সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- গ্যাস সংকটের মধ্যে অবৈধ সংযোগ প্রদান অব্যাহত রয়েছে
- ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তিতাসের রিপোর্ট অনুযায়ী, সিস্টেম লস ছিল ১০.৬%
- ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস খাতে সরকারের ভর্তুকি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৭০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা
গ্যাস সংকটের এই সময়ে বৈধ সংযোগ পেতে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হলেও অবৈধ সংযোগ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। একদিকে লোক দেখানো অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও, অন্যদিকে দ্রুত গতিতে অবৈধ সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হচ্ছে।
সিস্টেম লসের নামে চুরির সুরক্ষা
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিপুল পরিমাণ গ্যাস চুরি হচ্ছে এবং এটিকে ‘সিস্টেম লস’ হিসেবে দেখানো হচ্ছে, যা মূলত এই চোর চক্রকে সুরক্ষা দেওয়ার একটি উপায়। ১৯৯৬ সালের আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) তিতাস গ্যাসকে ২% সিস্টেম লস অনুমোদন দিয়েছে, কিন্তু বাস্তবে এই লস অনেক বেশি।
সিস্টেম লসের প্রকৃত অবস্থা
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তিতাসের রিপোর্ট অনুযায়ী, সিস্টেম লস ছিল ১০.৬%। এই সময়ে দৈনিক গড়ে ১৩৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হলেও বিক্রি দেখানো হয়েছে ১১৮৯ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ১৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের হিসাব মিলছে না।
ভৈরব এলাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ, যেখানে সিস্টেম লস ৪০% পর্যন্ত পৌঁছেছে। কর্মকর্তারা দাবি করছেন, আবাসিক গ্রাহকরা গ্যাসের চুলা অনবরত জ্বালিয়ে রাখার কারণে এমনটি হচ্ছে, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধ সংযোগের কারণেই এই লস বাড়ছে।
সিস্টেম লসের ভিন্ন ভিন্ন হার
- ভালুকা (ময়মনসিংহ বিভাগ): ৩.৬%
- ঢাকা মহানগরী: ১০.৬%
- নারায়ণগঞ্জ: ২০.৯%
গ্যাস চুরির ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি
দেশের গ্যাস চাহিদার ২৫% বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, যার মূল্য প্রতি ইউনিট ১৩-৪০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করে। পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, আমদানিকৃত গ্যাসের মূল্য প্রতি ঘনমিটার ৬৫ টাকা।
গ্যাস চুরির ফলে প্রতিদিন প্রায় ২০০ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে, যা মূলত চুরি হওয়া গ্যাস থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে।
গৃহস্থালি ও শিল্প খাতে গ্যাস সংযোগ ও ব্যবহারের চিত্র
তিতাসের ২৮ লাখ আবাসিক গ্রাহকের মধ্যে চার লাখ প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করছে। যেখানে পূর্বে একজন গ্রাহকের জন্য ৮২ ঘনফুট গ্যাস বরাদ্দ ছিল, সেটি এখন ৬০ ঘনফুট করা হয়েছে। কিন্তু চুরির কারণে এই গ্যাস অবৈধ সংযোগে চলে যাচ্ছে।
সরকারি ভর্তুকি ও আর্থিক ক্ষতি
২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস খাতে সরকারের ভর্তুকি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৭০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
অবৈধ সংযোগবিরোধী অভিযান
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত:
- ২১০টি শিল্প সংযোগ
- ১২৫টি বাণিজ্যিক সংযোগ
- ২৭,২৭৭টি আবাসিক সংযোগ
- ৬৩,৩৮৬টি বার্নার বিচ্ছিন্ন
- ১৩৮ কিলোমিটার পাইপলাইন অপসারণ
আইনগত ব্যবস্থা ও শাস্তি
বাংলাদেশ গ্যাস আইন, ২০১০ অনুযায়ী অবৈধ সংযোগের শাস্তি:
- সর্বনিম্ন: ১০,০০০ টাকা জরিমানা বা ৩ মাসের কারাদণ্ড।
- সর্বোচ্চ: ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা।