ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ১ এপ্রিল রাত ৯টা ৩০ মিনিটে চীনা রেড ক্রসের একটি ত্রাণবাহী গাড়িবহরে গুলি চালিয়েছে। এই বহরটি ২৮ মার্চ সংঘটিত বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দিতে যাচ্ছিল। ঘটনাটি সংঘটিত হয় শান রাজ্যের নাওংকিও টাউনশিপে, যা মান্দালয়ের কাছাকাছি অবস্থিত এবং দীর্ঘদিন ধরেই সংঘাতপূর্ণ এলাকা।
সেনাবাহিনীর বক্তব্য
রাষ্ট্রপ্রশাসন পরিষদের (SAC) মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুন জানান, গাড়িবহরটি সেনাবাহিনীর অনুমতি না নিয়েই রুট অনুসরণ করেছিল। তিনি বলেন, ২০০ মিটার দূর থেকে থামার সংকেত দিয়ে ১০০ মিটার দূরত্বে আসলে তিনবার আকাশে গুলি চালানো হয়। এরপর বহরটি নাওংকিওতে ফিরে যায়।
তিনি আরও জানান, এই ঘটনার তদন্ত শুরু হবে এবং কেউ কেউ ভূমিকম্পের ঘটনাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে ২,৮৮৬ জন এবং থাইল্যান্ডে অন্তত ২১ জন মারা গেছে।

বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দাবি
ঘটনাস্থলে সক্রিয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী তাং জাতীয় মুক্তি বাহিনী (TNLA) জানিয়েছে, সেনাবাহিনী ‘মেশিন গান’ দিয়ে গাড়িবহরটিতে গুলি চালিয়েছে। তারা জানিয়েছে, গাড়িবহরটি মান্দালয়ের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল এবং আগেই সামরিক পরিষদকে জানানো হয়েছিল। গুলির পর বহরটি বাধ্য হয়ে নাওংকিওতে ফিরে আসে।
TNLA আরও জানিয়েছে, এখন তারা চীনা রেড ক্রসের বহরটিকে নিরাপত্তা দিচ্ছে এবং বহরটি তার যাত্রা অব্যাহত রাখবে।
চীনের প্রতিক্রিয়া
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই ঘটনায় কেউ আহত হয়নি। মুখপাত্র গুয়ো জিয়াকুন বলেন, “মিয়ানমারের সব পক্ষ যেন ভূমিকম্প ত্রাণ কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেয় এবং উদ্ধার কর্মী ও বিদেশি সহায়তা নিরাপদে পৌঁছাতে দেয়।” তিনি আরও বলেন, ত্রাণবাহী রুট খোলা রাখা অত্যন্ত জরুরি।
চীনা রেড ক্রস এই বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।

বিদ্রোহীদের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা
শান রাজ্যের উত্তরাংশে সক্রিয় জাতিগত বিদ্রোহী জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ মঙ্গলবার এক মাসের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে, যাতে ভূমিকম্পের ত্রাণ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চলতে পারে। এর আগে, ছায়া সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (NUG) দুই সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল।
সেনাবাহিনীর সমালোচনা
ভূমিকম্পের পরেও সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলা চালিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে।
স্বাধীন বিশ্লেষক ডেভিড স্কট ম্যাথিসন বলেন, “ভূমিকম্পের পর থেকে সেনা প্রশাসনের (SAC) সব বক্তব্য সন্দেহজনক। চীনা গাড়িবহরটি প্রতিটি রুটে সাবধানতার সাথে চলছিল এবং বহরের প্রথম গাড়িতে স্পষ্টভাবে বার্মিজ ও ইংরেজিতে লেখা ছিল। এই ঘটনা দুটি বিষয় পরিষ্কার করে: সেনাবাহিনী বেপরোয়া এবং তারা জনগণের চেয়ে নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।”
একজন অভিজ্ঞ পশ্চিমা বিশ্লেষক ঘটনাটিকে “সেনাবাহিনীর বড় ভুল” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এটি সম্ভবত অনিচ্ছাকৃত হলেও সেনাবাহিনীর অরাজক অবস্থার প্রতিফলন।
Sarakhon Report 



















