০২:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

সিঙ্গারের নতুন কারখানা আশার আলো, ২৪ এ লোকসান ৪৯০ মিলিয়ন টাকা

  • Sarakhon Report
  • ১০:০০:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 15

সারাক্ষণ রিপোর্ট

বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু

সিঙ্গার বাংলাদেশ তাদের নতুন গৃহস্থালী পণ্য উৎপাদন কারখানায় বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে, যা দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা) সোমবার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত এই কারখানার কার্যক্রমের অনুমোদন দিয়েছে।

স্থানীয় উৎপাদনে বাড়তি সুবিধা

প্রায় ১,৩৫,০০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই নতুন কারখানায় রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, ওয়াশিং মেশিন, এয়ার কন্ডিশনার এবং অন্যান্য গৃহস্থালী পণ্য উৎপাদন করা হবে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এই কারখানার মাধ্যমে ৯০ শতাংশেরও বেশি পণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হবে, যা বাংলাদেশের বাজারকে লক্ষ্য করে এবং মধ্য থেকে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশকে ভোক্তা পণ্যগুলির আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলবে।

সাভারের কারখানা বন্ধনতুন কারখানায় পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন

বর্তমানে সাভারের হেমায়েতপুরে অবস্থিত সিঙ্গারের কারখানায় ৫২ শতাংশ পণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। নতুন কারখানা পুরোপুরি চালু হওয়ার পর সাভারের কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে।

উৎপাদন ক্ষমতা ও বাজারে প্রভাব

প্রাথমিকভাবে এই নতুন কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১.৫ মিলিয়ন ইউনিট রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, ওয়াশিং মেশিন, এয়ার কন্ডিশনার এবং অন্যান্য গৃহস্থালী পণ্য। এতে সিঙ্গারের বাজারে অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।

মুনাফা ও কর সুবিধা

স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে সিঙ্গারের মুনাফার পরিমাণ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইবিএল সিকিউরিটিজের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, স্থানীয় উৎপাদনের কারণে সিঙ্গার কর ছাড়ের সুবিধাও পাবে।

বাজারে অবস্থান

সিঙ্গার বাংলাদেশ দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোক্তা পণ্য খুচরা বিক্রেতা, যার ৪৬৩টি নিজস্ব খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র এবং হাজারেরও বেশি ডিলার শপ রয়েছে।

প্রতিযোগিতায় পেছনের সারিতেপুনরুদ্ধারে বিনিয়োগ

১৯৭৯ সালে সেলাই মেশিন দিয়ে শুরু করা সিঙ্গার ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের গৃহস্থালী পণ্য এবং টেলিভিশন মার্কেটে সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ডে পরিণত হয়। তবে ২০১০ সালের পর থেকে স্থানীয় প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে, বিশেষত ওয়ালটনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণে।

বিনিয়োগ ও আঞ্চলিক প্রসার

২০১৯ সালে তুরস্কের প্রতিষ্ঠান বেকো সিঙ্গারের ৫৭ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করে। এরপর থেকে বেকো সিঙ্গার বাংলাদেশে $১৪৬ মিলিয়ন বিনিয়োগ করেছে, যার মধ্যে এই অত্যাধুনিক কারখানার বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত।

নতুন কারখানার মাধ্যমে বাজারে শক্ত অবস্থান

কোচ হোল্ডিংয়ের ভোক্তা পণ্য বিভাগের কর্মকর্তারা কারখানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, “এই নতুন কারখানা শুধু সিঙ্গারের উৎপাদন ক্ষমতাই বাড়াবে না বরং বাজারে তাদের অবস্থানও মজবুত করবে।”

আঞ্চলিক কৌশল ও রপ্তানি পরিকল্পনা

সিঙ্গারের ম্যানেজমেন্ট কর্মকর্তা জানান, “বাংলাদেশকে ভোক্তা পণ্য শিল্পের কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে আমরা বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছি। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানির পরিকল্পনাও রয়েছে, যা আঞ্চলিক বাজারে সিঙ্গারের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে।”

আর্থিক অবস্থা

২০২৪ সালে সিঙ্গার বাংলাদেশ ৪৯০ মিলিয়ন টাকা লোকসান করে, যার প্রধান কারণ ছিল ঋণের খরচ বৃদ্ধি। তবে ২০২৩ সালে পণ্যের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে খরচের কিছুটা ভারসাম্য রক্ষা করে ৬১৫ শতাংশ মুনাফা বৃদ্ধি পেয়ে ৫২২ মিলিয়ন টাকায় পৌঁছায়।

বাজার প্রতিযোগিতা

বর্তমানে সিঙ্গার ওয়ালটনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় রয়েছে, যেখানে সিঙ্গারের রেফ্রিজারেটর মার্কেটে ১২ শতাংশ এবং টেলিভিশন মার্কেটে ১১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

