সারাক্ষণ রিপোর্ট
মার্কো রুবিও যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ক্যারিবিয়ান সফরে এসে সুরিনাম সফর করেন। সুরিনামের প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা প্রসাদ সান্তোকির সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উভয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, বিনিয়োগ, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রেসিডেন্ট সান্তোকির বক্তব্য
• তিনি মার্কো রুবিওকে সুরিনামে স্বাগত জানিয়ে বলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুরিনামের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।
• দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো বাড়াতে এবং মূলত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্র সম্প্রসারণে উভয় পক্ষ একমত হয়।
• সুরিনাম বর্তমানে তেল-গ্যাস খাতে যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ পেয়েছে। একই সঙ্গে স্বর্ণ খাতেও মার্কিন কোম্পানির বড় বিনিয়োগ রয়েছে।
• তিনি উল্লেখ করেন, শিগগিরই আয়োজিত সুরিনাম এনার্জি, অয়েল অ্যান্ড গ্যাস সামিট (SEOGS)-এ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন গতি আসবে।
• ক্যারিবীয় অঞ্চলের জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সুরিনাম ও গায়ানা উভয়েই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
• মার্কিন বিনিয়োগ ও সহযোগিতার মাধ্যমে সুরিনামের অর্থনীতি আরও বেগবান হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর বক্তব্য
• প্রেসিডেন্ট সান্তোকিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে কিছুটা একতরফাভাবে ‘সমস্যা’মুখী দৃষ্টি ছিল। এখন থেকে বন্ধু ও মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে জোর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
• রুবিও উল্লেখ করেন যে সুরিনাম বিশাল সম্ভাবনাময় দেশ; সঠিক পরিকল্পনা ও স্থিতিশীল অর্থনীতির মাধ্যমে সুরিনাম দ্রুত উন্নতির দিকে যেতে পারে।
• সুরিনামের অর্থনৈতিক পুনরুত্থান ও ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে দেশটির গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স—এই তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দেন তিনি।
• অবকাঠামো, নিরাপত্তা এবং বিনিয়োগ পরিবেশে যুক্তরাষ্ট্র সুরিনামকে সহযোগিতা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। বিশেষ করে অপরাধ ও মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে উভয় দেশ একসঙ্গে কাজ করবে।
• মার্কিন কোম্পানিগুলোকে সুরিনামে আরও বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দিতে রুবিও জোর দেন।
প্রশ্নোত্তর পর্ব
প্রশ্ন (ডে ওয়ারে টাইড)
• সুরিনামে মাদক চোরাচালান রোধে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের সাহায্য করবে? সুরিনামে আবারও ডিইএ (DEA) কার্যালয় খোলার সম্ভাবনা আছে কি না?
• পূর্বে স্বাক্ষরিত শিপরাইডার (Shiprider) চুক্তির বাস্তবায়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সহযোগিতার পরিধি বাড়ানোর বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
উত্তর
• মার্কো রুবিও জানান, চূড়ান্তভাবে ডিইএ অফিস পুনরায় চালুর বিষয়টি বিবেচনা করবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তাদের মূল উদ্দেশ্য সুরিনামের নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানো, যাতে দেশটি নিজেই নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবসময় প্রস্তুত থাকতে পারে।
• প্রেসিডেন্ট সান্তোকি যোগ করেন, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট একটি নতুন চুক্তি সংসদে অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় সমুদ্রপথ ও স্থলপথে মাদক চোরাচালান রোধে সুরিনামের সক্ষমতা জোরদার হবে।
প্রশ্ন (দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস)
• ক্যারিবিয়ান ও লাতিন আমেরিকায় ক্রমবর্ধমান চীনা উপস্থিতি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
• আমেরিকায় ক্যাম্পাস-ভিত্তিক সহিংস প্রতিবাদে যারা জড়িত, তাদের বহিষ্কার নিয়ে রুবিওর আগের অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন করা হয়, তিনি কি একই ধরনের বহিষ্কার চীনা বা হংকং কর্তৃপক্ষ করলে সমর্থন করবেন?
উত্তর
• রুবিও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনো কোনো ‘স্ফিয়ার অব ইনফ্লুয়েন্স’ বা প্রভাববলয় নিয়ে আগ্রহী নয়। বরং যে দেশগুলো তাদের সঙ্গে কাজ করতে চায়, তাদের উন্নয়নে বিশ্বাসযোগ্য ও টেকসই সহযোগিতা দিতে চায়।
• তিনি অভিযোগ করেন, চীনা কোম্পানিগুলো অনেক ক্ষেত্রে দুর্বল মানের কাজ করে, সময়মতো কাজ শেষ করে না, বাজেট ছাড়িয়ে যায় এবং স্থানীয় লোকজনের বদলে চীন থেকেই শ্রমিক নিয়ে আসে। এর বিকল্প হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ নিয়ে আসতে চান তিনি।
• যেসব খাতে চীনা প্রযুক্তির মাধ্যমে গোয়েন্দাগিরির ঝুঁকি আছে (যেমন টেলিকম), সেসব ক্ষেত্রে রুবিও দেশগুলোকে সতর্ক করে বলেন, সঠিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে বড় বড় মার্কিন বিনিয়োগ আসা কঠিন হয়ে পড়ে।
• প্রেসিডেন্ট সান্তোকি জানান, সুরিনাম নিজের স্বার্থে সব দেশের সঙ্গে কাজ করে। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকেও আহ্বান জানান যেন তারা বিনিয়োগে এগিয়ে আসে। কারণ সুরিনামে এখন পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনের সমাপ্তি
• সংক্ষিপ্ত সংলাপের পর উভয় নেতা সহযোগিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
• সুরিনাম ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদারের মাধ্যমে উভয় দেশই উপকৃত হবে বলে আশা করা হয়।
সংক্ষেপে মূল কথা
সুরিনামের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে মার্কিন বিনিয়োগ ও অংশীদারিত্বকে স্বাগত জানানো হয়েছে।
দুই নেতা মাদক চোরাচালান ও নিরাপত্তা-সংকট মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।
চীনা বিনিয়োগের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প সহযোগিতার উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন রুবিও।
সুরিনামের তেল ও গ্যাস খাতে আরও মার্কিন অংশগ্রহণের সম্ভাবনা উন্মোচনে উভয় পক্ষ একমত হয়।
এভাবেই শেষ হয় যৌথ সংবাদ সম্মেলন, যেখানে উভয় নেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও উচ্চতর পর্যায়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন।