০৮:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৫৯)

  • Sarakhon Report
  • ১২:০০:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 18

শশাঙ্ক মণ্ডল

র স

আদিবাসী জীবনে সীমাহীন দারিদ্র্য, রোগ মহামারী, বন্যা খরা দুর্ভিক্ষ তার নিত্য সাথী কিন্তু তা সত্বেও তার প্রাণে সুর জেগে ওঠে। চরম দুঃখ- দারিদ্র্যের মধ্যে গান তার নিত্য সঙ্গী। পূবর্তন বাসভূমি বিহারের সাথে সংযোগের অভাবে এবং প্রতিবেশী সমাজের মানুষগুলির পাশাপাশি থাকতে থাকতে গানের সুরের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাব পড়েছে তা লক্ষ করা যায়। সাঁওতালরা নতুন কিছু দেখলে তা সে গানের মাধ্যমে প্রকাশ করে। অতীত স্মৃতি গানের মাধ্যমে প্রকাশ করে এবং অতীতের সাথে বর্তমানের যোগসূত্র রচনা করে গানের মধ্য দিয়ে। কিন্তু সুন্দরবনের আদিবাসীদের অসুবিধা হল তার প্রতিবাসীরা সব সময় গান গাওয়া পছন্দ করে না। সেজন্য সে সব সময় গাইতে পারে না।

উৎসবে পার্বণে সামাজিক মেলামেশার অনুষ্ঠানে আর সন্ধ্যার হাড়িয়ার আসরে তার কণ্ঠ থেকে গান উঠে আসে। বিহারের তার আত্মীয়দের মতো এদের জীবনে গানের প্রাধান্য কম এবং আর একটি বড় কারণ অবিবাহিত যুবক যুবতীদের মেলামেশার জন্য বিহারের ধূমকুড়িয়ার (Bachelor’s Dormitory) অনুপস্থিতি তাদের জীবনের স্বভাবিক ছন্দে কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে। আদিবাসীরা পূবর্তন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সে জায়গায় হিন্দি বাংলা মিশিয়ে এক কৃত্রিম সর্দরী ভাষা তারা তৈরি করেছে এবং অনেকক্ষেত্রে বাংলায়ও গান গাইছে। আদিবাসীদের করম উৎসব ভাদ্রমাসে অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসব উপলক্ষে প্রিয়জনেরা মিলিত হয়; এই মিলনের অকাঙ্ক্ষা প্রকাশিত হচ্ছে এই গানে-

পড়িলো ভাদর মাস নাহিলে নাহি আর আশ রাতিদিন কেহ না দেখয়ে মোর পরাণ যায়। ভাদর চলিলো সইরে।।

করম পূজা উপলক্ষে ঝুমুর গানও গাওয়া হয়। করম গাছের ডাল পুঁতে তার চারিদিকে বেষ্টনার নাচও গান চলে। আদিবাসীদের অনেক ঝুমর গানে কীর্তনের সুর ভেসে ওঠে শুন ধনি মোর বাণী করি নিবেদন আমি কি ভুলিতে পারি থাকিতে জীবন। তুমি যে অবলা নারী ত্রিভুবনের ভূষণ আমি কি ভুলিতে পারি থাকিতে জীবন।

চাপান-

তোমার মত কালো কুঁদরি কত এ জগতে মেলে ভাত ছড়ালে কাগের অভাব ধনি হয় না এ সংসারে। আজি ধিকি ধিকি মনের আগুন ইত্যাদি।

টুসু প্রধানত শস্য উৎসব টুসুকে আদিবাসীরা ঘরের মেয়ে হিসাবে কল্পনা করে থাকে। আমাদের দেশে আরাধ্য দেবীকে মাতৃমূর্তির পাশাপাশি কন্যমূর্তিতে কল্পনা করা হয়। মেয়েদের অনুষ্ঠান হলেও ছেলেরা এতে অংশ নিয়ে থাকে; রাঢ় অঞ্চলে লৌকিক শস্য • উৎসব হিসাবে টুসু পরব পালিত হয়। নতুন ধান উঠেছে চাষীদের জীবনে কিছুটা শান্তি ও স্বস্তি এসেছে। এসময় সারা পৌষমাস জুড়ে এই উৎসব পালিত হয়। গানের মধ্য দিয়ে টুসুকে আহবান জানানো হয়। এই উৎসব উপলক্ষে ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা হয়। চালের পিটুলির সাহায্যে নানা রকম আলপনা দিয়ে ঘর সাজানো হয়। বাংলাদেশের অন্যত্র তুষ তুষালি ব্রতের সঙ্গে সুন্দরবনের আদিবাসীদের টুসু উৎসবের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

