সারাক্ষণ ডেস্ক
১৭৮৮ সালে, “এবি” ছদ্মনামের এক ব্যক্তি নিউ ইয়র্কের ‘ইমপার্শিয়াল গেজেটিয়ার’ পত্রিকায় প্রথম ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন দেন। তিনি ৪০ বছরের নিচে, বিকৃতিহীন এবং আর্থিকভাবে স্বচ্ছল এক মহিলার সন্ধান করছিলেন। এটি ছিল সেই সময়ের জন্য অভিনব ধারণা, যা আধুনিক ডেটিং অ্যাপগুলোর শুরুর ইঙ্গিত দেয়। তবে এবি তার বিজ্ঞাপনের কোনো প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন কি না, তা অজানা রয়ে গেছে।
প্রায় ২০০ বছর পর, নিউ ইয়র্ক নতুন এক ডেটিং পদ্ধতির কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে—কম্পিউটার ম্যাচমেকিং।
কম্পিউটার-চালিত ডেটিং সেবার যাত্রা
১৯৬৫ সালে, আইবিএম কম্পিউটার প্রোগ্রামার বব রস এবং হিসাবরক্ষক লুইস অল্টফেস্ট নিউ ইয়র্কে ট্যাক্ট (Technical Automated Compatibility Testing) নামক পরিষেবা চালু করেন। এটি প্রথমে আপার ইস্ট সাইডে সীমাবদ্ধ থাকলেও দ্রুত পুরো শহরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। হাজার হাজার মানুষ এতে সাইন আপ করেন, নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আশায়।
ট্যাক্ট-এর কাজ করার পদ্ধতি
- প্রশ্নাবলী: অংশগ্রহণকারীদের ৫ ডলার ফি দিয়ে একটি বিশদ প্রশ্নাবলী পূরণ করতে হতো।
- ম্যাচিংয়ের ধাপ:
- সামাজিক-সাংস্কৃতিক কারণ
- মতামত ও মূল্যবোধ
- মনস্তাত্ত্বিক বিষয়
- কম্পিউটার প্রসেসিং: উত্তরগুলো বিশ্লেষণ করে, বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে সম্ভাব্য ম্যাচ তৈরি করা হতো।
যদিও সমলিঙ্গের ডেটিং তখন বিকল্প হিসেবে ছিল না, ট্যাক্ট মূলত ১৮-৪৫ বছর বয়সীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। রস বলেছিলেন, “মানুষ বিভিন্ন কারণে ট্যাক্টে যোগ দেয়—নতুন বন্ধু খোঁজা, ডেট পাওয়া, বা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়া।”
মনোবিজ্ঞানী ড. দিদাতোর বিশ্লেষণ
ট্যাক্টের ম্যাচমেকিং পদ্ধতিকে মনোবিজ্ঞানী ড. সালভাতোর ভি. দিদাতো অনুমোদন দেন। তিনি মনে করতেন, এ ধরনের পরিষেবার জন্য সমাজে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অন্যান্য পরিষেবার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে তিনি বলেছিলেন, “অনেক সার্ভিস বলে তারা অনেক ভেরিয়েবলের ওপর ভিত্তি করে ম্যাচ করে, কিন্তু আসলে তারা শুধু বয়স, লিঙ্গ, ধর্ম, এবং উচ্চতা বিবেচনা করে।”
ট্যাক্টের প্রশ্নাবলী আরও গভীর ছিল, যাতে ব্যবহারকারীদের নানান সামাজিক ও মানসিক বিষয়ে মতামত জানাতে হতো।
কম্পিউটার-ডেটিংয়ের অগ্রদূত: অপারেশন ম্যাচ
ট্যাক্ট ছিল নতুন প্রযুক্তির শীর্ষে, তবে এটি প্রথম কম্পিউটার-সাহায্যপ্রাপ্ত ডেটিং সেবা ছিল না। এর আগে হার্ভার্ড ছাত্রদের পরিচালিত ‘অপারেশন ম্যাচ’ কার্যক্রম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ট্যাক্ট গড়ে ওঠে।
১৯৬৫ সালে, কম্পিউটার তখনও ব্যয়বহুল ছিল। অপারেশন ম্যাচের উদ্যোক্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার প্রতি ঘণ্টায় ১০০ ডলারে ভাড়া নিতেন। এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং হাজার হাজার ছাত্র এতে অংশ নিতেন।
একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা জেফ টার পরে বলেছিলেন, “তখন মনে হতো, কম্পিউটার ঈশ্বরের মতো—সব জানে!” কাকতালীয়ভাবে, জেফ টারের মেয়ে পরে ম্যাচ.কম-এর প্রতিষ্ঠাতাদের একজনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, যা ইন্টারনেট যুগের অন্যতম প্রথম ডেটিং সাইট।
কম্পিউটার ম্যাচমেকিং ও সমাজের পরিবর্তন
সেবার খরচ ও জনপ্রিয়তা
ট্যাক্ট চার মাসের মধ্যে ৪ থেকে ৩০টি সম্ভাব্য ডেটের সুযোগ দিতে ৫ ডলার ফি নিত।
সামাজিক প্রেক্ষাপট
১৯৬০-এর দশক ছিল সামাজিক বিপ্লবের যুগ।
- নাগরিক অধিকার আন্দোলন
- দ্বিতীয় তরঙ্গ নারীবাদ আন্দোলন
- প্রযুক্তিগত উন্নয়ন
এই পরিবর্তনের মধ্যে কম্পিউটার ভিত্তিক ডেটিং প্রযুক্তি আধুনিক সমাজের রোমান্স খোঁজার ধরন বদলে দেয়। ভাগ্যের উপর নির্ভর করার পরিবর্তে, অ্যালগরিদম-নির্ভর সম্পর্ক খোঁজা শুরু হয়।