০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

রঙিন নবাব খ্যাত প্রবীর মিত্রের চিরপ্রস্থান

  • Sarakhon Report
  • ০১:৩০:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫
  • 14

রেজাই রাব্বী

বাংলা সিনেমার বরেণ্য অভিনেতা প্রবীর মিত্র। অভিনয় করেছেন অসংখ্য চলচ্চিত্রে। প্রায় পাঁচ দশকের অভিনয় জীবন তার। ১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। তবে বেড়ে উঠেছেন পুরান ঢাকায়। ষাটের দশকে ঢাকা ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে খেলেছেন তিনি। একই সময় ফায়ার সার্ভিস এর হয়ে ফার্স্ট ডিভিশন হকিও খেলেছেন তিনি, এছাড়া কামাল স্পোর্টিং এর হয়ে সেকেন্ড ডিভিশন ফুটবল খেলেছেন তিনি। চাইলেই পেশাদার খেলোয়াড় হতে পারতেন অভিনেতা প্রবীর মিত্র কিন্তু হননি নাম লেখান লালকুঠি থিয়েটারে শুরু হয় তার নাট্যচর্চা। স্কুল জীবন থেকেই নাট্য চর্চায় যুক্ত হন প্রবীর মিত্র।

ওই সময়েই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাকঘর নাটকের প্রহরী চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এরপর তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে ১৯৬৯ সালে প্রয়াত পরিচালক এইচ আকবরের ‘জলছবি’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় যাত্রা শুরু তার। শুরুর দিকে তিনি নায়ক হিসাবে অভিনয় করলেও পরে ‘চরিত্রাভিনেতা’ হিসেবে দেখা গেছে তাকে। ৫ দশকের ক্যারিয়ারে তিনি কখনো বাবা, ভাই, ছেলে, বন্ধু, পুলিশ অফিসার, ধনী, গরিব, জমিদার, একতারা দোতারা হাতে শিল্পী, সন্তানহারা পাগল কিংবা হক মওলা জপতে থাকা চরিত্রে পর্দায় পারফরম্যান্স করেছেন।

অভিনয় করেছেন ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’, ‘বেদের মেয়ে জোসনা’‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘প্রতিহিংসা’, ‘মান সম্মান’, ‘চেনা মুখ’, ‘অপমান’, ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘আশীর্বাদ’, ‘ফেরারি বসন্ত’, ‘আঁখি মিলন’, ‘নাজমা’, ‘হাসু আমার হাসু’, ‘প্রিন্সেস টিনা খান’,‘ তালাক’, ‘মান সম্মান’, ‘রসের বাঈদানী’, ‘নয়নের আলো’, ‘সুরুজ মিঞা’, ‘দহন’, ‘মায়ের দাবি’,‘ দুলারি’, ‘অভাগী’, ‘নারী’, ‘শিরি ফরহাদ’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’, ‘চাষার মেয়ে’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলাহ’, ‘ঘর ভাঙা ঘর’, ‘বাল্যশিক্ষা’, ‘দুর্দান্ত দাপট’, ‘মৃত্যু কত ভয়ংকর’, ‘ভণ্ড বাবা’, ‘রানী কেন ডাকাত’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘বেদেনীর প্রেম’, আশা নিরাশা’, ‘ডাকু ও দরবেশ’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয় পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’, ‘বাঁধনহারা’, ‘মৌ চোর’, ‘সুখের সংসার’, ‘নয়া তুফান’, থেকে শুরু করে একালের ‘বলো না তুমি আমার’, ‘দেহরক্ষী’, ‘সুইটহার্ট’, ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’, ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’‘পুত্রবধূ’সহ চার শতাধিক চলচ্চিত্রে। সব ধরনের চরিত্রেই নিজেকে ফুটিয়ে তুলতেন সুনিপুণভাবে।

একাধিক সিনেমায় অভিনয় করলেও ১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা প্রবীর মিত্রের জীবনের মাইলফলক হয়ে থাকবে। এতে নাম ভূমিকায় তার অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন তিনি । ১৯৮২ সালে বড় ভালো লোক ছিল সিনেমায় শ্রেষ্ঠ পাঠ্য চরিত্র অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান প্রবীর মিত্র। চলচ্চিত্র অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তাকে দেয়া হয় আজীবন সম্মাননা। ভালোবেসে ঘর বাঁধতে গিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের নামকরা অভিনেতা প্রবীর মিত্র। হিন্দু পরিবারের জন্ম নেওয়া প্রবীর মিত্র বৈবাহিক সুত্রে হয়েছিলেন মুসলিম।

বেঁচে থাকা অবস্থায় এক সাক্ষাৎকারে নিজেই তার ধর্মান্তরিত হওয়ার ঘটনা বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি। ধর্ম গ্রহনের সময় প্রবীর মিত্র তার নাম বদলে হাসান ইমাম করেন। প্রবীর মিত্র’র সেই প্রিয়তমা স্ত্রীর নাম অজান্তা মিত্র। প্রবীর মিত্র’র স্ত্রী অজন্তা মারা যান ২০০০ সালে। এরপর লাইট ক্যামেরা অ্যাকশনের দুনিয়া থেকে চিরকালের জন্য বিদায় নিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী অভিনেতা প্রবীর মিত্র ওরফে হাসান ইমাম ।

৮১ বছর বয়সে চলে গেলেন বাংলা সিনেমার বরেণ্য এই অভিনেতা । দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগে ৫ জানুয়ারি রাত ১০টার পর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রয়াত হন এই অভিনেতা। এফডিসি ও চ্যানেল আইয়ে দুটি জানাজা শেষে ৬ জানুয়ারি আজিমপুর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন।

