সারাক্ষণ রিপোর্ট
বাংলাদেশ সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সব শর্ত মেনে ঋণ নেবে না। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাজেট-সহায়তা না পেলেও দেশ নিজস্ব সামর্থ্যে বাজেট প্রণয়ন করবে।
আইএমএফ কর্মসূচির বর্তমান অবস্থা
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে অনুমোদিত ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের আইএমএফ কর্মসূচি থেকে এখন পর্যন্ত তিন কিস্তিতে প্রায় ২.৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি (মোট ১.৯ বিলিয়ন ডলার) শর্ত নিয়ে মতবিরোধের কারণে ঝুলে আছে।
কোনো শর্তগুলো নিয়ে দ্বন্দ্ব
- বিনিময় হার: বর্তমানে ‘ক্রলিং-পেগ’ পদ্ধতিতে ডলার ১২০-১২২ টাকার মধ্যে লেনদেন হচ্ছে। আইএমএফ এই সীমা উঠিয়ে মুক্ত ভাসমান হার চালু করতে বলেছে, যার ঝুঁকি সরকার নিতে প্রস্তুত নয়।
- রাজস্ব বাড়ানো: মূসক, আয়কর ও শুল্ক কাঠামো সংস্কারের তাগিদ রয়েছে।
- বৈদেশিক মুদ্রাবাজার উন্মুক্ত করা: বন্ধ উঠিয়ে দিলে বাজার অস্থির হয়ে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে—সরকারের যুক্তি এমনই।
রিজার্ভ ও সামষ্টিক স্থিতি
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে মোট বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ২৬.৭৯ বিলিয়ন ডলার; আইএমএফ-এর পদ্ধতিতে নিট রিজার্ভ ২১.৪৩ বিলিয়ন ডলার। মার্চ-এপ্রিল জুড়ে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে রিজার্ভ কিছুটা বাড়ে, যা সরকার স্থিতিশীলতার প্রমাণ হিসেবে দেখাচ্ছে।
বিকল্প অর্থায়ন ও প্রকল্প-সহায়তা
সরকার আশা করছে—বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং এআইআইবি’র প্রকল্প ঋণের মাধ্যমে প্রবাহ অব্যাহত থাকবে। ইতিমধ্যে এআইআইবি থেকে ১ বিলিয়ন ডলার এসেছে।
ঋণ-ঝুঁকি এড়াতে কৌশল
অর্থ উপদেষ্টা উদাহরণ দিয়েছেন—পাকিস্তান ৭ বিলিয়ন ও আর্জেন্টিনা ২০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে ঋণ-ফাঁদে পড়েছে; বাংলাদেশ সে পথে হাঁটতে চায় না। তিনি সতর্ক করেছেন, কঠোর শর্তে মাত্র ৩ বিলিয়ন ডলার নিলে পরিশোধে ৫ বিলিয়নের সমপরিমাণ চাপ তৈরি হতে পারে।
রাজনৈতিক পটভূমি
২০২৪-এর আগস্টে গণ-আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে কেয়ারটেকার সরকার দায়িত্ব নেয়। নতুন সরকার আইএমএফ-সহ সব আন্তর্জাতিক অংশীদারকে আশ্বস্ত করে যে, কাঠামোগত সংস্কার ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে।
সামনে কী
- ৫ মে আইএমএফ বোর্ড চতুর্থ-পঞ্চম কিস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
- সরকার শর্ত-সন্তুষ্টি ও ঋণ-ঝুঁকি বিবেচনা করে ‘কঠিন সিদ্ধান্ত’ নিতে প্রস্তুত।
- রিজার্ভ ২৬-২৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরে স্থিতিশীল থাকলে বাজেট-সহায়তা ছাড়াই ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পেশের চিন্তা রয়েছে।