সারাক্ষণ রিপোর্ট
স্বাস্থ্য বনাম জলবায়ু দ্বন্দ্ব
দুগ্ধশস্যের বিকল্প বেছে নেওয়ার সময় স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রভাব—উভয়ের মাঝেই সমঝোতা করতে হয়। গরুর দুধ উত্পাদনে প্রচুর মিথেন ও কার্বন ডাই অকসাইড নিঃসৃত হয়, আর এক সময়ে অনেক জলব্যয়ও ঘটে। তবে প্রচলিত প্ল্যান্ট-ভিত্তিক দুধগুলো সাধারণত জীবাশ্ম-নির্ভর দুগ্ধপণ্যের তুলনায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ও জলব্যয় কমায়; তবুও এদের অনেকেই গরুর দুধের মতো পর্যাপ্ত প্রোটিন বা অন্যান্য পুষ্টি সরবরাহ করে না ।
মটরশুঁটির দুধ: উৎপাদন ও গঠন
মটরশুঁটির দুধের মূল উপাদান হল হলুদ স্প্লিট মটরশুঁটি। প্রথমে এগুলো আটা আকারে প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং সেখানে থেকে বাণিজ্যিকভাবে প্রোটিন আলাদা করা হয়। এরপর আলাদা করা প্রোটিনকে পানি, উদ্ভিজ্জ তেল (চর্বি হিসেবে) এবং সামান্য চিনি (সাধারণত গুড়চিনির বা চিনি) মিশিয়ে গরুর দুধের মতো মিশ্রণ তৈরি করা হয়। অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন যোগ করার মাধ্যমে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ করা হয়, ফলে পানীয়ের রঙ হয় সাবেক ivory বা ক্রিম।
পরিবেশগত প্রভাব
- গরুর দুধ: এক কাপ গরুর দুধ উৎপাদনে গড়ে প্রায় ৩৩০ গ্রাম CO₂-সমতূল্য গ্যাস নির্গত হয়—যা প্রায় ০.৭৫ মাইল গ্যাসোলিন চালিত গাড়ি চালানোর সমান—and এক কাপ দুধ তৈরি করতে ৫.৫ গ্যালন জল লাগে ।
- মটরশুঁটি দুধ: একই পরিমাণ তৈরি করতে গড়ে মাত্র ৭১ গ্রাম CO₂-সমতূল্য গ্যাস নির্গত হয় এবং জল ব্যবহার প্রায় ৮৬% কম হয় ।
- মাটির স্বাস্থ্য: মটরশুঁটি ও অন্যান্য লেগিউম মাটি থেকে বায়ু থেকে নাইট্রোজেন আকর্ষণ করে জমিতে সঞ্চয় করে, ফলে সিনথেটিক নাইট্রোজেন সার ব্যবহার কমে যায় এবং মাটির উর্বরতা বাড়ে ।
পুষ্টিমান ও স্বাস্থ্য
মটরশুঁটি প্রোটিনসমৃদ্ধ হওয়ায় এর দুধ অন্য অনেক প্ল্যান্ট-ভিত্তিক দুধের তুলনায় প্রোটিন বেশি রাখে।
- গরুর দুধে এক কাপ প্রায় ৮.২ গ্রাম প্রোটিন থাকে,
- সয়া দুধে গড়ে ৬.১ গ্রাম,
- আর মটরশুঁটির দুধে প্রায় ৭.৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে ।
অতিরিক্ত ফাইবার ও লেগিউমের অন্যান্য পুষ্টিগুণও এতে থেকে যায়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে, যদি না দুধের অ্যালার্জি বা অন্যান্য কারণে বাধ্যতামূলক না হয়, সম্পূর্ণভাবে গরুর দুধের বদলে মটরশুঁটির দুধ গ্রহণ পরামর্শযোগ্য নয়, কারণ ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের অন্যান্য উৎস শিশুর বৃদ্ধির জন্য দরকার হতে পারে ।
স্বাদ, মূল্য ও বাজার গ্রহণযোগ্যতা
- স্বাদ ও টেক্সচার: কিছু স্বাদপরীক্ষক ‘chalky’ বা দানা-দানা অনুভূতি উল্লেখ করেছেন, আবার কেউ কেউ স্বাদকে ‘neutral’ বা ‘ব্ল্যান্ড’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। কফিতে মিশালে কখনো বিভাজন দেখা যায় ও গ্লাশুর তলায় স্তর তৈরি হয় বলে অভিযোগ ছিল
- ব্র্যান্ডিং: বেশিরভাগ প্যাকেজিংয়ে স্পষ্টভাবে “pea milk” লেখা না থাকা এবং “plant-based milk” হিসাবে বিক্রি হওয়ায় গ্রাহক সচেতনতা কম। “pea protein” সাবটাইটেলে উল্লেখ থাকলেও আলাদা ব্র্যান্ড লেবেল নেই ।
- মূল্য ও সহজলভ্যতা: প্ল্যান্ট-ভিত্তিক দুধগুলো সাধারণত গরুর দুধের তুলনায় দামি, আর মটরশুঁটির দুধ এখনও অনেক অঞ্চলে সীমিত পরিসরে উপলব্ধ।
উপসংহার
প্রাপ্ত তথ্য দেখায়, বয়স্ক বা প্রবীণদের জন্য দুধের বিকল্প হিসেবে মটরশুঁটির দুধ স্বাস্থ্য ও পরিবেশ—দু’ই ক্ষেত্রে সুবিধাজনক। তবে শিশুদের সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য সমতা বজায় রেখে অন্যান্য উৎস ব্যবহার করা উচিত। ভবিষ্যতে বাজারে সহজলভ্যতা বাড়লে মটরশুঁটির দুধ দুধবিকল্পের অন্যতম প্রধান নির্বাচনে পরিণত হতে পারে।