সারাক্ষণ রিপোর্ট
অব্যাহত সংঘর্ষ ও বেসামরিক হতাহতের শঙ্কা
মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধ, সাম্প্রতিক ভূমিকম্প ও সেনাবাহিনীর অব্যাহত বিমান হামলায় দেশটি গভীর মানবিক সংকটে পড়েছে। যদিও সেনা প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করেছিলেন, বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। ভূমিকম্প-পরবর্তী ২৫ দিনে ২৭৮টি বিমান হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা প্রাক-ভূমিকম্প সময়ের তুলনায় খুব একটা কম নয়। স্কুল, হাসপাতাল, ঘরবাড়ি লক্ষ্য করে চালানো এসব হামলায় শিশুসহ প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২০০ জন।
মালয়েশিয়ার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও মানবিক সহায়তা
আসিয়ান চেয়ার হিসেবে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম গত ২০ এপ্রিল মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে বৈঠকে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছিলেন। এরপর মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলে একটি অস্থায়ী মালয়েশীয় সামরিক হাসপাতাল চালু করা হয়। তবে অস্ত্রবিরতির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ সশস্ত্র সংঘর্ষ থামছে না। মালয়েশিয়ান সেনাবাহিনীর চিকিৎসা কার্যক্রম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এখনো অব্যাহত
মিয়ানমারের ভেতরে চলমান সংঘাত বিশেষ করে রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি এবং সেনাবাহিনীর মধ্যকার সংঘর্ষ নতুন করে বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, নতুন করে শতাধিক রোহিঙ্গা বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ সরকার এই অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধে কঠোর অবস্থান নিলেও মিয়ানমারের অবনত রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি আশঙ্কা আরও বাড়াচ্ছে।
মানবিক করিডোরের দাবি পুনরুজ্জীবিত
মিয়ানমারের সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ জনগণ। বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক মানবাধিকার ও শরণার্থী সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই মিয়ানমার সীমান্তে একটি আন্তর্জাতিকভাবে নিরীক্ষিত মানবিক করিডোর চালুর দাবি জানিয়ে আসছে, যা ত্রাণ সহায়তা ও নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে পারে।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্প-আক্রান্ত অঞ্চলে ৬.৩ মিলিয়ন মানুষ ত্রাণ সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছে, তবে ২৭৫ মিলিয়ন ডলারের সাহায্যের আহ্বানে সাড়া মিলেছে মাত্র ৩৩.৮ মিলিয়ন ডলার। ভূমিকম্পের আগেই প্রায় ১৮.৬ মিলিয়ন মানুষ মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল।
সীমান্তে আরাকান আর্মির প্রভাব
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াইয়ে নতুন করে শরণার্থী স্রোত শুরু হয়েছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে গোলাগুলির শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সীমান্তে বিজিবি অবস্থান জোরদার করলেও সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। স্থানীয়রা বলছেন, “মিয়ানমার সীমান্তে প্রতিদিন গোলার শব্দ শোনা যাচ্ছে, আমরা ঘর ছেড়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিচ্ছি।”
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের দাবি
বিশ্লেষকরা বলছেন, একতরফা অস্ত্রবিরতির কোনো কার্যকারিতা নেই যদি তা নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের আওতাভুক্ত না হয়। সাবেক থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাসিত পিরোম্যা বলেন, “যদি সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ না থাকে, তবে এসব অস্ত্রবিরতি বাস্তবে কোনো প্রভাব ফেলে না।”