০৫:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
তুরস্কের দাবি: আক্কুয়ু পারমাণবিক প্রকল্পে রাশিয়ার নতুন ৯ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৬) শাওমির ১৭ আল্ট্রা ‘লাইকা এডিশন’: স্মার্টফোনে ফিরছে ম্যানুয়াল জুম রিং একাত্তরেও উৎসবের রাজকীয় গ্ল্যামার, লাল শাড়িতে নতুন সংজ্ঞা রচনা রেখার ইউক্রেনের দাবি: রাশিয়ার ওরেনবুর্গে বড় গ্যাস প্রক্রিয়াজাত কারখানায় ড্রোন হামলা দীপু চন্দ্র দাস হত্যাসহ নির্যাতনের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে হিন্দু মহাজোটের মানববন্ধন শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে বাংলাদেশ, ঢাকাসহ সারাদেশে বেড়েছে শীতের দাপট জিয়ার কবর জিয়ারত করলেন তারেক রহমান গুলিস্তানের শপিং কমপ্লেক্সের ছাদে গুদামে আগুন তারেক রহমানের পক্ষে সাভারে শ্রদ্ধা জানাল বিএনপি প্রতিনিধিদল

রোমাঞ্চকর সময় (পর্ব -৫৬)

  • Sarakhon Report
  • ০৮:০০:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 88

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

জারের কাছে অমনধারা বিচার তো আমাদের দেশের নোক হামেশাই পেয়ে এসেছে, ও আমাদের গা-সহা হয়ে গিইছিল। কিন্তু এই মোসাহেবদের কাছে অমনধারা ব্যাভার কোন্ শালা আশা করেছিল, কও দেখি। জেনারেল আর অফিসারবাবুরা লাল ফিতে পরি প্যাখম মেলে বেড়াচ্ছে, দেখলি মনে হবে বাবুরা বুঝি বিপ্লবের পেয়ারের দোস্ত। এদিকে আমরা শালা একটু কিছু করলেই সটান একদম গারদবাস। সব্বদা আমাদের পেছনে তাড়া করা হচ্ছে, আমাদের হয়রান করা হচ্ছে। এ আমার একার নালিশ লয়। আমি আমার সকল কমরেডের কথা বলছি, বাড়তি দু-মাস আমি জেল খেটেছি সে কথা লয়। আমি যা বলছি, তা আপনাদের নালিশ, শ্রমিকভাইদের সকলের নালিশ।’

হঠাৎ কাশির দমক শুরু হয়ে গেল বক্তার। কিছুক্ষণ পর কাশি থামলে তিনি ফের শুরু করতে যাবেন, কিন্তু মুখ খোলামাত্র ফের সেই কাশি শুরু হল। বেশ কিছুক্ষণ তিনি দাঁড়িয়ে রইলেন ওইভাবে, মঞ্চের সি’ড়ির রেলিঙ চেপে ধরে কাশির দমকে কাঁপতে থাকলেন। তারপর মাথা নেড়ে নিচে নেমে পড়লেন।

ভিড়ের মধ্যে থেকে কে একজন চিৎকার করে রাগত গলায় বললে, ‘ওর জান বিলকুল খতম করে দিয়েচে শালারা!’

পাঁশুটে, মেঘেঢাকা আকাশ থেকে গাঁড়ো-গুড়ো তুষার ঝরতে শুরু করল। বছরের সেই প্রথম তুষারপাত। শুকনো, ঠান্ডা বাতাস গাছের শেষ পচা পাতাগুলো খসিয়ে নিল। আমার পাদুটো জমে যাচ্ছিল ঠান্ডায়। ভিড়ের বাইরে বেরিয়ে জোরে-জোরে হে’টে গা-টা গরম করতে ইচ্ছে হল। দুই কনুইয়ের গুতো দিয়ে পথ করে বাইরে আসার সময় পেছনের বক্তাদের আমি দেখতে পাচ্ছিলুম না। এমন সময় হঠাৎ আমার পরিচিত একটা উঁচু গলার আওয়াজ শুনে পেছন ফিরে মন্ডের দিকে তাকালুম। তুষারের গুঁড়োয় চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছিল। লোকে আমায় ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছিল। কে একজন আমার পা মাড়িয়ে যেন গুঁড়িয়ে দিল। তা সত্ত্বেও পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে ডিঙি মেরে যা দেখলুম তাতে আমার বিস্ময়ের আর আনন্দের পরিসীমা রইল না। দেখলুম, মঞ্চের ওপর দাঁড়কাকের সেই পরিচিত দাড়িভর্তি মুখখানা দেখা যাচ্ছে।

