সারাক্ষণ রিপোর্ট
দ্বিমুখী চাপে মালয়েশিয়ার প্রযুক্তি খাত
মালয়েশিয়ার সেমিকন্ডাক্টর শিল্প বর্তমানে দুই দিক থেকে চাপে পড়েছে। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বাণিজ্য-সংরক্ষণ নীতি চালু করেছেন। দ্বিতীয়ত, চীনের নতুন ও সাশ্রয়ী এআই মডেল ‘ডিপসিক’-এর আগমন সেমিকন্ডাক্টর বাজারে নতুন হুমকি তৈরি করেছে।
অনেক বিনিয়োগকারী এখন ব্যয়বহুল এআই চিপের পরিবর্তে সস্তা প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছেন। তাই মালয়েশিয়াকে টিকে থাকতে হলে প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা ধরে রাখতে হবে।
পূর্বের স্থিতি থেকে বর্তমান অস্থিরতা
একসময় মালয়েশিয়া বৈশ্বিক এআই সাপ্লাই চেইন থেকে সুবিধা নিচ্ছিল। কিন্তু এখন বড় বড় কোম্পানি যেমন YTL Power, Inari Amerton, MPI ও Unisem-এর শেয়ার মূল্য বড় ধরনের পতনের মুখে পড়েছে।
ট্রাম্পের নীতির নেতিবাচক প্রভাব
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর আবার যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ জোরদার হয়েছে। তিনি সেমিকন্ডাক্টর, গাড়ি ও ওষুধ শিল্পে ২৫% শুল্ক প্রস্তাব করেছেন, যা মালয়েশিয়ার মার্কেটের জন্য একটি বড় হুমকি।
বিশ্লেষক শফিক কাদির বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বাড়ায়, তাহলে চীন-নির্ভর কোম্পানিগুলো আয়ঘাটতিতে পড়বে। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও দুর্বল আয়প্রবাহ বাজারে হতাশা তৈরি করেছে।
ডিপসিক: সস্তায় শক্তিশালী এআই মডেল
চীনের ডিপসিক এআই মডেল জানুয়ারিতে বাজারে আসে এবং এটি মাত্র ৬ মিলিয়ন ডলার খরচে তৈরি হয়। এতে ব্যয়বহুল এআই চিপের প্রয়োজন কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
Fitch Ratings বলছে, যদি কম খরচে সফল এআই মডেল তৈরি সম্ভব হয়, তাহলে চিপ নির্মাতাদের আয় বৃদ্ধির গতি কমে যাবে।
বাজারে তাত্ক্ষণিক ধাক্কা
সাশ্রয়ী প্রযুক্তির মাঝে সম্ভাবনার আলো
কিছু বিনিয়োগকারী মনে করছেন, ডিপসিকের উত্থান মালয়েশিয়ার জন্য সুযোগও বয়ে আনতে পারে। বিনতাং ক্যাপিটাল পার্টনারসের প্রতিষ্ঠাতা জোহান রোজালি-ওয়াথুথ বলেন, উন্নত চিপ ছাড়াও সাধারণ প্রযুক্তিতে অংশগ্রহণ করে এআই বিপ্লবে থাকা সম্ভব।
বিশেষ করে যেসব দেশের উন্নত চিপে প্রবেশাধিকার নেই, তাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
চায়না প্লাস ওয়ান কৌশলে মালয়েশিয়ার সম্ভাবনা
টেইলরস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস চ্যান্সেলর অং কিয়ান মিং বলেন, চায়না প্লাস ওয়ান কৌশলের আওতায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো মালয়েশিয়ায় আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে তাদের সিঙ্গাপুর, টোকিও, তাইপে, সিওল ও শেনঝেনের মতো প্রযুক্তি হাবে সংযুক্ত থাকতে হবে।
তিনি স্বীকার করেন, অতীতে মালয়েশিয়ার উচ্চাভিলাষী অনেক প্রকল্প বাস্তব ভিত্তির অভাবে সফল হয়নি।
আর্ম হোল্ডিংসের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব
৫ মার্চ মালয়েশিয়া সরকার আর্ম হোল্ডিংসের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব ঘোষণা করেছে। শিল্পমন্ত্রী জাফরুল আজিজ জানান, এটি দেশকে সেমিকন্ডাক্টর খাতে এগিয়ে নেবে এবং সাপ্লাই চেইনের গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত করবে।
তবে তিনি সতর্ক করেন, ভিয়েতনাম ও ভারতও এই প্রতিযোগিতায় দ্রুত এগিয়ে আসছে।
স্থানীয় প্রতিভা ও উদ্ভাবনের গুরুত্ব
CREST-এর সিইও জাফরি ইব্রাহিম বলেন, প্রযুক্তির পাশাপাশি দক্ষ জনবল গড়াটাও জরুরি। আর্মের সঙ্গে অংশীদারিত্ব স্থানীয় প্রকৌশলীদের জটিল চিপ ডিজাইনে পারদর্শী করে তুলবে, যা ভবিষ্যতের উদ্ভাবনী প্রজন্ম গঠনে সহায়ক হবে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ: জাতীয় পর্যায়ে সমন্বয় প্রয়োজন
জোহান রোজালি বলেন, কেবল প্রবাহে থাকা নয়, মালয়েশিয়াকে এআই বিপ্লবের নেতৃত্বে থাকতে হবে। কিন্তু দেশের রাজ্যগুলোর মধ্যে সমন্বয় ছাড়া এটি সম্ভব নয়।
তিনি জানান, ‘ইস্টার্ন সিলিকন ভ্যালি’ নামে পরিচিত পেনাং জ্বালানি, জায়গা ও পানির সংকটে আছে। এদিকে, সারাওয়াকে দক্ষ জনবলের সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
তার মতে, “যদি মালয়েশিয়া দেশের সব অঞ্চলকে একসঙ্গে কাজ করাতে পারে, তাহলে সে ভিয়েতনাম বা ভারতের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারবে।”
Leave a Reply