০৩:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

ডকুমেন্টারিতে কীভাবে অতিরিক্ত ডায়েট করানো হয়- বললেন নারী কে-পপ আইডলরা

  • Sarakhon Report
  • ০৭:০০:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 16

সারাক্ষণ ডেস্ক

নারী কে-পপ আইডলরা কীভাবে চরম ডায়েট ও সৌন্দর্যের কঠোর মানদণ্ডের চাপে ভুগেছেনতা তুলে ধরেছেন এসবিএসের ডকুমেন্টারি বডিমেন্টারি”-তেযা সম্প্রচারিত হয় রোববার। কিম ওয়ান-সন থেকে শুরু করে মামামুর হুয়াসা পর্যন্তনানা প্রজন্মের নারী শিল্পীরা স্বাস্থ্য-সংকট ও মানসিক অস্থিরতার কথা বলেছেনযা এতদিন কে-পপ জগতের ঝলমলে মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে ছিল।

সোয়ু২০১০ সালের জনপ্রিয় মেয়ে গ্রুপ সিস্টার-এর এক সদস্যতাঁর প্রশিক্ষণকালীন সময়ে মুখোমুখি হওয়া চরম চাপের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেন, “প্রতিদিন আমাকে ওজন মাপতে হতআর সর্বক্ষণ বিচার করা হত। এক পর্যায়ে অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়ায় আমি রাস্তায় জ্ঞান হারাই এবং আমাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়।

জরুরি চিকিৎসা হিসেবে স্যালাইন পেলেও ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয় কাটেনি তাঁরযার ফলে পরবর্তীতে তিনি আতঙ্কজনিত সমস্যা বা প্যানিক ডিজঅর্ডারে ভুগতে থাকেন।

তিনি আরও বলেনআইডলদের জন্য এক নিষ্ঠুর মানদণ্ড ছিল উচ্চতা থেকে ১২০ বাদ” সূত্রঅর্থাৎ সেন্টিমিটারে মাপা উচ্চতা থেকে ১২০ বিয়োগ করে সেই সংখ্যাক কিলোগ্রাম ওজন ধরে রাখতে হবে। এই হিসাব আমাদের জন্য নিয়মের মতো হয়ে গিয়েছিলআমরা কেবল সংখ্যার পিছনেই ছুটতাম,” বলেন সোয়ু।

অন্য এক মেয়ে গ্রুপ সিক্রেট-এর সদস্য জিয়ন হ্যো-সংযিনি অতিভোজন আর কঠোর উপবাসে ভুগেছেনতাঁর প্রায় ৫০ কিলোগ্রাম ওজনের সময়কার কাজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। তিনি বলেন, “তখন মনে হত আমি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারছি না।” আইডল-জীবনের ঐকান্তিক সৌন্দর্য বজায় রাখতে গিয়ে যে মানসিক চাপ অনুভূত হয়তা তিনি উল্লেখ করেন।

মামামুর হুয়াসাযিনি কে-পপ ইন্ডাস্ট্রিতে সৌন্দর্যের প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে নিজেকে তুলে ধরেছেনজানিয়েছেন তাঁর অভিষেকের সময় তিনি কী ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি বলেনতাঁর চেহারার কারণে ভক্তরা গ্রুপ থেকে তাঁকে বাদ দেওয়ার দাবিতে আবেদনে পর্যন্ত স্বাক্ষর করেছিলেন। তখন সৌন্দর্যের মানদণ্ড ছিল অত্যন্ত কঠোর। মনে হতআইডল হলে এসব যেন মানতেই হবে,” বলেন তিনি। আমি একবার গোপনে কালো তিলের কেক খেয়েছিলামআর এত অপরাধবোধ হয়েছিল যে বমি করে ফেলি। সেখান থেকেই অ্যানোরেক্সিয়া ও বিষণ্নতা তৈরি হয়।

২০১০ সালের জনপ্রিয় মেয়ে গ্রুপ কারার সদস্য হান সেয়ন বর্ণনা করেনতাঁদের হিট গান মিস্টার” এর প্রচারণার সময় কতটা চরম ডায়েটিং করেছিলেন। ওই গানের পরিবেশনায় সদস্যদের পরতে হত লো-রাই প্যান্ট আর ক্রপ টপ। তিনি বলেন, “মিস্টার-এর জন্য তখনকার সব কার্যক্রম চলাকালে আমি মাসের পর মাস পানি প্রায় খেতামই না। শেষ পর্যন্ত এতটাই শুকিয়ে গিয়েছিলাম যে অজ্ঞান হয়ে পড়ি।

পরবর্তীতে হান অজানা কারণে ত্বকের সমস্যায় ভুগেছেনযার চিকিৎসা পেতে সাত বছর সময় লেগেছে। অত্যধিক ওজন কমে যাওয়ার কারণে তিনি প্যাটুলাস ইউস্টেশিয়ান টিউব সিনড্রোমে আক্রান্ত হনযেখানে কানের স্বাভাবিক চাপ-নিয়ন্ত্রণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এমনকি ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকের পপ আইকন কিম ওয়ান-সন-ও এ থেকে রেহাই পাননি। তিনি জানিয়েছেনএক ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ৪-৫ কিলোগ্রাম ওজন কমে যায়যা পরে ১৫ বছর ধরে ধরে রেখেছিলেনকারণ তাঁর দুর্বল চেহারার জন্য প্রশংসা পেয়েছিলেন।

জাতীয় স্বাস্থ্য বীমা পরিষেবা গত জুলাইয়ে জানায়২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ২০ বছরের নিচে নারীদের মধ্যে অ্যানোরেক্সিয়া রোগের হার ৯৭.৫ শতাংশ বেড়ে গেছে।