সিঙ্গারের নতুন কারখানা আশার আলো, ২৪ এ লোকসান ৪৯০ মিলিয়ন টাকা

১০:০০:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সারাক্ষণ রিপোর্ট

বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু

সিঙ্গার বাংলাদেশ তাদের নতুন গৃহস্থালী পণ্য উৎপাদন কারখানায় বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে, যা দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা) সোমবার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত এই কারখানার কার্যক্রমের অনুমোদন দিয়েছে।

স্থানীয় উৎপাদনে বাড়তি সুবিধা

প্রায় ১,৩৫,০০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই নতুন কারখানায় রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, ওয়াশিং মেশিন, এয়ার কন্ডিশনার এবং অন্যান্য গৃহস্থালী পণ্য উৎপাদন করা হবে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এই কারখানার মাধ্যমে ৯০ শতাংশেরও বেশি পণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হবে, যা বাংলাদেশের বাজারকে লক্ষ্য করে এবং মধ্য থেকে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশকে ভোক্তা পণ্যগুলির আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলবে।

সাভারের কারখানা বন্ধনতুন কারখানায় পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন

বর্তমানে সাভারের হেমায়েতপুরে অবস্থিত সিঙ্গারের কারখানায় ৫২ শতাংশ পণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। নতুন কারখানা পুরোপুরি চালু হওয়ার পর সাভারের কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে।

উৎপাদন ক্ষমতা ও বাজারে প্রভাব

প্রাথমিকভাবে এই নতুন কারখানার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ১.৫ মিলিয়ন ইউনিট রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, ওয়াশিং মেশিন, এয়ার কন্ডিশনার এবং অন্যান্য গৃহস্থালী পণ্য। এতে সিঙ্গারের বাজারে অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।

মুনাফা ও কর সুবিধা

স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে সিঙ্গারের মুনাফার পরিমাণ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইবিএল সিকিউরিটিজের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, স্থানীয় উৎপাদনের কারণে সিঙ্গার কর ছাড়ের সুবিধাও পাবে।

বাজারে অবস্থান

সিঙ্গার বাংলাদেশ দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোক্তা পণ্য খুচরা বিক্রেতা, যার ৪৬৩টি নিজস্ব খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র এবং হাজারেরও বেশি ডিলার শপ রয়েছে।

প্রতিযোগিতায় পেছনের সারিতেপুনরুদ্ধারে বিনিয়োগ

১৯৭৯ সালে সেলাই মেশিন দিয়ে শুরু করা সিঙ্গার ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশের গৃহস্থালী পণ্য এবং টেলিভিশন মার্কেটে সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ডে পরিণত হয়। তবে ২০১০ সালের পর থেকে স্থানীয় প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে, বিশেষত ওয়ালটনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণে।

বিনিয়োগ ও আঞ্চলিক প্রসার

২০১৯ সালে তুরস্কের প্রতিষ্ঠান বেকো সিঙ্গারের ৫৭ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করে। এরপর থেকে বেকো সিঙ্গার বাংলাদেশে $১৪৬ মিলিয়ন বিনিয়োগ করেছে, যার মধ্যে এই অত্যাধুনিক কারখানার বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত।

নতুন কারখানার মাধ্যমে বাজারে শক্ত অবস্থান

কোচ হোল্ডিংয়ের ভোক্তা পণ্য বিভাগের কর্মকর্তারা কারখানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, “এই নতুন কারখানা শুধু সিঙ্গারের উৎপাদন ক্ষমতাই বাড়াবে না বরং বাজারে তাদের অবস্থানও মজবুত করবে।”

আঞ্চলিক কৌশল ও রপ্তানি পরিকল্পনা

সিঙ্গারের ম্যানেজমেন্ট কর্মকর্তা জানান, “বাংলাদেশকে ভোক্তা পণ্য শিল্পের কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে আমরা বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছি। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানির পরিকল্পনাও রয়েছে, যা আঞ্চলিক বাজারে সিঙ্গারের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে।”

আর্থিক অবস্থা

২০২৪ সালে সিঙ্গার বাংলাদেশ ৪৯০ মিলিয়ন টাকা লোকসান করে, যার প্রধান কারণ ছিল ঋণের খরচ বৃদ্ধি। তবে ২০২৩ সালে পণ্যের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে খরচের কিছুটা ভারসাম্য রক্ষা করে ৬১৫ শতাংশ মুনাফা বৃদ্ধি পেয়ে ৫২২ মিলিয়ন টাকায় পৌঁছায়।

বাজার প্রতিযোগিতা

বর্তমানে সিঙ্গার ওয়ালটনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় রয়েছে, যেখানে সিঙ্গারের রেফ্রিজারেটর মার্কেটে ১২ শতাংশ এবং টেলিভিশন মার্কেটে ১১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।