বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ভারতে পাকিস্তানের ১৬টি ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ গ্লোবাল অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ভারত-পাক ব্যয়ের ফারাক ৯ গুন রণক্ষেত্রে (পর্ব-৩৭) ইশরাকের মেয়র পদের গেজেট নিয়ে বিতর্ক কেন? শপথ নিলে কতদিন পদে থাকতে পারবেন? মানবতার স্পর্শে পাঁচ বছরের পথচলা: ক্লাইমেট অলিম্পিয়াডে পুরস্কার ও ভবিষ্যতের ঘোষণা পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪২%, সর্বশেষ হামলায় নিহত ৯ তামিম ইকবালের সমর্থন: তাইজুল ইসলামের সঠিক মূল্যায়ন নয় কেন? চমেক শিক্ষার্থী আবিদ হত্যায় খালাস পাওয়া ১২ আসামিকে আত্মসমর্পণে হাইকোর্ট নির্দেশ কাশ্মীরে সক্রিয় প্রধান জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো জীবাশ্ম জ্বালানীভিত্তিক প্রকল্পে বিনিয়োগ না করার আহ্বান

মার্কো রুবিও’র ঝড়েরগতি এবং আইএস ও এনজিও চিহ্নিত করা

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ১২.০১ এএম

স্বদেশ রায়

৯ ফেব্রুয়ারি স্কট জেনিংস তাঁর শো তে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব মার্কো রুবিওকে এক প্রশ্নের শুরুতে বলেন, সরকারের শুরুর প্রথম দুই সপ্তাহ যেখানে একজন সরকারের নির্বাহীকে অফিসের টয়লেট কোথায় সেটা চিনতেই চলে যায়, সেখানে আপনি এই দুই সপ্তাহে এত দেশ সফর করলেন?

মার্কো রুবিও তার এই কাজের দ্রুততার উত্তর এর মাত্র কয়েকদিন আগে মেগিন কেলি’ শোতে দেয়া এক প্রশ্নের উত্তরে পরিস্কার করে বলেছিলেন,“আমার বস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন। একটা উদাহরণ দিই: এই সপ্তাহান্তে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হঠাৎ ভোর চারটায় একটি সিদ্ধান্ত নেন—আমাদের সাথে লিখিত চুক্তি থাকা সত্ত্বেও—তাঁদের নাগরিকদের ফেরত নেওয়ার জন্য যে বিমান পাঠানো হয়েছিল, তিনি সেটি ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। বিমানটা তখন অর্ধেক পথ পার হয়ে গেছে, অন্যটা অ্যাপেনা ছেড়েছে। সাধারণত মার্কিন প্রশাসনে এমন ঘটনায় “পলিসি অপশন” মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দুই-আড়াই বছর লেগে যেত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিদ্ধান্ত হয়ে গেল।

সিনেটে একধরনের ক্ষমতা আছে—তারা নীতি প্রণয়ন করে; কিন্তু নির্বাহী ক্ষমতা ভিন্ন। সমস্যাটা চিহ্নিত করে আইনসম্মত ক্ষমতার আওতায় দ্রুত সমাধান করা যায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো কেউ থাকলে ‘খুব বেশি বিতর্ক না করেই’ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়”।

বাস্তবে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহনের শুরু থেকে নেয়া পররাষ্ট্র বিষয়ক নির্বাহী সিদ্ধান্তগুলো এবং মার্কো রুবির দুই সপ্তাহের বেশ কয়েকটি বিদেশ সফরের ভেতর দিয়ে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি কোন গতিতে চলবে এবং তাঁর পদক্ষেপগুলো কেমন হবে তা অনেকখানি পরিস্কার হয়ে গেছে। এবং সেখানে ট্রাম্প কতটা কৌশলী হবেন তারও কিছু নমুনা পাওয়া গেছে।

যেমন ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে  মেক্সিকো ও কানাডার ওপর আমেরিকায় পণ্য রফতানিতে ২৫% শুল্ক আরোপ করলে, অনেকেই সমালোচনা করেছিলেন, এতে শুধু মেক্সিকো ও কানাডা নয় আমেরিকাও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কিন্তু ফরেন এফেয়ার্স ম্যাগাজিনে জিওফ্রে গার্টজ ও এমিলি কিলক্রিজ লিখেছেন, এই ২৫% শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প মূলত আমেরিকার আটোমোবাইল শিল্পকে রক্ষা করেছেন। কারণ, উত্তর আমেরিকায় ও কানাডাতে চীন বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির প্লান্ট তৈরি করেছে। এবং তারা যদি পূর্বের সুবিধা অনুযায়ী ওই গাড়ি রফতানির সুযোগ আমেরিকায় পায় তাহলে তা হবে আমেরিকার অটোমোবাইল শিল্পকে ধংসের পথ খুলে দেয়া।

বাস্তবে এই শুল্ক আরোপ ছাড়া যে আপাতাত চীনের দ্রুত বেড়ে ওঠা অর্থনৈতিক শক্তির বিপরীতে আমেরিকার অন্য কোন পথ নেই -তা একটু পরোক্ষভাবে হলেও স্কট জেনিংসকে দেয়া মার্কো রুবিও’র সাক্ষাতকার থেকে বোঝা যায়। মার্কো রুবিও বলেছেন, চীন বর্তমান বিশ্বের বড় অর্থনৈতিক শক্তি। এবং চীনরে সরকার যা করছে ওই জায়গায় যদি তিনি নিজে হতেন তিনিও একই কাজ করতেন। আর চীনের সঙ্গে আমেরিকার এই অর্থনৈতিক যুদ্ধ আগামী একশ বছর ধরে চলবে। তাই আমেরিকাকেও কূটনৈতিকভাবে এবং গুরুত্ব বিচারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এ কারণেই সময় নষ্ট না করে, অফিসের টয়লেট না চিনেই মার্কো রুবিও আগেই পানামা সফর করেছেন। কারণ, পানামা খাল যেমন আমেরিকার অর্থে তৈরি তেমনি এর সামরিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব দুটোই বেশি। এই খালের দুই প্রান্তের দুটো পোর্ট চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিয়েশিটিভ প্রকল্পের অধীনে চলে গিয়েছিলো। মার্কো রুবি’র পানামা সফর পানামাকে চীনের বেল্ট এন্ড রোড প্রকল্প থেকে বের করে এনেছে। আর এই কাজ সহজ করার জন্যেই ট্রাম্প আগেই পানামা সম্পর্কে প্রয়োজনে কঠিন সিদ্ধান্ত নেবেন এমনটাও জানিয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সফট পাওয়ার প্রয়োগের নামে যে অর্থ বিদেশে ব্যয় হয় তা ভিন্নভাবে প্রয়োগ করার বিষয়ে স্কট জেনিসের প্রশ্নের উত্তরে মার্কো রুবিও বলেছেন,  আমরা বিদেশী সাহায্য পুরোপুরি বন্ধ করছি না। তবে যুক্তরাষ্ট্র বছরে যে ৪০ থেকে ৬০ বিলিয়ন ডলার বিদেশী সাহায্য ফরেন এইড বা ইউএসএইডের মাধ্যমে দেয়া হয় একে ঘিরে অনেক এনজিও ও বিভিন্ন গোষ্টি গড়ে উঠেছে। এখানে তাদের স্বার্থ জড়িত। ওই গোষ্টিই বলছে, এটা বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু এটা আমেরিকার করদাতাদের অর্থ। তাই এটাকে পর্যালোচনা করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ বিরোধী এবং খারাপ কাজের সঙ্গে জড়িতদের অর্থ বন্ধ করতে হবে।

নিউইয়র্ক পোস্ট এর সম্পাদকীয় বোর্ড এর সম্পাদকীয় এবং অপিনিয়ন কলামে অবশ্য বলা হয়েছে, ইউএসএইড বন্ধ বা তাকে সীমাবদ্ধ করার এই কাজ বেশিভাগ মার্কিন জনগনের সমর্থন পাবে।তারা লাইন বিট্যুইন যা বলার চেষ্টা করেছে, আমেরিকার একটি গোষ্টি ও তাদের বিদেশী সহযোগীদের স্বার্থে এই যে বিপুল পরিমান মার্কিন অর্থ ব্যয় হয়- এটা মার্কিন সাধারণ জনগন পছন্দ করে না। তাই এই অর্থ বন্ধ যেমন একটি গোষ্টির তৎপরতা বন্ধ করবে তেমনি ট্রাম্পও একাজের ফলে মার্কিন বেশিভাগ জনগনের সমর্থন পাবে।

মার্কো রুবিও এই অর্থের সঙ্গে এনজিওদের স্বার্থন্বেষী কার্যক্রম জড়িত বলে উল্লেখ করেছেন -যা মূলত মার্কিন স্বার্থ বিরোধী ও অনান্য ক্ষেত্রে জনগনেরও বিরোধী। তেমনি এই অর্থে যে ভিন্ন ধরনের কাজ হয় তা রুবিও তার এই সাক্ষাতকার ও আগের দুটি সাক্ষাতকারে কিছুটা হলেও লাইন বিটুইন বুঝিয়ে দিয়েছেন।

এবং গোষ্টির স্বার্থে বিষয়টি কেমন হয় তা অনেকটা বোঝা যায় তুলসি গ্যার্ভাডের সিনেটের হেয়ারিং এ দেয়া লিখিত বক্তব্যে। সেখানে তিনি স্পষ্ট বলেন, হিলারি ক্লিন্টন, তার বক্তব্যে সিরিয়ার আইএসকে “রিবেল” বলে তাদের চরিত্র ঢাকা দিয়েছে। অথচ এই আইএস ৯/১১ ঘটিয়ে রাস্তায় উল্লাস প্রকাশ করেছিলো।

তাই বাস্তবে কোন গোষ্টির স্বার্থে নয়, আমেরিকার জনগন ও আমেরিকার স্বার্থে বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্তের পথেই দ্রুত, কার্যকর এবং সরাসরি পদক্ষেপের কূটনীতিতে পরিচালিত হয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি।

মার্কো রুবিও পরবর্তী সফরে যাবেন মিউনিখে। তারপরে মধ্যপ্রাচ্য-এ। তার এই দুই সফরে নিঃসন্দে আমেরিকার ইউরোপনীতি ওর মধ্যপ্রাচ্য নীতি পরিস্কার হবে।

এদিকে এশিয়া নীতির একটি অংশ মার্কো রুবিও দ্বায়িত্ব পাবার পরে প্রথম যে তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন, জাপান, অস্টেলিয়া ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী- সেখানে যেমন ইন্দো প্যাসিফিক নিয়ে মার্কিন অবস্থানের অনেক ঈংগিত পাওয়া যায়, তেমনি এশিয়া নীতিরও ঈংগিত ছিলো। আবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুই দেশের পারস্পারিক স্বার্থ ও রিজিওনাল বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই আলোচনার ২০ দিন পরে ভারতের সরকার প্রধান নরেন্দ্র মোদি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমন্ত্রনে , এই লেখা যখন লিখছি সে সময়ে তিনি ফ্রান্স থেকে আমেরিকার পথে। এই লেখা আপলোড হবার কয়েক ঘন্টা পরে দুই নেতা আলোচনায় বসেবন।

ভারত সম্পর্কে আমেরিকার বর্তমান প্রশাসনের বক্তব্য ইতোমধ্যে যা এসেছে তাও অনেকটা চীন সম্পর্কে মার্কো রুবিও যেমন বাস্তবতার ওপরে দাঁড়িয়ে বলছেন, ঠিকই তেমনিই।

চীনকে ট্রাম্প- রুবিও তাদের প্রতিদ্বন্ধি অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে মেনে নিয়েই শুরু করেছেন। সেখানে তারা অর্থনীতির পাশাপাশি চীনের ১৪০ কোটি জনশক্তির কথা উল্লেখ করেছেন।

অন্যদিকে ভারতকে তারা এশিয়ার অন্যতম বড় অর্থনৈতিক শক্তি, তাদেরও ১৪০ কোটির বেশি জনশক্তি আছে ও সর্বোপরি তাদের অর্থনৈতিক ও সামরিক মিত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

তাই স্বাভাবিকই এই দুই শীর্ষ নেতার বেঠকের পরে আমেরিকার ভারত নীতি শুধু নয়, দক্ষিন এশিয়া ও এশিয়া নীতিরও অনেকটা স্পষ্ট হবে।

তবে মোদির আমেরিকা সফরের দুই দিন আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিসকে নির্দেশ দিয়েছেন, ফরেন করাপ্ট জাস্টিস অ্যাক্ট( এফসিপিএ) প্রয়োগ স্থগিত করতে। ট্রাম্পের এ আদেশের ফলে স্বস্তি পাবেন ভারতের একটি বড় ও মোদি সরকারের ঘনিষ্ট ব্যবসায়ী গ্রুপ আদানী। কারণ, হিডেনবার্গ রিসার্সের দেয়া তথ্য অনুযায়ী আদানীর বিরুদ্ধে এফসিপি’র অধীনে আমেরিকার কোর্টে মামলা করা হয়েছিলো। যদিও কিছুদিন পরেই মিডিয়ায় হিডেনবার্গ রিসার্সের কর্মকান্ড নিয়ে অনেকটা বর্তমানে ইউএসএইডের কাজ নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে তেমনি প্রশ্ন উঠেছিলো। যাহোক, সে সব সত্যতা প্রকাশের আগে নি:সন্দেহে ট্রাম্প -মোদি আলোচনায় কোন প্রভাব না ফেললেও, আমেরিকার উদ্দেশ্যে যাত্রার আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জন্যে এটা ক্ষুদ্র হলেও যদি কোন ঈংগিত বলে কেউ মনে করেন তাও একেবারে সবাই ফেলে দেবে না।

লেখক: রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক, সম্পাদক সারাক্ষণ, The Present World.  

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024