ডেভিড বি. আওয়ারবাখ
ক্রাউডস্ট্রাইক অ্যান্টিভাইরাসের একটি হালনাগাদ বিশ্বজুড়ে এক বিলিয়নেরও বেশি উইন্ডোজ কম্পিউটারকে সম্পূর্ণ অচল করে দিয়েছে, ফলে হাসপাতাল, বিমানবন্দর, নগর পরিষেবা, কারাগার থেকে শুরু করে সাবওয়ে পর্যন্ত অগণিত গুরুত্বপূর্ণ সেবা বন্ধ হয়ে গেছে।
শুক্রবার সকালে কোম্পানির সিইও (সম্ভবত শিগগিরই প্রাক্তন) জর্জ কার্টজ যখন বলেন, “এটি কোনো নিরাপত্তা লঙ্ঘন বা সাইবার আক্রমণ নয়,” তখন তা মোটেও আশ্বস্ত করার মতো ছিল না। কারণ এর কয়েক ঘণ্টা আগেই ওই হালনাগাদ লক্ষ লক্ষ ব্যবস্থায় নীল ‘ব্লু স্ক্রিন অব ডেথ’ ঝুলিয়ে দিয়েছে—কোনো দূরবর্তী সমাধান প্রয়োগের সুযোগ না রেখে প্রত্যেকটি কম্পিউটারে পৃথকভাবে হস্তক্ষেপকে বাধ্যতামূলক করে তুলেছে।
কার্টজ দাবি করেছেন, “সমাধান দেওয়া হয়েছে,” কিন্তু অচল হয়ে পড়া কম্পিউটারগুলো সেই সমাধান গ্রহণ করার সামর্থ্যই হারিয়ে ফেলেছে। ক্ষয়ক্ষতি যে দেখাচ্ছে তার চেয়ে বহু গুণ বেশি হবে বলেই ধারণা।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেলেও কীভাবে এমনটা ঘটল কিংবা কোন পর্যায়ে তদারকি ব্যর্থ হয়েছে—এ নিয়ে আজও কোনো ঐকমত্য নেই, এমনকি বাস্তবসম্মত সমাধান নিয়েও নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অ্যামাজনের ক্লাউড পরিকাঠামোর ধস, মৌলিক নেটওয়ার্ক ভুল কনফিগারেশন কিংবা হার্ডওয়্যার ত্রুটির কারণে ব্যাপক ইন্টারনেট বিভ্রাট দেখা গেলেও, ক্রাউডস্ট্রাইকের এ বিপর্যয় আরও ভয়াবহ। কারণ এটি কেবল ইন্টারনেটের মেরুদণ্ড নয়, প্রত্যেক প্রান্তিক কম্পিউটারকে আঘাত করেছে—এককেন্দ্রিক নয়, যুক্ত সবকিছুকে একসঙ্গে নামিয়ে দিয়েছে।
এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। আইনপ্রণেতা ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা অবশ্যই এ ত্রুটির খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করবেন, কিন্তু অধিকতর কঠিন বাস্তবতা—এ ধরনের বিপর্যয়ের অপরিহার্যতা—নিয়ে আলোচনা হবে কম। কারণ দিনে শেষে এমন ভুল মাত্র একবার ঘটলেই বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
আমাদের অতিনিয়ন্ত্রিত, জালের মতো সংযুক্ত দুনিয়ায় বিপর্যয়ের সম্ভাবনা এত বেশি যে সবকিছু আগেভাগে ঠেকানো অসম্ভব। এর অনিবার্যতাকে জোগান দেয় দুটি কারণ। প্রথমত, সমাজকে সংগঠিত রাখা বিপুল কম্পিউটেশনাল নেটওয়ার্কের ক্রমবর্ধমান ঘনবিন্যাস—একটি নতুন অংশ যোগ করলেই তা অন্য সব অংশের সঙ্গেও জুড়ে যায়। দ্বিতীয়ত, জটিলতা কমাতে এসব বিচ্ছিন্ন অংশকে কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টাই উল্টো তাদের নিবিড়ভাবে বাঁধে। বিশ বছর আগের ইন্টারনেট ছিল অসংখ্য অসম সংগঠনের মিশ্রণ; আজ অ্যামাজন, গুগল ও মাইক্রোসফটের মতো জায়ান্টরা মানদণ্ড গড়ে তুলে তাদের আরও নিবিড় করে তুলেছে।
শুক্রবারের বিপর্যয় “শুধু” উইন্ডোজ কম্পিউটারগুলোকে আঘাত করেছে, কিন্তু এগুলোই তো বিশ্বের বেশির ভাগ ডেস্কটপ ও সার্ভার। তাই এটি নিছক সান্ত্বনা হতে পারে না। আসন্ন সপ্তাহগুলোতে দোষারোপের পালা চলবে, কেউ শাস্তি পাবে বা জরিমানাও হতে পারে, তবু কারও মনে নিরাপত্তা জন্মাবে না যে এমনটা আর হবে না—কারণ আবারও হবে।
আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে: এমন সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক পরিবর্তনগুলোকে আরও ধীর ও সতর্ক গতিতে চলতে হবে আমাদের ঘন, আন্তঃসংযুক্ত নেটওয়ার্কের ভেতর দিয়ে। যতই নিরাপদ হোক, কোনো হালনাগাদ কখনও বিশ্বব্যাপী একযোগে চালু করা উচিত নয়। সামনে ক্রাউডস্ট্রাইকের মতো আরেক বিপর্যয় আসছেই; কিন্তু প্রক্রিয়া ধীর করলে আমরা সামান্য অদক্ষতার খরচে অমূল্য কয়েক ঘণ্টা সময় পাব, যার সদ্ব্যবহারে ক্ষয়ক্ষতি সহস্রগুণ কমানো সম্ভব।
ডেভিড বি. আওয়ারবাখ সফটওয়্যার প্রকৌশলী ও “মেগানেটস: হাউ ডিজিটাল ফোর্সেস বিয়ন্ড আওয়ার কন্ট্রোল কমান্ডিয়ার আওয়ার ডেইলি লাইভস অ্যান্ড ইননার রিয়্যালিটিজ” বইয়ের লেখক।