ম্যাকসিম গোর্কী
একটি চিঠি
মনে হয়, তুমি একটি অদ্ভুত প্রাণী, যেন পরিণত বয়সেই তুমি জন্মলাভ করেছিলে। তোমার অনেক চিন্তার মধ্যে এমন কিছু রয়েছে যা শিশুসুলভ, অপরিণত। কিন্তু জীবন সম্বন্ধে তুমি অনেক জানো-যার বেশি মানুষে জানতে চাইতে পারে না। এখন, তুমি আমায় একটা গল্প বলো।”.
একটা পাইন গাছের অনাবৃত শিকড়গুলির উপর তিনি আরাম ক’রে শুয়ে পড়লেন। দেখতে লাগলেন, কর্মচঞ্চল ধাবমান পিপীলিকাদের।
উত্তর অঞ্চল থেকে আসা কোনো মানুষের চোখে লতায়-পাতায় বৃক্ষেগুল্মে সমারোহমান দৃপ্ত দক্ষিণকে অনেকটা বিসদৃশ মনে হয়।
এখানে লিও টলস্টয়কে-এমন কি তাঁর নামটাও একটা আধ্যাত্মিক শক্তি প্রকাশ করে খর্বাকৃতি মনে হোলো। মাটির গভীরে সবল সঞ্চারিত মূলগুলি থেকে বহিরাগত জটায় গ্রন্থিময় কোনো বৃদ্ধ বৃক্ষ যেন তিনি, তাই ক্রিমিয়ার উচ্ছ্বসিত স্পর্ধিত সবুজের মধ্যে তাঁকে একই সময়ে অবান্তর অথচ যথাযথ মনে হোলো। মনে হোলো, তিনি অতি প্রাচীন একটি মানুষ, তাঁর চারিদিক্রে সমস্ত কিছুর উপর পরিপূর্ণ আধিপত্য তাঁর।
তিনি এক মহাস্থপতি, যদিও বহু শতাব্দীর পর স্বরচিত প্রাসাদে ফিরে এসেছেন। এই প্রাসাদে কী আছে, তার অনেক কিছুই আজ তাঁর মনে নেই। অনেক কিছুই তাঁর কাছে নূতন। এখানে যেমনটি ঠিক থাকা দরকার, তেমনিটি-ই আছে, অথচ সম্পূর্ণ-ও যেন তেমনিটি নেই। তাই অবিলম্বে তিনি সন্ধান নিতে চান, কেন তেমনিটি নেই, কোথায় ত্রুটি, কেন ত্রুটি।
পথে ঘাটে তিনি ঘুরে বেড়ান ব্যস্ত দ্রুত পা ফেলে। তিনি যেন কোনো দক্ষ পর্যটক, দেশের সন্ধানে বেরিয়েছেন। তাঁর দুটি তীক্ষ্ণ চক্ষু প্রতিটি জিনিষকে লক্ষ্য করছে, পরিমাপ করছে, পরীক্ষা করছে, তুলনা ক’রে দেখছে। সামান্যতম উপলখণ্ড, সামান্যতম চিন্ত। সেই দৃষ্টির কাছে আত্মগোপন ক’রে থাকতে পারতো না। তিনি তাঁর চারিদিকে বিক্ষিপ্ত ক’রে যাচ্ছেন অমর চিন্তার জীবন্ত বীজগুলি।
একবার তিনি সুলারকে বলেছিলেন, “লিওভুশকা, তুমি তোমার আত্মম্ভরিতার ফলে যা ভালো নয়, এমন কিছু পড়ো না। কিন্তু যা ভালো নয়, এমন কিছুও গকি পড়েন, কারণ তিনি নিজেকে বিশ্বাস করেন না। যা ভালো নয়, এমন অনেক কিছুই আমি লিখেছি।