন সৃষ্টির “সারতম বস্তু”-মৃত্যুকে।

তাঁর সমস্ত জীবন ধ’রে তিনি মৃত্যুকে ভয় করেছেন, ঘৃণা করেছেন। সারা জীবন তাঁর আত্মার একটি আতংকের স্পন্দন তিনি অনুভব করেছেন,- আরসাম্যাক্সের মতো একটি আতংকের- তাঁকে কি অবশ্যই মরতে হবে? সমস্ত বিশ্ব, সমস্ত পৃথিবী তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে; চীন, ভারত, আমেরিকা, সর্বত্র থেকে প্রাণময় ছন্দময় জীবনের অজস্র তন্তু তাঁর পানে প্রসারিত হ’য়ে আছে; তাঁর আত্মা যে সকলের, সর্বকালের, তাও ঘোষিত হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১২২)

টলস্টয়ের স্মৃতি (পর্ব- ৩১)

০৩:৫৪:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ম্যাকসিম গোর্কী

একটি চিঠি

লিও নিকোলাইয়েভিচের মধ্যে এমন অনেক কিছু জিনিষ আছে, যা মাঝে মাঝে আমার মধ্যে ঘৃণার অনুরূপ একটি অনুভূতির উদ্রেক করে। এবং এই ঘৃণা একটা গুরুভার পাষাণের মতো আমার সমগ্র সত্তার উপর নেমে আসে। সমস্ত বস্তু অনুপাতের উর্ধ্বে তাঁর অতি পুষ্ট ব্যক্তিত্বটিকে সত্যই একটি দানবীয় দুর্ঘটনা ব’লে মনে হয়- অনেকটা কুৎসিত, অনেকটা বীভৎস। রূপকথার দৈত্যের মতো তাঁর সধ্যে এমন একটা কিছু আছে, যাকে পৃথিবী ধ’রে রাখতে পারে না। সত্যই, তিনি মহান, তিনি বিরাট।

আমার গভীর বিশ্বাস তিনি যা কিছু বলেছেন, সে সমস্ত সত্ত্বেও তাঁর মধ্যে এমন অনেক কিছু বস্তু রয়েছে যার সম্বন্ধে তিনি সম্পূর্ণ নীরব-এবং সম্ভবত চিরদিন নীরবই থাকবেন, কোনদিন কাউকে কিছু বলবেন-ও না। এই “অজ্ঞাত কিছুটি” কেবল মাত্র কখনো কখনো ইংগিতে ইসারায় তাঁর কথোপ- কথনে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি আমাকে এবং এল সুলারঝি- স্কিকে তাঁর যে দু’খানি ডাইরির খাতা পড়তে দিয়েছিলেন, সেগুলির মধ্যেও এর সংকেত পাওয়া যায়। আমার মনে হয়, এ যেন সকল স্বীকারের অস্বীকার, সর্বাপেক্ষা গভীর এবং অনিষ্টকর এক ধ্বংস-অসীম এক, অমোঘ এক নৈরাশ্য। নিঃসংগতার মৃত্তিকা থেকে এর উদ্ভব, এবং এ সম্বন্ধে সম্ভবত তিনি ছাড়া আর কার-ও ভীষণতর কোনো অভিজ্ঞতা-ও নেই।

আমার প্রায়ই মনে হ’ত, তিনি এমন একটি মানুষ, যিনি তাঁর অন্তরতম অন্তর থেকে জনসাধারণের প্রতি চিরদিনই উদাসীন। তিনি তাদের কাছ থেকে এতো দূরে, এতো উর্ধ্বে আছেন যে, তারা তাঁর চোখে ক্ষুদ্র পতংগের মতো প্রতীয়মান হয়। তাদের কর্মতৎপরত। তাঁর কাছে হাস্যাস্পদ এবং অত্যন্ত করুণ লাগে। তাই তিনি তাদের কাছ থেকে সুদূর এক মরুভূমিতে চলে যান এবং সেখানে নির্জনে তাঁর সকল আধ্যাত্মিক শক্তি দিয়ে, শ্রেষ্ঠতম প্রচেষ্টা দিয়ে নিবিড়ভাবে পরীক্ষা ক’রে দেখেন সৃষ্টির “সারতম বস্তু”-মৃত্যুকে।

তাঁর সমস্ত জীবন ধ’রে তিনি মৃত্যুকে ভয় করেছেন, ঘৃণা করেছেন। সারা জীবন তাঁর আত্মার একটি আতংকের স্পন্দন তিনি অনুভব করেছেন,- আরসাম্যাক্সের মতো একটি আতংকের- তাঁকে কি অবশ্যই মরতে হবে? সমস্ত বিশ্ব, সমস্ত পৃথিবী তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে; চীন, ভারত, আমেরিকা, সর্বত্র থেকে প্রাণময় ছন্দময় জীবনের অজস্র তন্তু তাঁর পানে প্রসারিত হ’য়ে আছে; তাঁর আত্মা যে সকলের, সর্বকালের, তাও ঘোষিত হয়েছে।