ম্যাকসিম গোর্কী
একটি চিঠি
তবে কেন প্রকৃতি তার নিয়মের ব্যতিক্রম করবে না-কেন সে এই একটি মাত্র মানুষকে দৈহিক অমরতা দেবে না-কেন? টলস্টয় যে পরিমাণে যুক্তিবাদী ছিলেন, তাতে কোনো মিরাকল বা দৈব ঘটনায় বিশ্বাস করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু অপরপক্ষে তিনি রূপকথার দৈত্যের মতো ছিলেন দুঃসাহসী, দুঃসন্ধানী অভিযাত্রী। শিক্ষানবীশী কোনো তরুণ সৈন্য যেমন অজ্ঞাত শিবিরজীবনের কথা ভেবে ভয়ে ও নৈরা্যে মরিয়া হয়ে ওঠে, অজ্ঞাত পরলোকের কথা ভেবে তিনিও তেমনি দুর্ধর্ষ মরিয়া হয়ে ওঠেন।
আমার বেশ মনে আছে, গাসপ্রায় তিনি লিও শেস্টভের লেখা “নীটশে এবং টলস্টয়ের রচনায় শুভ ও অশুভ” পুস্তকখানি পাঠ করেন। আন্তন শেখভ মন্তব্য করেন বইখানি তাঁর ভালো লাগে নি। তখন টলস্টয় বলেন, কিন্তু “আমার তো ভালোই লেগেছে। বইখানা আত্মম্ভরিতার সংগে লেখা হ’লেও কথাগুলি ঠিক এবং কৌতূহলের-ও উদ্রেক করে। সিনিকরা যখন অকপট হন, তখন আমি তাঁদের খুব পছন্দ করি। এখন সিনিকরা বলছেন, সত্যের প্রয়োজন নেই। সত্যি কথা, সত্যে তাঁদের কী প্রয়োজন বলো? কারণ, সত্য থাক আর না থাক, মরতেই হবে তাঁকে।”
তারপর, তাঁর কথাগুলো কেউ বোঝে নি এই ব্যাপারটি স্পষ্ট লক্ষ্য ক’রে তিনি দ্রুত মৃদু হেসে আরো বললেন:
“কোনে। মানুষ যদি চিন্তা করতে শেখে, তবে যায় আসে না যে সে কি চিন্তা করছে। কারণ, সে সর্বদাই চিন্তা করছে তার আপনার মৃত্যুর কথা। সমস্ত দার্শনিকেরাই ঠিক এমনিটি। আর, যদি মৃত্যুই থাকে, তবে পৃথিবীতে কী সনাতন সত্য থাকতে পারে বলো?”
তিনি ব’লে চললেন, সবার জন্যে সত্য হোলো এক: ভগবৎ প্রেম। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি আলাপ করেন অনাসক্তির সংগে, ক্লান্তির সংগে। লাঞ্চ শেষ হবার পর আবার তিনি বইখানাকে তুলে নিলেন এবং যেখানে এই অংশটা আছে: ‘টলস্টয়, ডস্টইয়েভস্কি, নীটুশে, এঁরা তাঁদের প্রশ্নের কোনো জবাব না পেলে বেঁচে থাকতে পারতেন না। তাই যে কোনো জবাবই তাঁদের পক্ষে জবাব না পাবার চেয়ে ছিল ভালো, সেই জায়গাটা লক্ষ্য ক’রে হোহো ক’রে হেসে উঠলেন, বললেন:
“কী দুঃসাহসিক কেশবিন্যাস! তিনি সোজাসুজি বলছেন যে আমি নিজেকে প্রবঞ্চনা ক’রেছি, অর্থাৎ আমি প্রবঞ্চনা করেছি অণর সবাইকে।
ব্যাপারটা স্পষ্টত এমনিই দাঁড়ায়।”
“কেশবিন্যাস?” প্রশ্ন করলে সুলার।