আর্কাদি গাইদার
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
‘কারে খুজচে, দোস্ত?’
‘শয়তান জানে কারে!’
‘আহা, সরমোভোয় এসে একবার তল্লাসি করে! দেখার বড্ড সাধ।’
রক্ষী-বাহিনীর লোকেদের এ ব্যাপারে অনিচ্ছুক মনে হল। বিশ-প’চিশ জোড়া সন্দেহ-ভরা, সতর্ক চোখের তীক্ষন চাউনির সামনে তারা স্পষ্টতই অস্বস্তি বোধ করছিল।
সকলের মধ্যে একটা চাপা অসন্তোষের ভাব দেখেও না দেখার ভান করে বেসামরিক লোকটা উদ্ধত ভঙ্গিতে ভুরু তুলে সন্ন্যাসীর কাছে গিয়ে দাঁড়াল।
সন্ন্যাসীঠাকুর এতে আরও যেন নিজের মধ্যে গুটিয়ে গেলেন। তিনি দুই হাত ছড়িয়ে দিয়ে তাঁর গলায় চেইন-দিয়ে-ঝোলানো একটা ছোট ঘটি দেখিয়ে দিলেন। ওই ঘটিতে লেখা ছিল: ‘ধর্মভীরু খিস্টিয়ানগণ, জার্মানদের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত ভজনালয়গুলি পুনর্নিমাণের উদ্দেশ্যে মুক্তহস্তে দান করুন’।
বেসামরিক লোকটা একটা বিকৃত মুখভঙ্গি করে সন্ন্যাসীর কাছ থেকে সরে এল। তারপর বিশেষ কোনো উচ্চবাচ্য না করেই আমার সঙ্গীকে কাঁধ ধরে টেনে তুলল।
‘পরিচয়-পত্র?’
‘সে তো বড় হলি, তখন!’ ছেলেটা সংক্ষেপে জবাব দিল।
বেসামরিক লোকটার হাত থেকে নিজের কাঁধ দুটো ছাড়ানোর চেষ্টায় ছেলেটা দেহটাকে দুমড়ে-মুচড়ে তুলল। কিন্তু ওই করতে গিয়ে পা হড়কে পড়ে গেল আর সঙ্গে সঙ্গে জামার ভেতর থেকে একগোছা ইস্তাহার ছড়িয়ে পড়ল মাটিতে।
একটা ইস্তাহার কুড়িয়ে নিয়ে বেসামরিক তাড়াতাড়ি চোখ বুলিয়ে গেল। তারপর চাপা, ক্রুদ্ধ গলায় বললে:
‘পরিচয়-পত্র দেখাবার বেলা বাচ্চা ছেলে, কিন্তু প্রচার-ইস্তাহার বিলোবার বেলা বড়ই লায়েক, না? গ্রেপ্তার কর!’
কিন্তু বেসামরিক একাই যে প্রচারপত্র কুড়িয়ে নিয়ে পড়েছিল তা নয়। ছড়িয়ে-পড়া গোছাটা থেকে হাওয়ায় ডজনখানেক কি তারও বেশি ইস্তাহার ভিড়ে-ভরতি ডেকের এদিক-ওদিক ছিটিয়ে গিয়েছিল। নিস্পৃহ, হতভম্ব রক্ষী-বাহিনীর লোকজন আমার সঙ্গীর গায়ে হাত দেয়ার আগেই সারা ডেকটা যেন মৌচাকের গুনগুনানিতে ভরে উঠল।
‘আচ্ছা, নোকটা কর্নি’লভের খোঁজ করছে না কেন কও দেখি?’
‘সন্ন্যাসীর পরিচয়-পত্তর লিয়ে তো মাথা ঘামাও নি বাপু? বাচ্চাটারে ছেড়ে দাও না কেন?’
‘ভেবেচ কি বাপু, এটা শহর লয়, এ সরমোভো।’