ডকুমেন্টারিতে কীভাবে অতিরিক্ত ডায়েট করানো হয়- বললেন নারী কে-পপ আইডলরা

০৭:০০:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

সারাক্ষণ ডেস্ক

নারী কে-পপ আইডলরা কীভাবে চরম ডায়েট ও সৌন্দর্যের কঠোর মানদণ্ডের চাপে ভুগেছেনতা তুলে ধরেছেন এসবিএসের ডকুমেন্টারি বডিমেন্টারি”-তেযা সম্প্রচারিত হয় রোববার। কিম ওয়ান-সন থেকে শুরু করে মামামুর হুয়াসা পর্যন্তনানা প্রজন্মের নারী শিল্পীরা স্বাস্থ্য-সংকট ও মানসিক অস্থিরতার কথা বলেছেনযা এতদিন কে-পপ জগতের ঝলমলে মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে ছিল।

সোয়ু২০১০ সালের জনপ্রিয় মেয়ে গ্রুপ সিস্টার-এর এক সদস্যতাঁর প্রশিক্ষণকালীন সময়ে মুখোমুখি হওয়া চরম চাপের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেন, “প্রতিদিন আমাকে ওজন মাপতে হতআর সর্বক্ষণ বিচার করা হত। এক পর্যায়ে অতিরিক্ত ওজন কমে যাওয়ায় আমি রাস্তায় জ্ঞান হারাই এবং আমাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়।

জরুরি চিকিৎসা হিসেবে স্যালাইন পেলেও ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয় কাটেনি তাঁরযার ফলে পরবর্তীতে তিনি আতঙ্কজনিত সমস্যা বা প্যানিক ডিজঅর্ডারে ভুগতে থাকেন।

তিনি আরও বলেনআইডলদের জন্য এক নিষ্ঠুর মানদণ্ড ছিল উচ্চতা থেকে ১২০ বাদ” সূত্রঅর্থাৎ সেন্টিমিটারে মাপা উচ্চতা থেকে ১২০ বিয়োগ করে সেই সংখ্যাক কিলোগ্রাম ওজন ধরে রাখতে হবে। এই হিসাব আমাদের জন্য নিয়মের মতো হয়ে গিয়েছিলআমরা কেবল সংখ্যার পিছনেই ছুটতাম,” বলেন সোয়ু।

অন্য এক মেয়ে গ্রুপ সিক্রেট-এর সদস্য জিয়ন হ্যো-সংযিনি অতিভোজন আর কঠোর উপবাসে ভুগেছেনতাঁর প্রায় ৫০ কিলোগ্রাম ওজনের সময়কার কাজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। তিনি বলেন, “তখন মনে হত আমি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারছি না।” আইডল-জীবনের ঐকান্তিক সৌন্দর্য বজায় রাখতে গিয়ে যে মানসিক চাপ অনুভূত হয়তা তিনি উল্লেখ করেন।

মামামুর হুয়াসাযিনি কে-পপ ইন্ডাস্ট্রিতে সৌন্দর্যের প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে নিজেকে তুলে ধরেছেনজানিয়েছেন তাঁর অভিষেকের সময় তিনি কী ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি বলেনতাঁর চেহারার কারণে ভক্তরা গ্রুপ থেকে তাঁকে বাদ দেওয়ার দাবিতে আবেদনে পর্যন্ত স্বাক্ষর করেছিলেন। তখন সৌন্দর্যের মানদণ্ড ছিল অত্যন্ত কঠোর। মনে হতআইডল হলে এসব যেন মানতেই হবে,” বলেন তিনি। আমি একবার গোপনে কালো তিলের কেক খেয়েছিলামআর এত অপরাধবোধ হয়েছিল যে বমি করে ফেলি। সেখান থেকেই অ্যানোরেক্সিয়া ও বিষণ্নতা তৈরি হয়।

২০১০ সালের জনপ্রিয় মেয়ে গ্রুপ কারার সদস্য হান সেয়ন বর্ণনা করেনতাঁদের হিট গান মিস্টার” এর প্রচারণার সময় কতটা চরম ডায়েটিং করেছিলেন। ওই গানের পরিবেশনায় সদস্যদের পরতে হত লো-রাই প্যান্ট আর ক্রপ টপ। তিনি বলেন, “মিস্টার-এর জন্য তখনকার সব কার্যক্রম চলাকালে আমি মাসের পর মাস পানি প্রায় খেতামই না। শেষ পর্যন্ত এতটাই শুকিয়ে গিয়েছিলাম যে অজ্ঞান হয়ে পড়ি।

পরবর্তীতে হান অজানা কারণে ত্বকের সমস্যায় ভুগেছেনযার চিকিৎসা পেতে সাত বছর সময় লেগেছে। অত্যধিক ওজন কমে যাওয়ার কারণে তিনি প্যাটুলাস ইউস্টেশিয়ান টিউব সিনড্রোমে আক্রান্ত হনযেখানে কানের স্বাভাবিক চাপ-নিয়ন্ত্রণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এমনকি ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকের পপ আইকন কিম ওয়ান-সন-ও এ থেকে রেহাই পাননি। তিনি জানিয়েছেনএক ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ৪-৫ কিলোগ্রাম ওজন কমে যায়যা পরে ১৫ বছর ধরে ধরে রেখেছিলেনকারণ তাঁর দুর্বল চেহারার জন্য প্রশংসা পেয়েছিলেন।

জাতীয় স্বাস্থ্য বীমা পরিষেবা গত জুলাইয়ে জানায়২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ২০ বছরের নিচে নারীদের মধ্যে অ্যানোরেক্সিয়া রোগের হার ৯৭.৫ শতাংশ বেড়ে গেছে।