সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
১। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি নীতি-সহায়তা কমিটি গঠন করেছে, যা অনিচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের চিহ্নিত করে পুনঃতফসিলের সুপারিশ করবে। তবে, অনেক ব্যাংক আর্থিক সংকট ও পূর্বের খারাপ অভিজ্ঞতার কারণে এতে অনীহা প্রকাশ করছে।
২। কমিটি ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত ও ফিলিপাইনের মডেল বিশ্লেষণ করবে, তবে ব্যাংকগুলোর ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করা হবে না। কিছু ব্যাংক তহবিল সংকটের কারণে পুনঃতফসিল দিতে পারছে না।
৩। শিল্প খাতের টিকে থাকা এবং কর্মসংস্থান রক্ষার স্বার্থে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাগুলোকে সহায়তা দেওয়া উচিত বলে কমিটি মত প্রকাশ করেছে। তবে, যারা ইতোমধ্যে তিনবার পুনঃতফসিলের সুযোগ পেয়েছে, তারা নতুন করে আর সুযোগ পাবে না।
ঋণ খেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিল করার বিষয়ে ব্যাংকগুলোর অনীহা কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি বেইলআউট নীতি-সহায়তা কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি শীঘ্রই সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে।
ব্যাংকগুলোর আপত্তি ও আর্থিক সংকট
কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক ইতোমধ্যেই বিপুল পরিমাণ অ-পরিশোধিত ঋণ (NPL) এবং আর্থিক সংকটে ভুগছে। তারা মনে করে, বর্তমান নিয়মকানুন যথেষ্ট এবং সেগুলো পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।
কমিটির ভূমিকা ও কার্যক্রম
বাংলাদেশ ব্যাংক ‘বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা নীতি সহায়তা নির্বাচন কমিটি’ গঠন করেছে।
- মিটিং: ফেব্রুয়ারিতে ১৫টি আন্তর্জাতিক ও জাতীয় বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে।
- উদ্দেশ্য: অনিচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের চিহ্নিত করা, যাদের ব্যবসা কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ডলারের ঘাটতি, এবং ২০২৪ সালের গণ-আন্দোলনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঋণ পুনঃতফসিলের শর্ত ও চ্যালেঞ্জ
- কাদের জন্য: যাদের বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণ রয়েছে।
- প্রক্রিয়া: ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা দেবে, যা কমিটি যাচাই-বাছাই করে পুনঃতফসিলের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ করবে।
- চ্যালেঞ্জ:
- অনেক ব্যাংক আর্থিক সংকট এবং পূর্বের খারাপ অভিজ্ঞতার কারণে নতুন করে ঋণ পুনঃতফসিল করতে চাচ্ছে না।
- কমিটি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরও উপস্থিত থাকবেন।
আন্তর্জাতিক মডেল বিশ্লেষণ ও ব্যাংকের উদ্বেগ
কমিটি ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, এবং ফিলিপাইনের আন্তর্জাতিক মডেলগুলো বিশ্লেষণ করবে এবং তার ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোর জন্য সুপারিশ করবে।
- সতর্কতা: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনুশীলনের বাইরে গিয়ে ব্যাংকগুলোর উপর চাপ প্রয়োগ করা হবে না।
- উদ্বেগ: কিছু ব্যাংক পূর্বের খারাপ অভিজ্ঞতার কারণে নতুন করে পুনঃতফসিলের সুযোগ দিতে চাচ্ছে না।
শিল্প খাত ও কর্মসংস্থান রক্ষার উদ্যোগ
কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, “অনেক ব্যবসা যা শিল্প খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, তারা যদি অনিচ্ছাকৃত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তাদের পুনরুদ্ধারে সহায়তা দেওয়া উচিত।”
ব্যবসায়ীদের আবেদন ও পুনঃতফসিলের সীমাবদ্ধতা
- আবেদন প্রক্রিয়া: অনেক ব্যবসা পুনঃতফসিলের জন্য আবেদন করেছে, তবে কমিটি তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
- সীমাবদ্ধতা: যারা ইতোমধ্যেই তিনবার পুনঃতফসিলের সুযোগ পেয়েছে, তারা নতুন করে আর কোনো সুযোগ পাবে না।
বিদ্যমান নিয়ম-কানুন পরিবর্তনের বিষয়ে মতামত
- নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক সরকারি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা: বিদ্যমান নিয়ম-কানুন পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যেই অনেক নিয়ম শিথিল করেছে।
- বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তার মতামত: তহবিল সংকট এবং অ-পরিশোধিত ঋণের চাপের কারণে নতুন করে পুনঃতফসিল সুবিধা দিতে পারছে না।
এফবিসিসিআই এর দাবিতে বিশেষ নিয়ন্ত্রক পদক্ষেপ
বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই জানিয়েছে, মহামারি এবং অন্যান্য বৈশ্বিক সংকটের কারণে অনেক ব্যবসা উৎপাদন কমাতে বা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল, যার ফলে তারা ঋণ খেলাপি হয়েছে। এফবিসিসিআই-এর প্রতিনিধিদল জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে এই ধরনের সহায়তার দাবি জানায়।
উপসংহার
ব্যাংকগুলোর অনীহা এবং আর্থিক সংকটের মধ্যে ঋণ পুনঃতফসিল নিয়ে জটিলতা কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গঠিত কমিটি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক করবে। আন্তর্জাতিক মডেলের উপর ভিত্তি করে নীতি সহায়তা প্রদান করা হলেও ব্যাংকগুলোর উপর কোনো চাপ প্রয়োগ করা হবে না। শিল্প খাতের উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান রক্ষার লক্ষ্যে এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।