আর্কাদি গাইদার
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
‘কিসের?’ অন্যমনস্কভাবে আমি বললুম।
‘পঞ্চাশ কোপেক যোগাড়ের অনেক চেষ্টা করলাম। সিমন কোতিলকিন- ওই-যে আমাদেরই দলের নোক ওর কাছে চাইলাম। তা ও কইল ওর কাছে অত কোপেক হবে না।’
‘পঞ্চাশ কোপেক দিয়ে কী হবে?’
‘বা-রে, তুমি চাইলে না তখন?’ আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাল ও। ‘পঞ্চাশ কোপেক পেলি তুমি টিকিট কেটে সরমোভো যেতি পারবে। তারপর ওখেনে গিয়ে মামার কাছ থেকে পয়সা লিয়ে আমারে ফেরত দিও’খন। আরে, আমিও তো সরমোভোরই নোক।’ আবার একবার উধাও হয়ে গিয়ে এবার তাড়াতাড়ি ফিরল ও।
‘টিকিট ছাড়াই চলবে, বুইলে ইয়ার। আমার ওই ইস্তাহারগুলো লিয়ে সোজা ইস্টিমারে উঠে যাও দিকি। রাইফেল-কাঁধে মাল্লারে দেখছ তো, উই যে দাঁড়িয়ে আছে? ওর নাম, পাশকা সরকভ। ইস্টিমারে ওঠার পথে ওর দিকে তাকিয়ে কইবে, এই ইন্তেহারগুলো কমিটির কাছে লিয়ে যাচ্ছি। টিকিটবাবুর সঙ্গে কিন্তু একদম কথা কোয়ো না, কেমন? যাও, সিধে চলে যাও। মাল্লাটি আমাদেরই নোক। কিছু হলে ও-ই তোমারে সাহায্য করবে।’
‘আর তুমি?’
‘আমি যে করি হোক চলে যাব’খনি, ইয়ার। আমি তো এখেনকারই নোক, নাকি?’
আদ্যিকালের ইস্টিমারটা নোংরায় থিকথিক করছিল। ফলের খোসায়, তুষ-ভুসিতে আর আপেলের চোষা ছিবড়েয় চারিদিক একেবারে থইথই করছিল। অনেকক্ষণ ছেড়ে দিয়েছিল স্টিমারটা, কিন্তু তখনও আমার সঙ্গীর দেখা নেই।
এক জায়গায় স্তূপ-করে-রাখা নোঙরের মরচে-ধরা শেকলের ওপর বসার জায়গা করে নিলুম। আপেল, পেট্রোল আর মাছের গন্ধে-ভরা ঠান্ডা বাতাসে নিশ্বাস নিতে-নিতে স্টিমারের যাত্রীদের ভালো করে লক্ষ্য করতে লাগলুম। আমার পাশেই বসে ছিলেন একজন পাদ্রি – তিনি ডাঁকন না সন্ন্যাসী ঠিক ধরা যাচ্ছিল না খুব শান্তভাবে, যেন নিজেকে অদৃশ্য রাখতে পারলেই বাঁচেন এমনি ভাবে তিনি বসে ছিলেন। মাঝে মাঝে চোরা-চাউনিতে চারদিক ঠাহর করছিলেন আর তরমুজের ফালিতে কামড় বসিয়ে খেতে-খেতে বিচিগুলো সাবধানে নিজের হাতে রাখছিলেন।