সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- রেডি পোশাক ব্র্যান্ড রেইনি ২০ শতাংশ ছাড় দিয়েও আশানুরূপ বিক্রি করতে পারছে না
- স্টাইলিশটেক্স ব্র্যান্ডের সেমিলং পাঞ্জাবি ও কমফোর্ট ক্লোজেট ব্র্যান্ডের টি-শার্ট বিক্রি মোটামুটি হচ্ছে
- কমফোর্ট ক্লোজেট ব্র্যান্ডের টি-শার্ট তাদের নিজস্ব কারখানায় তৈরি এবং কিছু টি-শার্ট চীন থেকে আমদানি করা হয়
রমজানের দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও এখনো ঈদের কেনাকাটায় তেমন ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে না। সাধারণত ১৫ রমজানের পরপরই ক্রেতাদের ব্যস্ততা বাড়ে, কিন্তু এবছর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। সন্ধ্যায় যেখানে বেশি বিক্রি হওয়ার কথা, সেখানে মার্কেটগুলো সন্ধ্যার পরও ক্রেতাশূন্য থাকছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
নগরীর মূল কেন্দ্রে বাজার পরিস্থিতি
রাজধানীর মাঝখানে অবস্থিত ‘সিটি স্ট্রিট’ এলাকায় বিখ্যাত শপিংমল ক্রিস্টাল মল এবং আশপাশের টাপা প্লাজা, ডায়নাস্টিক প্লাজা, মর্নিং লাইট প্লাজা ও লোটাস প্লাজা ঘুরে দেখা গেছে—দোকানগুলো বেশিরভাগই ফাঁকা, হাতে গোনা কয়েকজন ক্রেতা ঘোরাফেরা করছেন। বিক্রেতারা বলছেন, এবারের ঈদে কেনাকাটা আগের তুলনায় অনেক কম হচ্ছে।
মূল্যছাড়েও ক্রেতাদের আগ্রহ কম
রেইনি নামের একটি রেডি পোশাক ব্র্যান্ড সব পণ্যে ২০ শতাংশ ছাড় দিয়ে ‘ঈদ সালামি অফার’ চালু করলেও বিক্রি প্রত্যাশামতো বাড়েনি। দোকানের সুপারভাইজার রহিম জানান, ক্রেতাদের আগের মতো সাড়া পাচ্ছেন না। অন্যদিকে ইস্কাটন থেকে আসা এক ক্রেতা জানালেন, তিনি নিজের জন্য ৪,৬৫৯ টাকায় একটি সেমি ইস্টার্ন থ্রি-পিস কিনেছেন। তাঁর ভাষায়, রেইনি ব্র্যান্ডের মান ভালো বলে তিনি ও তাঁর সন্তানেরা দীর্ঘদিন ধরেই এখানকার পোশাক ব্যবহার করেন।
অন্য ব্র্যান্ডগুলোরও একই অবস্থা
ন্যানো ব্র্যান্ডে ছেলেদের প্যান্ট, শার্ট, পলোশার্ট থেকে শুরু করে মেয়েদের ওয়ান পিস ও টু-পিস পাওয়া যায়। সেখানকার এক বিক্রয়কর্মী জানান, এবারে কেনাকাটার চাপ অত্যন্ত কম। অন্যান্য বছর ১৫ রমজানের পর শোরুমে দাঁড়ানোর জায়গা থাকত না, অথচ এখন বেশ ফাঁকা। শোরুমে উপস্থিত একমাত্র ক্রেতা বললেন, তিনি প্রয়োজনে পোশাক কিনবেন—বিশেষভাবে ঈদের জন্য না, বরং পছন্দ হলে কেনা হবে, না হলে নয়।
নতুন ডিজাইনে পোশাকের বৈচিত্র্য
ইলেভেন ব্র্যান্ডের ম্যানেজার রাসেদুল হাসান জানান, তাদের লেডিস ও জেন্টস উভয় ধরনের পোশাক মিক্সড কটন ও ব্লেন্ডেড কটনে তৈরি। হালকা জরির সুতার কাজ, হাতে-গলায় পাইপিং ও ম্যাট ফিনিশ রঙের কারণে পোশাকে অভিজাত্য থাকলেও বিক্রি এখনো তেমন বাড়েনি।
