সারাক্ষণ রিপোর্ট
গত তিন দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নাগরিকদের স্বাস্থ্যের ওপর বিস্তৃত জরিপ পরিচালনা করছে। এর মধ্যে স্থূলতা, হাঁপানির মতো দীর্ঘমেয়াদি অসুখের আর্থিক প্রভাব থেকে শুরু করে কীভাবে ওষুধ গ্রহণ করা হয়—সবকিছুর তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। এই ডেটা থেকেই তৈরি হয় মেডিকাল এক্সপেনডিচার প্যানেল সার্ভে (এমইপিএস), যা মার্কিন স্বাস্থ্যব্যবস্থার সবচেয়ে বিস্তৃত ও জাতীয়ভাবে প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র তুলে ধরে। ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল এই স্বাস্থ্যখাত মোট জিডিপির প্রায় ১৭% জুড়ে রয়েছে।
সরকারি পরিসংখ্যানের অদৃশ্য জগৎ
এমইপিএস যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্য-সংগ্রহ কাঠামোর অংশ, যা সাধারণ মানুষের দৃষ্টির বাইরেই থাকে। ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডগে) সম্প্রতি এই কাঠামোকে ছোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মধ্য-মার্চে স্বাস্থ্য ও মানবসেবা দপ্তরের (এইচএইচএস) অধীনে থাকা জরিপ-পরিচালনাকারী ইউনিটকে জানানো হয়, ডগের পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই হবে। ইতিমধ্যে অনেকে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে গেছেন। যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা উদ্বিগ্ন যে এমইপিএস চালু রাখা সম্ভব হবে কি না।
এমইপিএস: স্বাস্থ্য খাতের বিস্তৃত ছবি
এমইপিএস মানুষের বাড়িতে গিয়ে স্বাস্থ্যগত ও আর্থিক তথ্য সংগ্রহ করে, যা পরে হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের নথির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়। হেলথকেয়ার রিসার্চ অ্যান্ড কোয়ালিটি এজেন্সি (এএইচআরকিউ) এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে জাতীয় নমুনায় রূপ দেয়। বেসরকারি খাতে এখনো এ ধরনের ব্যাপক জরিপ পরিচালনা করার সক্ষমতা বা অনুমোদন—কোনোটাই নেই। বিভিন্ন বীমা সংস্থার কাছে তাদের নিজস্ব গ্রাহকদের ডেটা থাকলেও, সবার ডেটা একত্রিত করে সার্বিক চিত্র পাওয়া কঠিন। এমইপিএসের মাধ্যমেই বোঝা যায়, বাস্তবে জনসংখ্যার সত্যিকারের অবস্থা কী, ওজন বৃদ্ধি বা অন্য কোনো স্বাস্থ্যসমস্যা হলে ব্যয় কীভাবে বাড়ে, কিংবা নতুন কোনো ব্যয়বহুল ওষুধ (যেমন জিএলপি-১) দীর্ঘমেয়াদে খরচ সাশ্রয় করতে পারে কি না।
ডগের ব্যয়সংকোচ পরিকল্পনা
স্বাস্থ্য ও মানবসেবা দপ্তরের অনেক কর্মী ইতিমধ্যে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন। এরপর ২৭ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র আরও ১০,০০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেন। ডগের এই ছাঁটাই শুধু এমইপিএস নয়, বরং বহু ধরনের সরকারি জরিপের ভবিষ্যতকেও অনিশ্চিত করে তুলছে। এসব জরিপে গৃহমূল্য থেকে শুরু করে রক্তে সিসার মাত্রা পর্যন্ত—নানা বিষয়ের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
সরকারি পরিসংখ্যান-ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ
