সারাক্ষণ রিপোর্ট
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আগামী আর্থিক বছরে অতিরিক্ত ৫৭০ বিলিয়ন টাকার কর সংগ্রহের জন্য আইএমএফ-এর নতুন নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। বোর্ডের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান যে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত কর চাপ আরোপ করা বাস্তবসম্মত নয়।
আইএমএফ মিশন ও আলোচনার প্রেক্ষাপট
- আইএমএফ-এর আগমন:
০৫ এপ্রিল, আইএমএফ মিশন বাংলাদেশে আগমন করে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা ও ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি বিতরণের আলোচনা শুরু করেছিল। - বৈঠকের আলোচনা:
বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যানসহ কর, ভ্যাট ও কাস্টমস বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্ধারিত উচ্চ কর সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন। - ভবিষ্যৎ প্রক্ষেপণ:
আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট হয়েছে, নিকট ভবিষ্যতে আইএমএফ-এর কিস্তি রিলিজে কর সংগ্রহের বাধার আশঙ্কা নেই।
উচ্চ কর সংগ্রহে নীতিগত চ্যালেঞ্জ
একজন সিনিয়র কর কর্মকর্তার মাধ্যমে জানা গেছে যে, আইএমএফ মিশন এনবিআর কর্তৃক নির্ধারিত অতিরিক্ত কর সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাকে মেনে নিতে অসম্মতি জানিয়েছে। এই বিষয়ে আলোচনা ছিল ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণের পরবর্তী কিস্তি বিতরণের সাথে জড়িত।
- কর সংগ্রহ বাড়ানোর জন্য কোন ধরনের নীতি গ্রহণ করা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
- নীতি পরিবর্তনের বিষয়ে:
এনবিআর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, এ মুহূর্তে নীতি পরিবর্তন সংক্রান্ত কোনো ঘোষণা দেওয়া সম্ভব নয়। - আইন প্রয়োগের দুর্বলতা:
বিদ্যমান কর আইন বাস্তবায়নে অসুবিধা থাকায়, আরও কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করে কর সংগ্রহ বাড়ানো যেতে পারে। - রিটার্ন প্রদান সমস্যা:
নিবন্ধিত করদাতাদের তুলনায় ভ্যাট ও আয়কর রিটার্ন প্রদানে কমতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। - রাজস্ব কৌশল ও বিভাগের পৃথকীকরণ:
মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী রাজস্ব কৌশল (MLTRS) ও কর নীতি ও প্রয়োগকারী শাখার পৃথকীকরণের পরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন বলে বোর্ড মনে করছে। - বর্তমান সংগ্রহের পরিসীমা:
বর্তমানে বোর্ড অতিরিক্ত কর আহরণের প্রায় ৫০ শতাংশ সংগ্রহ করতে সক্ষম বলে আশা প্রকাশ করছে।
কর বৃদ্ধিতে অতীত অভিজ্ঞতা ও বিনিয়োগ নীতি
- গত কারো অভিজ্ঞতা:
গত জানুয়ারিতে অতিরিক্ত ১২০ বিলিয়ন টাকার কর সংগ্রহের হঠাৎ কর বৃদ্ধিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কঠিন সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। - বর্তমান অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা:
বর্তমান অর্থবছরে বোর্ড অনুমান করছে যে মোট লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ৮০ বিলিয়ন টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। - বিনিয়োগ প্ররোচনা ও কর কমানোর চাপ:
স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য, করকর্তাদের উপরে টার্নওভার ট্যাক্সসহ কিছু কর কমানোর চাপ রয়েছে, যখন একই সময়ে আইএমএফ কর বাড়ানোর চাপ তৈরি করছে।
উপসংহার
বিশেষজ্ঞগন এই বাস্তবধর্মী অবস্থানকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।তাদের মতে, এনবিআরের সততা ও বাস্তব পরিস্থিতি মেনে নেওয়ার প্রক্রিয়া আইএমএফ-এর সাথে খোলামেলা আলোচনা শুরু করেছে। যদিও বর্তমান কর সংগ্রহের সমস্যা ঋণের পরবর্তী কিস্তি বিতরণে বড় বাধা সৃষ্টি করবে না, তবে আগামী দিনগুলিতে নীতি ও সময়সীমা নিয়ে আরও আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।