ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়
ধর্মীয় কাজ-এর সামাজিক শ্রেণিবিভাজনটিও আজতেক সমাজে লক্ষ্য করবার মত। উল্লেখিত কাজের নীচে আরকেটি স্তর আছে। এই স্তরের পুরোহিতগণ মন্দির-এর কাজ, পুজা সংক্রান্ত নানা কাজ এবং দেবদেবীর লোকাচার দেখভাল করার দায়িত্ব পালন করেন। এই মন্দির কর্মীদের সঙ্গে থাকেন দু’জন সহকর্মী যারা পুরোহিতদের যাবতীয় কাজে সাহায্য করেন।
পুরোহিতদের কাজের অধিকার এবং সীমানা আরও বিস্তৃত। অনুসন্ধান করে দেখা গেছে পুরোহিতশ্রেণী আঞ্চলিক আদিবাসীগোষ্ঠীর জীবনযাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করত। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই পুরোহিত সর্বসাধারণ মানুষের মনে ধর্মীয় আচার বিশ্বাস-এর চেতনাকে বাড়িয়ে দিয়েছিল।
এই সঙ্গে তাদের মনে ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা, মান্যতাও বাড়িয়েছিল। সমাজ ঐতিহাসিক এবং নৃতাত্ত্বিকরা মনে করেন জ্যোতির্বিদ্যা এবং গণিতচর্চা, হিসাব, সৌর মণ্ডল এবং বর্ষপঞ্জী সব কিছুর মধ্যে একটা ধর্মীয় আবেদন যুক্ত হয়েছিল। একথাও বলা হয় যে পুরোহিতগণ নৃতত্বের বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করত।
নর্তকী বা নৃত্যশিল্পীরা পৌরাণিক গল্প পরিবেশন করে এক ধরনের গণনৃত্য প্রদর্শন করত। আজতেকদের জীবনযাত্রার মধ্যে এক ধরনের শ্রেণিবিন্যাস গড়ে উঠেছিল। এর মধ্য দিয়ে লোকাচার-এর প্রকৃতির মধ্যে এক ধরনের ছন্দ গড়ে উঠেছিল।
আদতে ধর্মীয় লোকাচার, সামাজিক জীবনে-এর পালন, সবকিছুই ক্রমশ এমন একটা মানসিক আবহাওয়া তৈরি করে দিয়েছিল যার থেকে সবাই ভাবতে শুরু করেছিল যে পুরোহিতরাই স্বর্গীয় চিন্তা ও জগতের একমাত্র নিয়ন্তা।
(চলবে)
আজতেক সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-৩৩)