বর্তমান আমেরিকান পরিসংখ্যান ব্যবস্থা ধীরগতির এবং এতে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা কমছে। অনেক জরিপের ডেটা সংগ্রহ করতে সপ্তাহ থেকে মাস বা কখনো বছর লেগে যায়। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ জুলিয়া লেইনের মতে, স্রেফ জরিপভিত্তিক পদ্ধতি আর পর্যাপ্ত গতি ও পূর্ণতা নিশ্চিত করতে পারছে না। দ্রুত পরিবর্তনশীল অর্থনীতিতে কর-নথি বা সোশ্যাল সিকিউরিটি ফাইলিংয়ের মতো উন্নত প্রশাসনিক ডেটা ব্যবহার করে আরো বাস্তবসম্মত তথ্য পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ডগের পরিকল্পনায় এখনো এমন কোনো আধুনিকায়নের রূপরেখা নেই। বরং উল্লেখযোগ্য হারে কর্মী ছাঁটাই করলে তথ্যব্যবস্থা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
মার্কিন পরিসংখ্যান ব্যবস্থার সাফল্য ও কাঁটাছেঁড়া
যে কাঠামোটি খানিকটা জটিল মনে হলেও, এটি সারা দেশের মানুষকে জরিপের আওতায় নিয়ে আসতে পেরেছে। প্রায় ৪ মিলিয়ন বর্গমাইলজুড়ে বাস করা নাগরিকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বাজেট সংকোচনের কারণে শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিএলএস), ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ স্ট্যাটিস্টিকস (এনসিএইচএস)–সহ বিভিন্ন দপ্তরকে জরিপের আকার ছোট করতে হচ্ছে, যা ডেটার নির্ভুলতা কমিয়ে দিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে, ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) সামান্য এদিক-সেদিক হলে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা ও অন্যান্য আর্থিক সহায়তার পরিমাণে বড়সড় পরিবর্তন আসতে পারে।
বেসরকারি খাতে প্রভাব
মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য খাত সরকারি তথ্যের ওপর নির্ভর করে। বড় সংস্থাগুলোর নিজস্ব ডেটা থাকলেও, সেটি সার্বিক দেশের চিত্র দেয় না। ফলে অনুমানের ওপর নির্ভর করে বিশ্লেষণ করতে গেলে তথ্যঘাটতি দেখা দেবে। একইভাবে, কৃষি দপ্তরের পরিসংখ্যান শাখা শস্য থেকে সমুদ্রপণ্য পর্যন্ত সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে। ডগের আকস্মিক ছাঁটাই-নীতির ফলে এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহে বিঘ্ন ঘটলে পণ্যবাজারেও অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
কেন এই তথ্য জরুরি
সরকারি তথ্যের অভাব শুধু সরকারি বিভাগ নয়, সাধারণ মানুষ ও বেসরকারি খাতের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তকেও প্রভাবিত করে। সিপিআই বা কর্মসংস্থান হার সামান্য বাড়া-কমায় শেয়ারবাজার থেকে শুরু করে নানাবিধ অর্থনৈতিক সূচক বড় ধরনের ওঠানামা করতে পারে। যদি জরিপগুলো বন্ধ হয়ে যায় বা ছোট আকারে পরিচালিত হয়, বড় সংস্থাগুলোকে তাদের নিজস্ব ও সীমিত ডেটার ওপর নির্ভর করতে হবে। এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনিশ্চয়তা এবং বিশ্লেষণে সীমাবদ্ধতা দেখা দেবে।
উপসংহার
বছরের পর বছর ধরে মার্কিন সরকারের বিভিন্ন জরিপ অর্থনীতি ও মানুষের স্বাস্থ্যসহ বহুমুখী বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করে এসেছে। কিন্তু ডগের ছাঁটাই-নীতি এই প্রক্রিয়াকে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। সরকারি ডেটার যে কোনো ঘাটতি বা মানহানি অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ, নীতিনির্ধারণ ও জনকল্যাণমূলক কাজকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। কার্যকর আধুনিকায়ন ও সুপরিকল্পিত কাঠামো ছাড়া শুধু খরচ কমানোর লক্ষ্যে অতিরিক্ত ছাঁটাই সুদূরপ্রসারী ক্ষতির কারণ হতে পারে।