সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক গভীর হচ্ছে
- ভারতের বাণিজ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ তুলা ও খাদ্যশস্য বেশি আমদানি করে
- সীমান্তবর্তী এলাকার আমদানিকারকদের মধ্যে অনেকেই ভিসা না পাওয়ায় বাণিজ্য ঝুঁকিতে পড়ছে
- ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (এপ্রিল-জানুয়ারি) ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য ৯৩৯ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারতের প্রতি কঠোর অবস্থানের কথা বারবার উঠে এলেও বাস্তবে ভারত থেকে পণ্য আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিশেষ করে চলতি বছরের জানুয়ারিতে আমদানি বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে সতের শতাংশের বেশি । পরিসংখ্যান বলছে, দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা এখনো বহাল আছে এবং তা অস্বীকার করা সহজ নয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব ও ভারতবিরোধী অবস্থান
- ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়।
- ওই সময় থেকেই পররাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সরকার সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা বলে আসছেন।
- নাগরিক পর্যায়েও ভারত থেকে পণ্য আমদানি কমানোর দাবি জোরালো হয়েছে।
তার পরও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে বাংলাদেশের নির্ভরতা আরও বেড়েছে।
আমদানিতে ভারতের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধির চিত্র
- ভারতীয় অর্থবছর ধরা হয় এপ্রিল থেকে মার্চ।
- ২০২৪-২৫ ভারতীয় অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (এপ্রিল-জানুয়ারি) ভারতের বৈশ্বিক রফতানির প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে রফতানি বেড়েছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
- শুধু জানুয়ারিতে বৈশ্বিক রফতানি ২ দশমিক ৪১ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে পণ্য রফতানি (অর্থাৎ বাংলাদেশের আমদানি) বেড়েছে ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ।
অভ্যুত্থানের পর ব্যবসা ও আমদানিতে প্রভাব
- শেখ হাসিনার পতনের পর জুলাই-আগস্টে দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বাণিজ্যে প্রভাব ফেলে।
- একপর্যায়ে তিন দিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাণিজ্য বন্ধ ছিল।
- আগস্টে ভারত থেকে আমদানি কমে ১৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
তবে পরবর্তীতে পেঁয়াজ, ডিম ও কাঁচামরিচের সংকট সামলাতে বিপুল পরিমাণে এ পণ্যগুলো আমদানি শুরু হয়, যার ফলে ভারতের ওপর নির্ভরতা আবার বৃদ্ধি পায়।
ভারত থেকে আমদানি ও রপ্তানির তথ্য
- ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (এপ্রিল-জানুয়ারি) ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য ৯৩৯ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
- আগের বছরের একই সময়ে (২০২৩-২৪) আমদানি হয়েছিল ৮৮০ কোটি ৯৯ লাখ ডলারের পণ্য।
- জানুয়ারি মাসে আমদানি হয়েছে ১০৭ কোটি ৫৬ লাখ ৭০ হাজার ডলারের, যা আগের বছরের জানুয়ারিতে ছিল ৯১ কোটি ৭৩ লাখ ডলার।
ভারতের বাণিজ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী:
- বাংলাদেশ তুলা বেশি আমদানি করে, এরপর খাদ্যশস্য।
- খনিজ, জ্বালানি পণ্য এবং বিদ্যুৎসহ আরও বিভিন্ন পণ্যও আমদানি করে।
- বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রধানত তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়।
জনগণ ও বাজারে প্রভাব: পেঁয়াজ, ডিম, মরিচ
- অভ্যুত্থানের পরে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়।
- পেঁয়াজ, ডিম, কাঁচামরিচের দাম বেড়ে যায়।
- পরবর্তীতে এ সব পণ্য বড় আকারে আমদানি শুরু হওয়ায় ভারতের ওপর আমদানিনির্ভরতা আবার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে।
চাল আমদানি ও সরকারের পদক্ষেপ
- সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চালসহ নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে ভারতের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে।
- বেশ কয়েক মাস শুল্ক বাড়ানোর কারণে চাল আমদানি ব্যাহত হয়, পরে শুল্ক কমায় আমদানি আবার শুরু হয়।
- সরকারিভাবে একাধিক ধাপে ভারত থেকে নন-বাসমতী সিদ্ধ চাল আমদানি অনুমোদন দেওয়া হয়।
- ২৬ ডিসেম্বর থেকে সরকারিভাবে আমদানি করা চাল দেশে প্রবেশ করতে শুরু করে।
- জানুয়ারির মাঝামাঝি আরও ৫০ হাজার টন, ২০ ফেব্রুয়ারি আরও ৫০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়।
- বেসরকারি খাতের আমদানির সময়সীমা আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বিদ্যুৎ আমদানিতে ভারত
- জাতীয় গ্রিডে এখন ১৫ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ আসে ভারত থেকে।
- পিজিসিবির তথ্যানুযায়ী, গতকাল রাতে ভারত থেকে ১,৭৫৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়, যার মধ্যে আদানি গ্রুপের গড্ডা কেন্দ্র থেকেই আসে ৭৬০ মেগাওয়াট।
- ডলার সংকটের কারণে বকেয়া বিল জমে যাওয়ায় গত বছরের শেষ দিকে আদানির একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যায়।
- শীতে কম চাহিদার কারণে বাংলাদেশও একটি ইউনিট থেকেই বিদ্যুৎ নিতে চেয়েছিল।
- তবে এবার গ্রীষ্মে পুরো ১,৬০০ মেগাওয়াট সরবরাহের অনুরোধ করা হয়েছে আদানিকে।
ভিসা জটিলতা ও ব্যবসার বাধা
- ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, বর্তমানে ভিসা জটিলতার কারণে ভারতীয়দের সঙ্গে বাণিজ্য করা কঠিন হচ্ছে।
- ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির এক কর্মকর্তা বলেন, যুগ্ম
- দুই দেশের বাণিজ্যের সম্ভাবনা থাকলেও ভিসা পাওয়া কঠিন হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।
- সীমান্তবর্তী এলাকার আমদানিকারকদের মধ্যে অনেকেই ভিসা না পাওয়ায় বাণিজ্য ঝুঁকিতে পড়ছে।
- ব্যবসায়ীরা রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে দুই দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে চান।
অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও উত্তেজনা
- ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেলও আমদানি করছে বাংলাদেশ।
- এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে ভারত থেকে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের জ্বালানি তেল আমদানি হয়।