প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে প্রাণপণ কষ্ট করে ভিড় ঠেলে এগোতে লাগলুম। প্রতি মুহূর্তে ভয় হচ্ছিল, এই বুঝি দাঁড়কাক বক্তৃতা শেষ করে ভিড়ে মিশে যান। তাহলে হাজার চিৎকার করে ডাকলেও উনি শুনতে পাবেন না, আর ওঁকে ধরতেও পারব না। ওঁর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে আমি মাথার টুপিটা হাতে নিয়ে নাড়তে লাগলুম, কিন্তু তা ওঁর চোখে পড়ল বলে মনে হল না।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

তুরস্কের দাবি: আক্কুয়ু পারমাণবিক প্রকল্পে রাশিয়ার নতুন ৯ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন

রোমাঞ্চকর সময় (পর্ব -৫৬)

০৮:০০:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আর্কাদি গাইদার

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

জারের কাছে অমনধারা বিচার তো আমাদের দেশের নোক হামেশাই পেয়ে এসেছে, ও আমাদের গা-সহা হয়ে গিইছিল। কিন্তু এই মোসাহেবদের কাছে অমনধারা ব্যাভার কোন্ শালা আশা করেছিল, কও দেখি। জেনারেল আর অফিসারবাবুরা লাল ফিতে পরি প্যাখম মেলে বেড়াচ্ছে, দেখলি মনে হবে বাবুরা বুঝি বিপ্লবের পেয়ারের দোস্ত। এদিকে আমরা শালা একটু কিছু করলেই সটান একদম গারদবাস। সব্বদা আমাদের পেছনে তাড়া করা হচ্ছে, আমাদের হয়রান করা হচ্ছে। এ আমার একার নালিশ লয়। আমি আমার সকল কমরেডের কথা বলছি, বাড়তি দু-মাস আমি জেল খেটেছি সে কথা লয়। আমি যা বলছি, তা আপনাদের নালিশ, শ্রমিকভাইদের সকলের নালিশ।’

হঠাৎ কাশির দমক শুরু হয়ে গেল বক্তার। কিছুক্ষণ পর কাশি থামলে তিনি ফের শুরু করতে যাবেন, কিন্তু মুখ খোলামাত্র ফের সেই কাশি শুরু হল। বেশ কিছুক্ষণ তিনি দাঁড়িয়ে রইলেন ওইভাবে, মঞ্চের সি’ড়ির রেলিঙ চেপে ধরে কাশির দমকে কাঁপতে থাকলেন। তারপর মাথা নেড়ে নিচে নেমে পড়লেন।

ভিড়ের মধ্যে থেকে কে একজন চিৎকার করে রাগত গলায় বললে, ‘ওর জান বিলকুল খতম করে দিয়েচে শালারা!’

পাঁশুটে, মেঘেঢাকা আকাশ থেকে গাঁড়ো-গুড়ো তুষার ঝরতে শুরু করল। বছরের সেই প্রথম তুষারপাত। শুকনো, ঠান্ডা বাতাস গাছের শেষ পচা পাতাগুলো খসিয়ে নিল। আমার পাদুটো জমে যাচ্ছিল ঠান্ডায়। ভিড়ের বাইরে বেরিয়ে জোরে-জোরে হে’টে গা-টা গরম করতে ইচ্ছে হল। দুই কনুইয়ের গুতো দিয়ে পথ করে বাইরে আসার সময় পেছনের বক্তাদের আমি দেখতে পাচ্ছিলুম না। এমন সময় হঠাৎ আমার পরিচিত একটা উঁচু গলার আওয়াজ শুনে পেছন ফিরে মন্ডের দিকে তাকালুম। তুষারের গুঁড়োয় চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছিল। লোকে আমায় ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছিল। কে একজন আমার পা মাড়িয়ে যেন গুঁড়িয়ে দিল। তা সত্ত্বেও পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে ডিঙি মেরে যা দেখলুম তাতে আমার বিস্ময়ের আর আনন্দের পরিসীমা রইল না। দেখলুম, মঞ্চের ওপর দাঁড়কাকের সেই পরিচিত দাড়িভর্তি মুখখানা দেখা যাচ্ছে।

প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে প্রাণপণ কষ্ট করে ভিড় ঠেলে এগোতে লাগলুম। প্রতি মুহূর্তে ভয় হচ্ছিল, এই বুঝি দাঁড়কাক বক্তৃতা শেষ করে ভিড়ে মিশে যান। তাহলে হাজার চিৎকার করে ডাকলেও উনি শুনতে পাবেন না, আর ওঁকে ধরতেও পারব না। ওঁর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে আমি মাথার টুপিটা হাতে নিয়ে নাড়তে লাগলুম, কিন্তু তা ওঁর চোখে পড়ল বলে মনে হল না।