আসাদ মান্নান
হঠাৎ রবীন্দ্রনাথ স্বপ্নে এসে গতকাল রাতে
আমাকে জড়িয়ে বুকে জানতে চান তাঁর অতি প্রিয়
প্রাণের সোনার বাংলা কেন আজ মলিন বদনে
সন্ন্যাসী বটের মূলে লালনের একতারা হাতে
সুরহীন বসে আছে ? কী এমন কষ্টে বেদনায়
এ বাংলার রূপসীরা নিরানন্দে বৈধব্যদশায়
দুঃসহ দহন জ্বালা জনে জনে ছড়িয়ে দিয়েছে:
পাহাড় ডিঙিয়ে সূর্য কেন রৌদ্রহীন ডুবে যাচ্ছে
আসমুদ্র অন্ধকারে জেগে ওঠা রক্তের বদ্বীপে–
মুক্তির মন্দিরে কেন শৃঙ্খলিত কুহুর আকাশ ?
তবে কী গভীর কোনো কুচক্রের উর্ণা জাল ফেলে
প্রাত্যহিক চর্চা থেকে দূরে ঠেলে সরিয়ে রেখেছ
অচল মুদ্রার মতো পরিত্যক্ত লোহার সিন্ধুকে!
আমাকে সরিয়ে যদি তোমাদের জীর্ণ আঙ্গিনায়
স্বাভাবিক সুখ-শান্তি-মুক্তি আসে, তবে তা-ই হোক;
ভীতিকর মুক্তানন্দে হবে কী নতুন কোনো গান!
গাইবে না প্রাণ খুলে সকলের প্রিয় এই গান —
ও আমার দেশের মাটি! তোমার পরে ঠেকাই মাথা…
এও এক দুঃস্বপ্ন বুঝি! হঠাৎ ঘুমের মধ্যে আমি
চিৎকার করে বলি — কবিদেব, বাংলার দোহাই
আপনার অভিমান থেকে যেন অন্ধ আলো পায়,
আমার সন্তান যেন চিরদিন গাইতে পারে:
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি;
আমি যেন চিরকাল গলা ছেড়ে উচ্চ স্বরে বলি:
রবীন্দ্রনাথের শক্তি মানুষের প্রতি তাঁর প্রেম–
আমাদের ভরসা তিনি দুঃসময়ে ঝড়ে ও ঝঞ্ঝায় ।