সারাক্ষণ রিপোর্ট
সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের অভিযোগে চলমান মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের সাজা থেকে খালাস করা হয়েছে। এই রায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট আপিল বিভাগ কর্তৃক ৬ মার্চ ঘোষিত হয়েছে।
আদালতের কার্যক্রম ও শুনানির বিবরণ
- শুনানির সূচনা:
গত মঙ্গলবার আপিল শুনানির পর রায়ের জন্য আজকে (৬ মার্চ) দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল। - উকিল:
তাদের পক্ষ থেকে সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান, ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম মুকুল এবং অ্যাডভোকেট আজমল হোসেন খোকন প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। - অভিযোগ দিক:
মামলার পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট আসিফ হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।
মামলার পটভূমি ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
- মামলার সূত্রপাত:
২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা দায়ের পর ২০১০ সালের ৬ জুলাই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপর ২০১১ সালের ৮ আগস্ট আদালত অভিযোগ গঠন করেন। - সাক্ষ্য গ্রহণ:
মামলায় মোট ১৩ জন সাক্ষীর বক্তব্য নেয়া হয়, যার মধ্যে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর এজেন্ট ডেবরা লেপরোভেটও ছিলেন, যিনি চার্জশিটের বাইরে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
অর্থ লেনদেন ও মামলার মূল অভিযোগ
- লেনদেনের বিশদ:
নির্মাণ কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা গ্রহণ করেন, যা সিঙ্গাপুরে লেনদেন করা হয়। - ব্যবহারের অভিযোগ:
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, মামুন এই অর্থ সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংক এনএতে জমা করেন এবং তারেক রহমান এই টাকার মধ্যে থেকে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয় করেন।
পূর্বের রায় ও আপিল প্রক্রিয়া
- প্রাথমিক রায়:
২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালত তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়ে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের সাজা, ৪০ কোটি টাকার জরিমানা এবং ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৬১৩ টাকার বাজেয়াপ্তির নির্দেশ দেন।
- আপিল ও শুনানি:
মামুন ৫ ডিসেম্বর আপিল করেন, এবং ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারিতে আপিল শুনানির জন্য মামলা গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই হাইকোর্ট তারেক রহমানকে সাত বছরের সাজা এবং ২০ কোটি টাকার জরিমানা, সাথে মামুনের সাজা বহাল রাখেন। - সর্বশেষ আপিল:
এই রায়ের বিরুদ্ধে গিয়াস উদ্দিন মামুন আবার আপিল করেন, যার ফলস্বরূপ আপিল বিভাগ মামুনকে সাত বছরের সাজা থেকে খালাস দেন।
উপসংহার
এই আপিল বিভাগের রায় মামলার দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং বহুবার আপিলের পর একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় দেখিয়েছে। মামলার সকল প্রমাণ ও সাক্ষ্য বিবেচনা করে আদালত তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে নির্দিষ্ট সাজা থেকে মুক্তি দিয়েছেন।