 

 

১৪ জুলাই অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৫৯)

১২:০০:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শশাঙ্ক মণ্ডল

র স

আদিবাসী জীবনে সীমাহীন দারিদ্র্য, রোগ মহামারী, বন্যা খরা দুর্ভিক্ষ তার নিত্য সাথী কিন্তু তা সত্বেও তার প্রাণে সুর জেগে ওঠে। চরম দুঃখ- দারিদ্র্যের মধ্যে গান তার নিত্য সঙ্গী। পূবর্তন বাসভূমি বিহারের সাথে সংযোগের অভাবে এবং প্রতিবেশী সমাজের মানুষগুলির পাশাপাশি থাকতে থাকতে গানের সুরের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাব পড়েছে তা লক্ষ করা যায়। সাঁওতালরা নতুন কিছু দেখলে তা সে গানের মাধ্যমে প্রকাশ করে। অতীত স্মৃতি গানের মাধ্যমে প্রকাশ করে এবং অতীতের সাথে বর্তমানের যোগসূত্র রচনা করে গানের মধ্য দিয়ে। কিন্তু সুন্দরবনের আদিবাসীদের অসুবিধা হল তার প্রতিবাসীরা সব সময় গান গাওয়া পছন্দ করে না। সেজন্য সে সব সময় গাইতে পারে না।

উৎসবে পার্বণে সামাজিক মেলামেশার অনুষ্ঠানে আর সন্ধ্যার হাড়িয়ার আসরে তার কণ্ঠ থেকে গান উঠে আসে। বিহারের তার আত্মীয়দের মতো এদের জীবনে গানের প্রাধান্য কম এবং আর একটি বড় কারণ অবিবাহিত যুবক যুবতীদের মেলামেশার জন্য বিহারের ধূমকুড়িয়ার (Bachelor’s Dormitory) অনুপস্থিতি তাদের জীবনের স্বভাবিক ছন্দে কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে। আদিবাসীরা পূবর্তন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সে জায়গায় হিন্দি বাংলা মিশিয়ে এক কৃত্রিম সর্দরী ভাষা তারা তৈরি করেছে এবং অনেকক্ষেত্রে বাংলায়ও গান গাইছে। আদিবাসীদের করম উৎসব ভাদ্রমাসে অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসব উপলক্ষে প্রিয়জনেরা মিলিত হয়; এই মিলনের অকাঙ্ক্ষা প্রকাশিত হচ্ছে এই গানে-

পড়িলো ভাদর মাস নাহিলে নাহি আর আশ রাতিদিন কেহ না দেখয়ে মোর পরাণ যায়। ভাদর চলিলো সইরে।।

করম পূজা উপলক্ষে ঝুমুর গানও গাওয়া হয়। করম গাছের ডাল পুঁতে তার চারিদিকে বেষ্টনার নাচও গান চলে। আদিবাসীদের অনেক ঝুমর গানে কীর্তনের সুর ভেসে ওঠে শুন ধনি মোর বাণী করি নিবেদন আমি কি ভুলিতে পারি থাকিতে জীবন। তুমি যে অবলা নারী ত্রিভুবনের ভূষণ আমি কি ভুলিতে পারি থাকিতে জীবন।

চাপান-

তোমার মত কালো কুঁদরি কত এ জগতে মেলে ভাত ছড়ালে কাগের অভাব ধনি হয় না এ সংসারে। আজি ধিকি ধিকি মনের আগুন ইত্যাদি।

টুসু প্রধানত শস্য উৎসব টুসুকে আদিবাসীরা ঘরের মেয়ে হিসাবে কল্পনা করে থাকে। আমাদের দেশে আরাধ্য দেবীকে মাতৃমূর্তির পাশাপাশি কন্যমূর্তিতে কল্পনা করা হয়। মেয়েদের অনুষ্ঠান হলেও ছেলেরা এতে অংশ নিয়ে থাকে; রাঢ় অঞ্চলে লৌকিক শস্য • উৎসব হিসাবে টুসু পরব পালিত হয়। নতুন ধান উঠেছে চাষীদের জীবনে কিছুটা শান্তি ও স্বস্তি এসেছে। এসময় সারা পৌষমাস জুড়ে এই উৎসব পালিত হয়। গানের মধ্য দিয়ে টুসুকে আহবান জানানো হয়। এই উৎসব উপলক্ষে ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা হয়। চালের পিটুলির সাহায্যে নানা রকম আলপনা দিয়ে ঘর সাজানো হয়। বাংলাদেশের অন্যত্র তুষ তুষালি ব্রতের সঙ্গে সুন্দরবনের আদিবাসীদের টুসু উৎসবের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।