সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাংশ
- দুই দেশের নেতাদের এই ব্যক্তিগত সখ্যতা ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে আরও মজবুত করে তুলেছে
- জর্জিয়া ও পেনসিলভানিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোতে ভারতীয়-আমেরিকানদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে
- ডোনাল্ড ট্রাম্প হিন্দু ভোটারদের আকৃষ্ট করতে তাদের ‘ধর্মবিরোধী নীতিমালা’ থেকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন
- অনেক ভারতীয়-আমেরিকান কঠোর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে দেখেন, যা ট্রাম্পের নীতির সাথে মেলে না
১৭ মার্চ,ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি দীর্ঘ তিন ঘণ্টার সাক্ষাৎকার দেন জনপ্রিয় পডকাস্টার লেক্স ফ্রিডম্যানকে,যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী ‘মাগা’ (MAGA) সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয়। সেখানে মোদী উষ্ণভাবে কথা বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে, যাকে তিনি একজন ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেন। এর কিছু সময় পরই মোদী যুক্ত হন ট্রাম্পের নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ এবং লিখেন, “ধন্যবাদ আমার বন্ধু”।
এই ঘটনা ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত দুই দশক ধরে এই দুই দেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে। বর্তমানে প্রথমবারের মতো আমেরিকার গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গাবার্ড একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং দ্বিতীয় ‘লেডি’ উষা ভ্যান্স ভারতীয় বংশোদ্ভূত। দুই দেশের নেতার মধ্যে রয়েছে সুস্পষ্ট ব্যক্তিগত সখ্যতা।
তবু একটি গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী এখনো ট্রাম্পের প্রতি সাড়া দিচ্ছে না—সেটি হলো আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয় প্রবাসী সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ ।
ভারতীয়-আমেরিকানদের প্রভাব ও রাজনৈতিক অবস্থান
জর্জিয়া ও পেনসিলভানিয়ার মতো সুইং স্টেটগুলোতে ভারতীয়-আমেরিকানদের সংখ্যা যথেষ্ট, যা স্থানীয়, অঙ্গরাজ্য ও জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকানরা কিছুটা হলেও সংখ্যালঘু ভোটে অগ্রগতি করেছে।
তবে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি এখনো ৫.২ মিলিয়ন ভারতীয়-আমেরিকানদের মধ্যে এককভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি। এই গোষ্ঠীর ৮০% বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিত এবং তাদের গড় আয় জাতীয় গড়ের দ্বিগুণ। এতটাই সফল এই গোষ্ঠী যে, প্রায় ৭৫% ভারতীয়-আমেরিকান মনে করেন, তারা ইতিমধ্যে ‘আমেরিকান ড্রিম’ অর্জন করেছেন বা অচিরেই করবেন।
ওয়াশিংটনের থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘কার্নেগি এনডাউমেন্ট’-এর এক জরিপ অনুযায়ী, ২০২০ সালে ৫৬% ভারতীয়-আমেরিকান ডেমোক্র্যাট হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতেন, যা ২০২৪ সালে নেমে এসেছে ৪৭%-এ। তবে এটি ডানপন্থায় ঝোঁকার ইঙ্গিত নয়, বরং অনেকেই এখন নিজেদের ‘স্বাধীন’ বা নিরপেক্ষ ভোটার হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। রিপাবলিকান দলের প্রতি সমর্থনের সংখ্যা প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
হিন্দু ভোটারদের আকর্ষণের চেষ্টায় ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকায় হিন্দু ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। গত অক্টোবর মাসে দীপাবলির শুভেচ্ছাবার্তায় তিনি বলেন, তিনি হিন্দু আমেরিকানদের বামপন্থীদের ‘ধর্মবিরোধী নীতিমালা’ থেকে রক্ষা করবেন। পাশাপাশি, প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে এই সম্প্রদায়ের প্রতি অবহেলার অভিযোগও করেন।
ট্রাম্প প্রশাসনে ভারতীয়-আমেরিকানদের উচ্চ পদে নিয়োগও দিয়েছেন তিনি। কাশ প্যাটেলকে এফবিআই পরিচালক, কুশ দেশাইকে উপ-প্রেস সেক্রেটারি এবং হারমিট ধিলনকে সিভিল রাইটস বিভাগের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
কেন ট্রাম্পে আস্থা নেই অনেক ভারতীয়-আমেরিকানের
তবু অনেক ভারতীয়-আমেরিকান এমন কিছু ইস্যুতে গুরুত্ব দেন, যেগুলোর সমাধান ট্রাম্পের কাছ থেকে তারা আশা করেন না।
৮২% ভারতীয়-আমেরিকান চান যুক্তরাষ্ট্রে কঠোর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন হোক এবং ৭৭% মনে করেন জলবায়ু পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শেষে মাত্র ৩৩% ভারতীয়-আমেরিকান ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের বিষয়ে তার পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট ছিলেন।
এই মাসেই প্রকাশিত আরেকটি কার্নেগি রিপোর্টে দেখা যায়, ভারতীয়-আমেরিকানদের কাছে বাইডেনের রেকর্ড ট্রাম্পের চেয়ে ভালো বলে বিবেচিত।
উপসংহার
যদিও ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক গভীর হচ্ছে এবং দুই দেশের নেতাদের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক দৃঢ়, ভারতীয় প্রবাসীরা এখনো ট্রাম্পের ‘মাগা’ নীতিকে পুরোপুরি গ্রহণ করেনি। সমাজ ও রাজনীতির আরও গভীর বিষয়গুলোই নির্ধারণ করছে তাদের সমর্থনের দিক।