সারাক্ষণ ডেস্ক
প্রেক্ষাপট: চট্টগ্রামে আধিপত্যের দৃশ্য
চট্টগ্রামের বীর শ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম দেখিয়েছেন ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরার পারফরম্যান্স। বাংলাদেশ প্রথমে বোলিং বেছে নিয়ে স্টাম্পস পর্যন্ত অতিথিদের স্কোর দাঁড়ায় ২২৭/৯; এতে বড় অবদান তাইজুলের ৫ উইকেট ও ৬০ রানের সংগ্রহ, যা তার টেস্ট জীবনে ১৬ তম পাঁচ উইকেটের মাইলস্টোন। মাত্র ৫৫ রানে সাত উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়েকে কাবু করে রেখে বাংলাদেশ ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
তামিমের প্রশংসা: ‘বিশ্বের সবচেয়ে অবমূল্যায়নকৃত বোলার’
এই ক্ষমতা প্রদর্শনের পর সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল ফেসবুকে লেখেন, “বর্তমান সময়ে বিশ্বে সবচেয়ে অবমূল্যায়নকৃত বোলার। অন্য বর্তমান বোলারদের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাবে। তাইজুল, আবারও পাঁচ উইকেট নেওয়ার জন্য অভিনন্দন।”
তাইজুলের প্রতিক্রিয়া: অবমূল্যায়নকৃত ট্যাগ গ্রহণ
প্রেস কনফারেন্সে তামিমের এই উচ্চারণের বিষয়ে জানতে চাইলে তাইজুল ইসলাম বলেন, “হ্যাঁ, আমি নিজেও মনে করি আমি অবমূল্যায়নকৃত। আপনরাই তো এটা ভালো জানেন।” নিজের এমন স্ব-মূল্যায়নে সন্তুষ্টি তিনি প্রকাশ করেন।
ক্যারিয়ারের প্রধান মাইলস্টোন
২০১৪ সালে টেস্ট অভিষেকের পর থেকে তাইজুল ৫৩টি টেস্টে ২২৪টি উইকেটের সংগ্রহে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন, যা একই সময়ের মধ্যে যেকোনো বাংলাদেশি বোলারের উচ্চতম এবং ২০১৪-এর পর থেকে টেস্ট উইকেট সংগ্রাহকদের বিশ্ব তালিকায় তিনি অবস্থান করছেন ১৩তম স্থানে। ৬৯টি টেস্টের মধ্যে ৫৩টিতে অংশ নিয়ে স্পিনপ্রধান আবহাওয়ায় দলের সফলতা আনার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসীম।
আইসিসি র্যাঙ্কিং ও পরিসংখ্যান
সর্বশেষ আইসিসি টেস্ট বোলিং র্যাঙ্কিংয়ে তাইজুল ৬৫৬ পয়েন্ট নিয়ে ১৯ নম্বরে এবং তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রেটিং ৭০৮ পয়েন্ট। বর্তমান বোলিং গড় ৩১.৭৪, যা সম্মানজনক হলেও শীর্ষস্থানীয় স্পিনারদের দলে জায়গা করে নিতে কিছুটা পিছিয়ে রাখে।
সমালোচনায় পারফরম্যান্স: সিলেটের আঘাত
সিলেটে প্রথম টেস্টে তাইজুল মাত্র দুই উইকেট নিয়েছিলেন, যা ওই ম্যাচে জিম্বাবুয়ের উইসলি মাদেভেরের সমান—স্পিনারদের মধ্যে সর্বনিম্ন। স্পিন-সহায়ক পিচের কথা বিবেচনায় সমালোচকদের কাছে এটিই হতাশাজনক অভিজ্ঞতা হিসেবে ধরা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতামত: নিঃশব্দ জয়যাত্রা
ইএসপিএনের ক্রিকেট বিশ্লেষক মোহাম্মদ ইসম তাইজুলকে নিয়ে বলেন ও “সেই বন্ধুর মতো, যাকে আপনি বিশ্বাস করতে পারেন যখন কেউ নেই।” বাহিরের দৃষ্টিতে হয়তো ফ্ল্যাশি অফ-ফিল্ড সাপোর্ট বা সামাজিক গণমাধ্যমের বড় অনুসারী নেই, তবে তাইজুলের ধারাবাহিক উইকেট সংগ্রহ বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছে।
বিশ্লেষণ: অবমূল্যায়নকৃত নাকি যথাযথ স্বীকৃত?
তামিমের প্রশংসা তাইজুলের গুরুত্বের প্রতি আলোকপাত করলেও, তাঁর ধারাবাহিক দলবাছাই ও ঘরোয়া টেস্টে পরিসংখ্যানে আধিপত্য বোঝায় যে বাংলাদেশে তাকে কখনও উপেক্ষা করা হয়নি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শীর্ষ ২০-র ওই অবস্থানও প্রমাণ করে যে তাঁর পারফরম্যান্স স্বীকৃত—তবু বিশ্বক্রীড়া ভক্তদের মধ্যে হয়তো সম্পূর্ণ মূল্যায়ন এখনও গড়ে ওঠেনি।
ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
সিরিজের পরবর্তী দিনগুলোতে তাইজুলের এই জোরালো পারফরম্যান্স অব্যাহত রাখার সক্ষমতা নির্ধারণ করবে তিনি বিশ্বসেরা স্পিনারদের শীর্ষভাগে স্থিতিশীল হতে পারবেন কিনা, নতুবা ‘অবমূল্যায়নকৃত’ ট্যাগ এক আবেগের বিষয়ই থেকে যাবে। আপাতত, তার ১৬তম পাঁচ উইকেট ব্যবস্থা অধ্যবসায় ও প্রভাবের সাক্ষ্য বহন করে যাচ্ছে।
Leave a Reply