রঙিন নবাব খ্যাত প্রবীর মিত্রের চিরপ্রস্থান

০১:৩০:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫

রেজাই রাব্বী

বাংলা সিনেমার বরেণ্য অভিনেতা প্রবীর মিত্র। অভিনয় করেছেন অসংখ্য চলচ্চিত্রে। প্রায় পাঁচ দশকের অভিনয় জীবন তার। ১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। তবে বেড়ে উঠেছেন পুরান ঢাকায়। ষাটের দশকে ঢাকা ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে খেলেছেন তিনি। একই সময় ফায়ার সার্ভিস এর হয়ে ফার্স্ট ডিভিশন হকিও খেলেছেন তিনি, এছাড়া কামাল স্পোর্টিং এর হয়ে সেকেন্ড ডিভিশন ফুটবল খেলেছেন তিনি। চাইলেই পেশাদার খেলোয়াড় হতে পারতেন অভিনেতা প্রবীর মিত্র কিন্তু হননি নাম লেখান লালকুঠি থিয়েটারে শুরু হয় তার নাট্যচর্চা। স্কুল জীবন থেকেই নাট্য চর্চায় যুক্ত হন প্রবীর মিত্র।

ওই সময়েই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাকঘর নাটকের প্রহরী চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এরপর তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে ১৯৬৯ সালে প্রয়াত পরিচালক এইচ আকবরের ‘জলছবি’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় যাত্রা শুরু তার। শুরুর দিকে তিনি নায়ক হিসাবে অভিনয় করলেও পরে ‘চরিত্রাভিনেতা’ হিসেবে দেখা গেছে তাকে। ৫ দশকের ক্যারিয়ারে তিনি কখনো বাবা, ভাই, ছেলে, বন্ধু, পুলিশ অফিসার, ধনী, গরিব, জমিদার, একতারা দোতারা হাতে শিল্পী, সন্তানহারা পাগল কিংবা হক মওলা জপতে থাকা চরিত্রে পর্দায় পারফরম্যান্স করেছেন।

অভিনয় করেছেন ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’, ‘বেদের মেয়ে জোসনা’‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘প্রতিহিংসা’, ‘মান সম্মান’, ‘চেনা মুখ’, ‘অপমান’, ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘আশীর্বাদ’, ‘ফেরারি বসন্ত’, ‘আঁখি মিলন’, ‘নাজমা’, ‘হাসু আমার হাসু’, ‘প্রিন্সেস টিনা খান’,‘ তালাক’, ‘মান সম্মান’, ‘রসের বাঈদানী’, ‘নয়নের আলো’, ‘সুরুজ মিঞা’, ‘দহন’, ‘মায়ের দাবি’,‘ দুলারি’, ‘অভাগী’, ‘নারী’, ‘শিরি ফরহাদ’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’, ‘চাষার মেয়ে’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলাহ’, ‘ঘর ভাঙা ঘর’, ‘বাল্যশিক্ষা’, ‘দুর্দান্ত দাপট’, ‘মৃত্যু কত ভয়ংকর’, ‘ভণ্ড বাবা’, ‘রানী কেন ডাকাত’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘বেদেনীর প্রেম’, আশা নিরাশা’, ‘ডাকু ও দরবেশ’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয় পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’, ‘বাঁধনহারা’, ‘মৌ চোর’, ‘সুখের সংসার’, ‘নয়া তুফান’, থেকে শুরু করে একালের ‘বলো না তুমি আমার’, ‘দেহরক্ষী’, ‘সুইটহার্ট’, ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’, ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’‘পুত্রবধূ’সহ চার শতাধিক চলচ্চিত্রে। সব ধরনের চরিত্রেই নিজেকে ফুটিয়ে তুলতেন সুনিপুণভাবে।

একাধিক সিনেমায় অভিনয় করলেও ১৯৮৯ সালে মুক্তি পাওয়া রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা প্রবীর মিত্রের জীবনের মাইলফলক হয়ে থাকবে। এতে নাম ভূমিকায় তার অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন তিনি । ১৯৮২ সালে বড় ভালো লোক ছিল সিনেমায় শ্রেষ্ঠ পাঠ্য চরিত্র অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান প্রবীর মিত্র। চলচ্চিত্র অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তাকে দেয়া হয় আজীবন সম্মাননা। ভালোবেসে ঘর বাঁধতে গিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের নামকরা অভিনেতা প্রবীর মিত্র। হিন্দু পরিবারের জন্ম নেওয়া প্রবীর মিত্র বৈবাহিক সুত্রে হয়েছিলেন মুসলিম।

বেঁচে থাকা অবস্থায় এক সাক্ষাৎকারে নিজেই তার ধর্মান্তরিত হওয়ার ঘটনা বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি। ধর্ম গ্রহনের সময় প্রবীর মিত্র তার নাম বদলে হাসান ইমাম করেন। প্রবীর মিত্র’র সেই প্রিয়তমা স্ত্রীর নাম অজান্তা মিত্র। প্রবীর মিত্র’র স্ত্রী অজন্তা মারা যান ২০০০ সালে। এরপর লাইট ক্যামেরা অ্যাকশনের দুনিয়া থেকে চিরকালের জন্য বিদায় নিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী অভিনেতা প্রবীর মিত্র ওরফে হাসান ইমাম ।

৮১ বছর বয়সে চলে গেলেন বাংলা সিনেমার বরেণ্য এই অভিনেতা । দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগে ৫ জানুয়ারি রাত ১০টার পর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রয়াত হন এই অভিনেতা। এফডিসি ও চ্যানেল আইয়ে দুটি জানাজা শেষে ৬ জানুয়ারি আজিমপুর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন।