সারাক্ষণ রিপোর্ট
শিক্ষার্থীদের দাবি ও বিশেষজ্ঞ কমিটির ভূমিকা
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা অনড় অবস্থানে রয়েছে। এই দাবি নিয়ে কাজ করছে বিশেষজ্ঞ কমিটি, যারা বর্তমানে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো পর্যালোচনা করছে। সাত কলেজের মধ্যে পাঁচটিতে মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম রয়েছে এবং দুটি মহিলা কলেজ। এগুলোর ঐতিহ্য সংরক্ষণ করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ফলে প্রায় ১,৪০০ শিক্ষক ও ১,৬৩,০০০ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে কমিটিকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের পটভূমি
২০০৭ সালে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। তবে এই পরিকল্পনাহীন সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষার্থীরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়, যেমন—সেশনজট, প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং নিয়মিত আন্দোলন। পরবর্তীতে কলেজগুলো আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে, যেখানে বিশেষজ্ঞ কমিটি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করছে।

বিশেষজ্ঞ কমিটি ও তাদের পরিকল্পনা
বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য গঠিত কমিটি ১২টি স্টেকহোল্ডার দলের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করছে। কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফয়েজ। এছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন:
- অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তার (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ)
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ
- ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান ও অধ্যাপক সাইদুর রহমান
তারা এপ্রিল পর্যন্ত তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা পেয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো ও অন্তর্বর্তীকালীন পরিকল্পনা
বিশেষজ্ঞ কমিটি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি করছে। যেহেতু আগামী শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কার্যক্রম চালু হবে, তাই অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
- বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ২০৩১ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই থাকবে।
- তাদের সার্টিফিকেশন ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন করা হতে পারে।

নামকরণ ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বেশ কয়েকটি নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত দুটি নাম হলো:
১. ঢাকা মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি
২. জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়
কমিটি কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দ্বিধান্বিত, যেমন:
- একক প্রতিষ্ঠানে একক বিভাগ রাখা হবে নাকি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভক্ত করা হবে?
- মহিলা কলেজগুলো কীভাবে একাডেমিক কাঠামোর সঙ্গে মানানসই করা হবে?
- একই শিক্ষক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঠ দেবেন নাকি আলাদা শিক্ষক নিয়োগ করা হবে?
- শিক্ষকদের বেতন কাঠামো কীভাবে নির্ধারণ করা হবে?
- মাধ্যমিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে যৌথ নাকি স্বতন্ত্র প্রশাসন গঠন করা হবে?

বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা এই রূপান্তরের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ স্বীকার করেছেন।
- অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান:
- সাত কলেজের ঐতিহ্য রক্ষা করাই প্রধান লক্ষ্য।
- মাধ্যমিক শিক্ষার সুনাম ধরে রাখতে হবে।
- বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর একটি দীর্ঘমেয়াদি এবং জটিল প্রক্রিয়া।
- বিভিন্ন পরস্পরবিরোধী ইস্যু সমাধানের চেষ্টা চলছে।
- অধ্যাপক মো. সাইদুর রহমান:
- সংকট বহুমুখী এবং এরকম কোনো পূর্ববর্তী মডেল দেশে নেই।
- একাডেমিক মান বজায় রেখে টেকসই মডেল গঠন করা দরকার।
- কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফয়েজ:
- বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ইউজিসি সম্পৃক্ত থাকবে।
- শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সতর্কভাবে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।
- একটি ইতিবাচক সমাধান নিশ্চিত করার লক্ষ্য রয়েছে।
উপসংহার
সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করতে বিশেষজ্ঞ কমিটি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। ঐতিহ্য, প্রশাসনিক কাঠামো, শিক্ষকদের ভূমিকা এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ—সবদিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি যথাযথ মনোযোগ দিয়ে কমিটি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, এবং আগামীতে একটি সমন্বিত ও কার্যকর সমাধান পাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
Sarakhon Report 



















