সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
১. কর সংগ্রহ কোভিডের সেই লকডাউনের দিনের পর্যায়ে চলে গেছে
২. মূল্যস্ফীতি থামার কোন লক্ষণ নেই
৩. জিডিপি’র হারের পূর্বাভাস আবারও কমিয়েছে বিশ্বব্যাংক
৫. ব্যবসায়ীদের মতে অর্থনীতিতে ফাটলের স্পষ্ট লক্ষণ
বাংলাদেশের জন্য এটি আর প্রশ্ন নয় যে অর্থনীতি কঠোর পতনের দিকে যাচ্ছে না কি স্থিতিশীল অবস্থায় স্থবির হয়ে থাকবে; বরং এখন প্রশ্ন হচ্ছে পতনের গভীরতা কতটা হতে পারে।
সঙ্কটটি অনুধাবন করতে হলে দেশের কর সংগ্রহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।
বর্তমান ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশের কর সংগ্রহ কার্যত নেতিবাচক ছিল। এটি কেবল মহামারি-পরবর্তী সময়ে প্রথমবার ঘটেছে, যখন বাজার বন্ধ ছিল, উৎপাদন স্থবির হয়ে পড়েছিল, সরবরাহ শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছিল এবং জীবনযাত্রা প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছিল।
অথচ সে দিনগুলো অনেক আগেই কেটে গেছে।
এরপরও, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে রাজস্ব বিভাগ ১,৫৬,৪৪২ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে, যা পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ০.৯৮ শতাংশ কম।
অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীদের মতে, রাজস্ব সংগ্রহের এই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি নিজেই কোনো রোগ নয়; বরং এটি একটি ধীরগামী অর্থনীতি এবং সামষ্টিক অর্থনীতির ফাটলের লক্ষণ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি থামার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না, বিনিময় হার অস্থির রয়েছে এবং উন্নয়ন ব্যয় চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে গেছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এই সবকিছু মিলে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়: অর্থনীতি ধীরগতিতে রয়েছে, এটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যার পেছনে রাজস্ব সংগ্রহসহ অনেক কারণ রয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব সংগ্রহে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যার সম্মুখীন, তবে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ফাটলগুলো এই অদক্ষতাকে আরও প্রকট করেছে।
গত ১৩ বছরে এনবিআর ধারাবাহিকভাবে তাদের রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে এনবিআরের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৮,০০০ কোটি টাকা বা ২৫ শতাংশ কম হয়েছে, যেখানে অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ৪,৮০,০০০ কোটি টাকা।
রাজস্ব সংগ্রহের এই কম প্রবৃদ্ধির পেছনে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করা হয়েছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণা সেলের একজন পরিচালক এর মতে, “রাজস্ব প্রবৃদ্ধি কম হওয়া বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত, যা এনবিআরের অদক্ষতাকে আরও ত্বরান্বিত করছে।”
উৎপাদন হ্রাস, আমদানি কমে যাওয়া, কর মওকুফ বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে তিনি যোগ করেন।
বিশ্বব্যাংক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ১.৭ শতাংশ কমিয়ে ৪ শতাংশ করেছে।
এনবিআরের রাজস্ব সংগ্রহে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো আমদানি হ্রাস।
২০২১ সালে মোট আমদানি ছিল ৯০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৭০ বিলিয়ন ডলারে।
উন্নয়ন বাজেটের বাস্তবায়ন কম হওয়া এবং ভোক্তাদের খরচ কমে যাওয়া রাজস্ব সংগ্রহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ী নেতারা কর কাঠামো সংস্কার এবং ট্যাক্স নেট বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন।
এই অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সঠিক নীতিমালা এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।