ক্রেতাদের মনোভাব ও কেনাকাটার পেছনের কারণ
মোহাম্মদপুর থেকে আসা শাহাবুদ্দিন আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী বলেন, এবারের ঈদ কেনাকাটায় তাঁদের আগ্রহ কম। মূলত সন্তানদের আবদার মেটাতেই এসেছেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বা আর্থিক সীমাবদ্ধতার বিষয়গুলো ছোটরা বুঝতে পারে না বলে তাদের জন্য কেনাকাটা করতে হয়েছে। সন্ধ্যার পর অতীব জরুরি কিছু না হলে তাঁরা এখন আর বাইরে বেরোন না বলে জানান।
ব্র্যান্ডগুলোর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য
পোলাইট গার্ডেন-এর শাখা ব্যবস্থাপক মো. জাকির জানান, তাঁদের মার্কেটজুড়ে একই চিত্র। সাধারণত পাঞ্জাবি ও কাবলি সেটের চাহিদা ভালো থাকলেও এবছর বিক্রি তুলনামূলকভাবে কম। তাঁদের পণ্যগুলোর মধ্যে পাকিস্তানি টরে, এন্ডি কটন, ধুপিয়ান কটন ও রেমি কটনে তৈরি পাঞ্জাবি-প্যান্ট রয়েছে। হাতে ও গলায় পেটানো এমব্রয়ডারি এবং এন্টিক বোতাম ডিজাইন পোশাকগুলোকে অন্যরকম আভিজাত্য দেয়। কাবলি সেটের সর্বোচ্চ দাম ৬,৩৪৫ টাকা, পাঞ্জাবির সর্বোচ্চ দাম ৪,১৯১ টাকা, আর সর্বনিম্ন ১,৯৯০ টাকায় পাঞ্জাবি পাওয়া যায়।
মারিনা ক্লাব নামের এক দোকানের মালিক জানালেন, আগে দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে বাজার করতে আসতেন, কিন্তু এবছর আগের মতো সেই ভিড় নেই। সন্ধ্যার পরও ক্রেতা তুলনামূলকভাবে কম আসে, অনেকে শুধু পোশাক দেখে চলে যান।
শিশুদের পোশাক কেনাকাটায় সামান্য উচ্ছ্বাস
দোকানিদের মতে, নারী ও শিশুদের পোশাকেই সামান্য বিক্রি হচ্ছে। অভিভাবকেরা সন্তানদের পছন্দমতো পোশাক খুঁজতে এসেছেন। সুপারহিরো নামের শিশুদের পোশাকের দোকানের বিক্রয়কর্মী মোস্তাক বলেন, তাঁদের ঘারারা, আফগানি ওয়েস্টার্ন ড্রেস, ছেলেদের প্যান্ট-শার্টের কিছুটা চাহিদা আছে।
বিভিন্নজনের মন্তব্য
স্টাইলিশটেক্স ব্র্যান্ডের বিক্রয়কর্মী তারিফ জানান, তাঁদের বেশিরভাগ পোশাক কোরিয়ান সিল্ক ও মিক্সড কটনে তৈরি। পোশাকগুলো দেখতে কিছুটা চকচকে লাগে এবং হালকা এমব্রয়ডারির সেমিলং পাঞ্জাবি বিক্রি তুলনামূলকভাবে ভালো চলছে।
অন্যদিকে, কমফোর্ট ক্লোজেট ব্র্যান্ডের টি-শার্ট বিক্রি মোটামুটি হচ্ছে বলে জানান বিক্রয়কর্মী সাব্বির। ৭৯০ টাকা থেকে ২,৯৮০ টাকার মধ্যে টি-শার্ট পাওয়া যায়। এসব পণ্যের ডিজাইন ও উৎপাদন তাঁদের নিজস্ব কারখানায় হলেও কিছু টি-শার্ট চায়না থেকেও আমদানি করা হয়।