সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- ভারত সরকার “স্লট বুকিং চার্জ” চালু করায় পাথর আমদানি কমে গেছে
- পাথর আমদানি কমে যাওয়ায় বন্দরের রাজস্ব আয় কমে গেছে এবং শত শত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন
- ভারতীয় পাথরের দাম বেশি হওয়ায় নির্মাণ ব্যয় বেড়ে গেছে, যা দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে
- এই বন্দরটি মূলত ভুটানের পাথর আমদানির ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু বর্তমানে ভুটান থেকে পাথর আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে
বাংলাদেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা, যা ভারত, নেপাল, ভূটান এবং বাংলাদেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে, বর্তমানে তীব্র বাণিজ্য সংকটে পড়েছে। প্রধানত পাথর আমদানির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা এবং ভারতীয় শুল্ক নীতির পরিবর্তনের কারণে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
আমদানি হ্রাসে বিপর্যস্ত বন্দর
ভূটানের পাথর সরবরাহ বন্ধ এবং ভারতের আমদানি হ্রাস পাওয়ায় বন্দরের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। ফলে সরকারের রাজস্ব আয় কমে গেছে এবং শত শত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন, যা হাজারো মানুষের জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
পাথরের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা
কখনো এটি বহুমুখী বাণিজ্যের কেন্দ্র ছিল, কিন্তু সময়ের সাথে এটি ভূটানের পাথরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ভারতের কর্তৃপক্ষ “স্লট বুকিং চার্জ” চালু করায় আমদানি ব্যাহত হয়েছে, যা বন্দরের দুর্বলতা স্পষ্ট করেছে।
ভারতীয় শুল্ক নীতির প্রভাব
ভূটানের মানসম্পন্ন ও শুল্কমুক্ত পাথর জানুয়ারি থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে, কারণ পশ্চিমবঙ্গ কর্তৃপক্ষ প্রতি ট্রাকে ৩,০০০–৫,০০০ টাকা স্লট বুকিং চার্জ আরোপ করেছে।
বহু আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেও ভারতের নতুন নীতির কারণে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে নিম্নমানের ও ব্যয়বহুল ভারতীয় পাথর আমদানি করছেন।
রাজস্ব হ্রাস ও শ্রমিকদের দুর্দশা
বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, আগে প্রতিদিন ৩০০–৪০০টি ট্রাক পাথর আনত, এখন তা নেমে এসেছে ৬০–৭০টিতে।
ফলে জানুয়ারিতে বন্দরের রাজস্ব কমে ৯১ কোটি টাকা হয়েছে, যা আগের তুলনায় অনেক কম।
নির্মাণ খাতে প্রভাব
ভারতীয় পাথরের দাম প্রতি টনে ৩–৪ ডলার বেশি, যা নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে এবং দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
শ্রমিকদের দুর্দশা
এই সংকটের সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী বন্দরের ৫০০-এরও বেশি শ্রমিক, ট্রাকচালক ও খালাসী।
বাংলাবান্ধা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আখতারুল ইসলাম বলেন,
“আমাদের শ্রমিকরা বেকার বসে আছেন, তাদের জীবিকা হুমকির মুখে। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া জরুরি।”
ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টদের নেতা নাজির হোসেন জানান,
“ভূটানের পাথর ছাড়া বন্দরের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়েছে।”
বাণিজ্যের বৈচিত্র্যকরণের আহ্বান
অনেকেই বন্দরের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য বাণিজ্যের বহুমুখীকরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাবান্ধা ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন,
“বর্তমান বাণিজ্য পরিমাণ টেকসই নয়। অবিলম্বে নীতিগত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।”
ভবিষ্যৎ
এই সংকট দেখিয়ে দিচ্ছে যে একটি নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিকর হতে পারে।