সারাক্ষণ রিপোর্ট
২০২৪ সালে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী ইসলামিক মৌলবাদী ও বেলুচ স্বায়ত্তশাসনবাদীদের বিরুদ্ধে মোট ৫৯,৭৭৫টি গুপ্তচর অভিযান চালায়। এই অভিযানগুলো সামরিক বাহিনীর দেশের নিরাপত্তা নীতি ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার লক্ষণ।
- রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ:
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে। ফলে, সরাসরি কুপের পরিবর্তে আইনি ও রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আইনী ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান
- এসআইএফসি (Special Investment Facilitation Council) গঠন:
জুন ২০২৩-এ সংসদের অনুমোদনে এসআইএফসি গঠিত হয়, যেখানে উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্ব রয়েছেন। এই কাউন্সিল আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ নিশ্চিতকরণ এবং দেশীয় প্রকল্প তত্ত্বাবধানে “একক জানালা” হিসেবে কাজ করে, যা সদস্যদের ব্যাপক আইনী ক্ষমতা প্রদান করে। - বাণিজ্য ও কৃষি ব্যবস্থাপনা:
ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এ, প্রধান বিচারপতি সরকারের কাছে আবেদন জানান যে, সামরিক বাহিনী কেবল প্রতিরক্ষা কাজে মনোযোগ দেয়, কারণ তারা ৫০টি বাণিজ্যিক কোম্পানি এবং দেশের বৃহত্তম হাউজিং সোসাইটি পরিচালনা করছে।
এছাড়াও, আগস্ট ২০২৪-এ গ্রিন পাকিস্তান ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে ৪.৮ মিলিয়ন একর জমি সামরিক পরিচালিত কর্পোরেট কৃষি ব্যবস্থার জন্য বরাদ্দ করা হয়।
সাংবিধানিক প্রভাব ও বিচারবিভাগ
- প্রক্রিয়া বাইপাস:
প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে, সামরিক বাহিনী সাংবিধানিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা দখল করছে। উদাহরণস্বরূপ, সাধারণ মতমতের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কাউন্সিল (সিসিআই) সভা না করলেও, এসআইএফসি নিয়মিত ১০-এরও বেশি সভা পরিচালনা করে। এর ফলে, এমন এক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয় যেখানে সিসিআই-এর সম্মতি প্রয়োজন থাকলেও, পাকিস্তানের নদীগুলোতে ছয়টি নতুন খাল নির্মাণ করা হয়। - আইনী পরিবর্তন ও বিচারবিভাগের কৌশল:
২০২৩ সালে সংসদ আরমি আইন সংশোধনের মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর রাষ্ট্র পরিচালনার ভূমিকা নিশ্চিত করা হয় এবং অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের বেসামরিক পদে নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়।
২০২৪ সালে, সামরিক সমর্থিত শাসনব্যবস্থা ২৬তম সাংবিধানিক সংশোধনী পাশ করে বিচার বিভাগকে সামরিক নিয়ন্ত্রণে আনার পদক্ষেপ নেয়। এতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া পরিবর্তিত হয়ে তিনজন সিনিয়র বিচারকের মধ্য থেকে পার্লামেন্টারি কমিশন নির্বাচন করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টও ২০২৪-এর শেষ দিকে সিদ্ধান্ত নেয় যে, সামরিক আদালতের পাশাপাশি বেসামরিক বিচারও পরিচালনা করা যেতে পারে, যার ফলে একটি সমান্তরাল বিচারব্যবস্থা গড়ে উঠে।
গণমাধ্যম ও প্রচার
- মত প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা:
সামরিক বাহিনী বিরোধী মত প্রকাশকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং স্বাধীন মত প্রকাশের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করছে। ইলেকট্রনিক অপরাধ প্রতিরোধ আইনের সাম্প্রতিক পরিবর্তন এই নীতিকে স্পষ্ট করে। - যোগাযোগের নতুন উপায়:
সামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রমণের মাধ্যমে তরুণ সমাজের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছেন। এই কর্মকাণ্ডকে সামরিক রাজনীতির “নতুন স্বাভাবিক” হিসেবে প্রচার করা হলেও, এতে প্রশ্ন ওঠে যে এটি কতটা স্বচ্ছ এবং গণতান্ত্রিক।
উপসংহার
পাকিস্তানের দুর্বল রাজনৈতিক দল ও সামরিক বাহিনীর উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা দেশের জন্য মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করেছে। স্থায়ী সামরিক শাসনের এই প্রথা, যতক্ষণ না বেসামরিক বাহিনী বিকল্প রাজনৈতিক পথ তৈরি করে, ততক্ষণ অব্যাহত থাকবে এবং পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থা মৌলিকভাবে অগণতান্ত্রিক হয়ে থাকবে।